জীবন দর্শন, সমাজ ও শাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে কিছু কথা!

মিঠুন চাকমা
Published : 3 May 2015, 09:52 AM
Updated : 3 May 2015, 09:52 AM

জীবন দর্শনের পাঁচালী-০১

মুখ্য এই জীবনটাই! জীবনটাই চলমান বা চলমানতাই জীবন! সুতরাং সময়ও চলমান! বাস্তবতাও চলমান! বস্তু ও বাস্তবতাও চলমান, পরিবর্তমান, ঘটমান! কিন্তু জীবেনর পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রক্রিয়াটাই মুখ্য যার উপর সবকিছু নির্ভর করে! এই্ প্রক্রিয়াকে আমরা পদ্ধতি, পন্থা, পাথেয়, কৌশল, পরিকল্পনা ইত্যাদি যা-ই বলি না কেন।
কিন্তু সেই 'প্রক্রিয়া' গঠনমূলক না ধ্বংসাত্মক না কি যান্ত্রিক না কি ভাবমূলক আত্মকেন্দ্রিক অথবা বস্তু বাস্তবতার সাথে সম্পর্কযুক্ত বা সম্পর্কহীন বা যথাযথ যুগোপগোগী তার উপরই এই জীবনের গাঠনিকতা দাঁড়িয়ে। জীবনের বাস্তবতাই বলে দেয় বাস্তবতার সাথে বস্তুর প্রতিঘাতে বস্তুতই তা ন্যায্য সঠিক অথবা বেঠিক।

তারপরও মুখ্য এই জীবনটাই! কারণ জীবন চলমান! কিন্তু কে-ই বা প্রক্রিয়া নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে!? কারণ তা যে বাস্তবিক! বাস্তবতাকে তো সবাইকেই স্বীকারে বা আমলে নিতে হয়!

বাস্তবতায় তা ব্যর্থ যদি হয় তবে তা তো তা-ই। বা যদি সফলতা ভর করে তবে তাতে কার-ই বাধ সাধার সাধ জাগে!?

জীবন দর্শনের পাঁচালী-০২
সুপ্রাচীন আমলের কোনো এক সময়ে চীন দেশের লাওৎসু বা লাওৎসে, যিনি জ্ঞানী ছিলেন, ছিলেন তাও তে চিঙ নামক এক গ্রন্থের লেখক হিসেবে পরিচিতিপ্রাপ্ত, তিনি নেতৃত্বদান বিষয়ে বলেছিলেন, নেতৃত্ব দিতে হলে নেতৃত্ব না দেয়াটাই হলো নেতৃত্বের সর্বশ্রেষ্ঠ লক্ষণ। মানে তিনি বোধে আনতে চেয়েছেন যে, নেতাগিরি যেন না করা হয়! হম্বিতম্বি দম্ভ যেন না প্রকাশ পায় নেতার মাঝে। অথবা অহংকার যেন খোলা দরজা দিয়ে এসে করাঘাত না করে। তিনি বলতে চেয়েছিলেন দন্ডশক্তি বা শক্তিদন্ড ক্ষমতার উপর নির্ভর না করতে। এত শর্ত দিয়ে তবে কিভাবে শাসন দন্ড ঘুরবে!?
লাওৎসে বলছেন, শাসনকারী তার শাসিতদের বস্তুগত অভাব মিটিয়ে দেন, এবং হৃদয়কে করে দেন হালকা। শাসিত জনতা আস্থা খুঁজে পায়, তারা বলীয়ান হয়ে ওঠে। তারা তৃপ্তি-সন্তুষ্টিতে বাস করতে থাকে। ধূর্ত প্রবঞ্চকেরা সাহস খুঁজে পায় না ধুর্তামি করার।

যখন তার কর্তৃত্বই বোধগম্য হয় না জনতার মাঝে, তখন কিছুই শাসনের বাইরে না থেকে যায় না।
জনতা মনে করতে থাকে তারাই বুঝি শাসন করছে নিজেদের। তারা শাসককে খুঁজে পায় না, খুঁজে পায় নিজেকে।

শাসনের পদ্ধতি!

লুন য়্যূ কনফূসিয়াসের কথোপকথন পুস্তকে কনফুসিয়াস লিখছেন, শাসন কাজে জনগণের সহায়তা কীভাবে পেতে হয় তা নিয়ে। এ বিষয়ে চীনের আই নামীয় কোনো এক ডিউকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলছেন, ভালো সৎ করিৎকর্মাদের সামনে আনো, আর যারা ধাপ্পাবাজ তাদের ছুঁড়ে মারো, এবং এতেই জনতা শাসন কাজে সহায়তা করবে,, তারা আস্থা অর্জন করবে। আর যদি তা না করে ধাপ্পাবাজ-সুবিধাভোগীদের সামনে আনো আর ভালো সৎ করিৎকর্মাদের ফেলে রাখো তবে কী উদ্দেশ্যে জনতা শাসনের পালে হাওয়া দোলাবে!?

মাথার উপর যারা আছেন তারা যদি ভব্যতা বিনয় ভদ্রতা মেনে চলেন তবে জনসাধারণের সম্মতি সহজেই পাওয়া যায়্।

লা্‌ওৎসে বলছেন, হাঁটার সময় মেঝে বা তলার দিকে চোখ না রাখলে হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যাতে পতন ডেকে আনা বিচিত্র নয়।

ছোটোখাটো ভুল তা না শোধরাতে পারলে বা ত্যাগ করতে না পারলে তবে বিরুদ্ধতা বাড়তে থাকবে, প্রতিকূলতা শত্রুতার বাড়বাড়ন্ত হবে। আগে থেকে প্রস্তুতি না নিলে কিভাবে বাধা ডিঙাতে হবে তার পরিকল্পনা না নিলে দুর্ভাগ্য শরীক হতেও পারে।

কনফুসিয়াস বলে দিচ্ছেন, সবথেকে বড় কথা হলো আমি জানি বা আমি যে জানি না তা জানতে পারাটাই জ্ঞানীর লক্ষণ। জানি না যে তা যদি না জানি তবে তাতেই অজ্ঞতা ও পতনের মূল নিহিত, এ যেন জ্ঞানকে বহন করা হয় গাধার পিঠে!

কর্মকে শ্রদ্ধা করো। নিষ্ঠাবান হও। মানুষকে ভালবাসো। মিতব্যয়ী হও। সময়জ্ঞান বুঝে কর্ম বন্টন করে দিও।

গুরুদেব কনফুসিয়াস বলছেন, ভৌত-ভূত-দেবাদিদেব-ভৌতিক কান্ড নিয়ে তিনি কথা বা আলোচনা করেননি। কাহিনী যা বিচিত্র শক্তিমত্তা বিষয়ে রচিত সে বিষয়ে তিনি কথা বলেননি বা বলেন না। ইন্দ্রিয়াতীত জীবসকল নিয়েও আলোচনা করেননি তিনি। তিনি প্রতিরোধ-লড়াই বিপ্লব নিয়ে কথা বলেননি।

তারপরও এ সকল কথা আর কারো কাছে বিপ্লবের বার্তা নিয়ে না আসুক সে বিষয় নিয়ে তো তিনি দুশ্চিন্তা করেননি।