দুটি ঘটনা। প্রবাসি হিসেবে ঘটনা দুটোই লজ্জার, মর্যাদা হানিকর আর অর্জিত গৌরব ধুলোয় মেশানোর জন্য যথেষ্ঠ। অনেকে দ্বিমত হবেন- শতকরা হিসেবে অতি নগন্য, বলতে গেলে কিছুইনা। কিন্তু এসব উদাহরণ হয়েই থাকবে শেষ পর্যন্ত। ঘটনা দু'টি নিয়ে বিডিনিউজ২৪ এ রিপোর্টও হয়েছে।
একঃ
ভদ্রলোক সাংবাদিক নাম মোঃ সাইদ। শুধু সাংবাদিক না, নিজেকে পরিচয় দিতেন সম্পাদক হিসেবে। প্রথমে সাপ্তাহিক আজকাল, এবং পরে সাপ্তাহিক প্রবাস। গত বিশবছর যাবৎ নিউইয়র্কের কুইন্স এ আছেন। কমিউনিটিতে সবাই সমীহ করতেন সাংবাদিক হিসেবে। এভাবেই চলছিলো। নিজের পত্রিকায় অনেক লোককে কাজ দিয়েছেন। জানা যায় বাংলাদেশ থেকে নতুন আগত অনেক সাংবাদিক তার পত্রিকায় কাজ করে অভিজ্ঞতার সনদ নিয়েছেন, যাতে পরবর্তিতে সাংবাদিকের 'ট্যাগ' পেতে অসুবিধা না হয়। ঘটনা ফাঁস হলো যখন আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) তার প্রতিষ্ঠান আর বাসা রেইড দিয়ে তাকে গ্রেফতার করলো। অভিযোগ 'বেআইনি অনুপ্রবেশ' আর অবৈধ অভিবাসন'। এখন নিউজার্সির ডিটেনশন সেন্টারে। চিন্তা করুন,নিজে অবৈধ হয়ে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কীভাবে একে একে লোকদের কাজ দিচ্ছে। বিভিন্ন এসাইনমেন্টে পাঠাচ্ছে।
দুইঃ
শেখ মাহতাব, ইনিও নিউইয়র্কের কুইন্সের বাসিন্দা। আগেরজনের মতন এ ভদ্রলোক অবৈধ নন। ইনি বৈধই। হয়তো ডিভি কিংবা ওপি প্রোগ্রামে ইমিগ্রান্ট হিসেবে এসেছেন এদেশে। ব্যবসা বাণিজ্য বৈধভাবেই করছিলেন। নিজের একটা গ্রোসারী শপ ছিলো। এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারীদের ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হয়। অনেকে নিজে নিজে করেন, আবার অনেকে আয়কর উকিল দিয়ে করিয়ে নেন। আবার অনেক লাইসেন্সড প্রতিষ্ঠান আছে যারা নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে। এটা ধনী গরীব, কর্মজীবি- বেকার নির্বিশেষে সবার জন্য বাধ্যতামূলক। কেউ না করলে সে হবে ফেলন। ফেডারেল ক্রাইমের আওতায় হুলিয়া জারি হবে। আর এই ট্যাক্স রিটার্ন হলো- সারা বছর যে ট্যাক্স দেয়া হয় তা যদি হিসেবের বেশি দেয়া হয়- সেই অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেবে ইন্টারনাল রেভিন্যু সার্ভিস (আইআরএস)। আর সে জন্য ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করে ক্লেইম করতে হবে।
যা হোক- আসি শেখ মাহতাবের প্রসঙ্গে। শেখ মাহতাব তার দোকানের যত কাস্টমার আসতেন এবং যারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে দাম পরিশোধ করতেন-তাদের ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, জন্মতারিখ, সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার, ইত্যাদি) সংগ্রহ করতেন। আর তা ব্যবহার করতেন তাদের অজান্তে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে। ফেডারেল সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা করে এভাবে প্রায় নব্বই লাখ টাকা হাতিয়ে সটকে পড়েছেন। এখন এফবিআই তার নামে 'ধরিয়ে দাও' পোস্টার সেঁটেছে।হাজার ডলার পুরস্কার। বোঝা যায়, এসব টাকা, প্রবাসি বাংলাদেশিদেরই টাকা, তার কম্যুনিটির লোকজনের টাকা। কারণ তার দোকানের বেশিরভাগ কাস্টমার ছিলো বাংলাদেশি।
এই ছিঁচকে কাজগুলো আগে ভারতীয়রা এবং পাকিস্তানিরা করতো। এখনো নিয়ম করে হিস্পানিকরা করে। বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে আমাদের প্রোফাইলটা এখনো বেশ ক্লিনই বলা চলে। হার্ডওয়ার্কার, ডিলিজেন্ট,পার্সিটেন্ট, অনেস্ট এসব কমপ্লিমেন্ট আমাদের সম্বল। কিন্তু এখন ক্রেডিটকার্ড জালিয়াতি আর আইডেন্টিটি থেপ্ট এর খাতায় আমাদের নাম উঠলো। ফিলিং এশেইমড।