হয়তো বুঝতে পারিনি

মিজানুর রহমান
Published : 29 March 2015, 07:47 PM
Updated : 29 March 2015, 07:47 PM

চেহারা নিয়ে মন্তব্য করায় কি-বোর্ড এ হাত রাখা ছেলেটা ১৯ ইঞ্চি মনিটর থেকে চোখ তুলে উনার দিকে তাকালো….
ব্যাপার কি, আজকাল ছেলে খুঁজতে লোকেরা অফিস পর্যন্ত চলে আসে নাকি! সে হিসাবে উনাকে তো ঘটক বলে মনে হয় না। বগলে নব্বই দশকের ছাতা, তুতানি'র নিচে মুষ্টি দাড়ি, হাতে পানের বাটা, মুখ ভর্তি সুপারী ইত্যাদি দ্বারা ঘটকদের চিহ্নিত করা হলেও উনার বগলে কেবল একটি স্ট্যাচার দেখলাম।

স্ট্যাচার এর অগ্রভাগ থেকে পাদদেশে চোখ রাখতেই আমার কপালের প্রতিটি কোষ খাজ হতে লাগলো, সারপ্রাইজড্ চেহারা'র এক্সপ্রেশন যেমন হয় আর কি! সময় নষ্ট না করে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম "আংকেল কোন সমস্যা?"

জবাবে তিনি বললেন "হাতের কাজটা সেরে ফেলো, একটু জরুরী আলাপ আছে।" ভদ্র ছেলেদের মত মৃদু হেসে বললাম ঠিক আছে আংকেল। মিনিক তিনেক অতিবাহিত হতে'ই নিজের ভেতর কিউরিসিটি বেড়ে যাওয়ায় বলতে বাধ্য হলাম আংকেল আমার কাজ শেষ (মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে)।তিনি আমার বাম পাশের চেয়ারে এসে বসলেন।

-এবার বলুন জরুরী আলাপ টা কি?

-তেমন কিছু না আবার অনেক কিছু।

-অভয়ে বলতে পারেন।

-আপনাদের এখানে মেয়েদের কাজ করার কোন চেয়ার ফাঁকা আছে নাকি।

-না তো (কপাল খুঁচকিয়ে)

-বাবা, বন্যার বছরে (২০০৪ সালে) মর্মান্তিক সড়ক দুঘর্টনায় আমার একটি পা হারাই, আমি পেশায় ছিলাম একজন ড্রাইভার। এখন পরিবারে উপার্জনক্ষম কোন ব্যক্তি নেই। পরিবারের ভরন-পোষণ কোনভাবে চলতেছে না। সিদ্ধান্ত নিয়েছি বড় মেয়েটাকে দিয়ে চাকুরী করাবো। এ যোগে চাকুরী পাওয়া আর আকাশের চাঁদ পাওয়া সমান কথা।

-আংকেল আপনার জন্য একটা উপকার করতে পারি। কু*** ইউনিয়নের তথ্য ও সেবা কেন্দ্রে মহিলার পোস্টটি এখনও খালি। চেয়ারম্যান সাহেবের একান্ত ব্যক্তি দ্বারা রিকুয়েস্ট করলে হয়তো কিছু একটা হতে পারে।

কয়েক সেকেন্ড স্তব্দ থেকে দাড়ি বেয়ে গড়িয়ে পড়া জল মুছে তিনি চলেন গেলেন। সে পড়ন্ত জল দুঃখের না ক্ষনিক আনন্দের বুঝিনি… হয়তো বুঝবো না।