আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল আসলে কী?

কালবৈশাখী ঝড়
Published : 29 Nov 2015, 05:06 PM
Updated : 29 Nov 2015, 05:06 PM

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক মান অনুসরন করা হচ্ছে না বলছেন অনেক আন্তর্জাতিক মানবধিকার সংস্থা, জাতিসংঘও একটি বিবৃতি দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক মান জিনিসটা কী? জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এই প্রশ্নের জবাবে বলেন –

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত হবে না বলে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে সতর্ক করছি। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরাও ফাঁসি বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ নীতিগত ভাবেই শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড বিরোধী অবস্থান। মূলত জাতিসংঘের এটাই "আন্তর্জাতিক মান"। কিছুদিন আগে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়েও সংস্থাটির মৃত্যুদণ্ড বিরোধী অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক। যে কোন অপরাধের দণ্ড হিসাবে এটি রহিত করার আহ্বানও জানান তিনি। এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশানালও ক্যাপিট্যাল পানিশমেন্ট হিসেবে মৃত্যুদন্ডের ঘোরতর বিরোধী। এমনিষ্টি ইন্টারন্যাশানাল গঠিত হয়েছিল এই মৃত্যুদন্ড বিরোধী অবস্থান কে কেন্দ্র করেই। যে কারনে ইউরোপে কানাডায়, অষ্টেলিয়ায় ক্যাপিট্যাল পানিশমেন্ট হিসেবে মৃত্যুদন্ড নেই। মূলত এমনিষ্টি ইন্টারন্যাশানালের মৃত্যুদন্ড বিরোধীতাই কথিত "আন্তর্জাতিক মান"।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বিষয়ক এক বিবৃতিতে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলে, যে কোন পরিস্থিতির অধীনে সব ক্ষেত্রেই নিঃশর্তভাবে অ্যামনেস্টি মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে। মৃত্যুদণ্ড বিলোপের জন্য ডাক দেয়ার মানে এই নয় যে অপরাধের শাস্তি হবে না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িতদের অবশ্যই ন্যায্য বিচারের মধ্যে দিয়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং তা মৃত্যুদণ্ডের আশ্রয় ছাড়াই করতে হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মান খুজতে গেলে দেশটির যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ক বিশেষ দুত স্টিফেন জে র‌্যাপ ২০১০ থেকে মোট ৫ বার বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বিচার কাজ পরিদর্শন করেন। এখানেও সেই স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মানের প্রশ্ন। প্রথম দিকে তীব্র সমালোচনা থাকলেও ২০১৩ মাঝামাঝি তিনি বলেন -"মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ সঠিকভাবেই এগোচ্ছে" রায়ে উভয় পক্ষের আপিল সুযোগ থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। দেশের পত্রিকাগুলোতে তা ফলাও করে প্রকাশ করে। বিচারকাজ সঠিকভাবেই এগোচ্ছে: স্টিফেন জে র‌্যাপ – প্রথম আলো ২০১৩]

কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর – মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেন,বাংলাদেশে চলমান যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিষয়ে বাংলাদেশকে কিছু সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে। 'আমরা কীভাবে এই পুরো প্রক্রিয়াটাকে দেখি তা আমরা আগের বিবৃতিতেই বলেছি। এখন ওই বিবৃতির ব্যাপারে আমার বেশি কিছু বলার নেই। যারা ১৯৭১ সালে নৃশংসতা চালিয়েছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করাকে অবশ্যই আমরা সমর্থন করি। আমরা বুঝি যে, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।'

মেরি হার্ফ আরো বলেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে এই বিচার অবশ্যই সুষ্ঠু-স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হতে হবে এবং বাংলাদেশও তাতে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা এই প্রক্রিয়ার মধ্যে অগ্রগতি লক্ষ করেছি, আমি মনে করি, একটা ভালো ব্যাপার হয়েছে।'

কিন্তু ২০১৫তে চাকুরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্টিফেন জে র‌্যাপ কথা ঘুরানো শুরু করেন, বলেন বিচার ত্রুটিপুর্ন, আরো সচ্ছ হচ্ছে না কেন? ত্রুটিপুর্ন কী জিনিস? এই যে স্বাক্ষী গুম, বিদেশী স্বাক্ষী অনুমতি নেই, বিদেশী উকিল অনুমতি নেই .. ইত্যাদি। আর কোন ত্রুটি? না। এগুলোই তো অনেক ত্রুটি।

আমার বক্তব্য হচ্ছে বিদেশী আইনজ্ঞ এনে বিচারের নজির কি এদেশে আগে কখনো হয়েছে? বিদেশী স্বাক্ষী (পাকিস্তানি) আনতে হবে কেন? বিদেশী স্বাক্ষী এনে বিচারের নজির কি এদেশে আগে কখনো হয়েছে? পাকিস্তান এই যুদ্ধাপরাধ বিচারে একটি পক্ষ। পাকিস্তানি স্বাক্ষীরা জাল সার্টিফিকেট হাতে কার সাফাই গাইবে?

বাংলাদেশ সরকারের তরফে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে একটি শক্ত প্রতিবাদ নোট পাঠিয়েছে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সেখানে বলা হয় – মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুষ্পষ্ট অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের কোন গোপন দ্রুতবিচার হয়নি।
উম্মুক্ত আদালতে তাদেরকে পর্যাপ্ত আইন সুবিধা, আত্নপক্ষসমর্থনের সর্বাত্বক সুযোগ, পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অনেক দেশে না থাকলেও বাংলাদেশের আইনে ক্যাপিট্যাল পানিশমেন্ট মৃত্যুদন্ড। দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক দলের ওই দু'জনের সংস্লিষ্টতা থাকলেও মোটেও আসামিদের রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা করা হয়নি। আইন সবার জন্য সমান।