এখন তুমি আর একা না…

স্বশিক্ষিত ভদ্রলোক
Published : 5 March 2016, 02:57 PM
Updated : 5 March 2016, 02:57 PM

মনের অসুখগুলোর মধ্যে Loneliness "একাকীত্বতা" অন্যতম ভয়ংকর একটা অসুখ! এই অসুখটা একবার যার ভেতরে বাসা বাঁধে, এটা তাঁর অস্তিত্বের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং এটাই তাঁর একমাত্র সঙ্গী হয়ে যায়। মানুষটা চাইলেও এর থেকে বেরোতে পারেনা।

তাঁর চারপাশে যথেষ্ট শুভানুধ্যায়ী থাকা সত্ত্বেও কাউকেই তাঁর আপন মনে হয়না। বর্তমানটা অনেক সমৃদ্ধ হলেও সে অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতেই বেশি ভালোবাসে। জনসম্মুখে সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলে, কিন্তু ব্যাস্ততা একটু স্তিমিত হয়ে আসলেই হঠাৎ হঠাৎ আনমনা হয়ে যায়। ভালো অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও ভেতরে ভেতরে একধরনের হীনমন্যতায় ভোগে। সবসময় একটা অহেতুক দ্বিধায় জড়িয়ে থাকে। কোন একজন ব্যক্তি কিংবা জিনিসের প্রতি ভালোলাগা শুরু হবার আগেই আকর্ষণ ফুরিয়ে যায়। সবথেকে বড় ব্যাপার, যা তাঁকে এই দুষ্টচক্র থেকে বেরোতে সর্বাত্মক বাধা দেয়, সে সবার সাথেই ফরমাল বিহেইভ করে, কারো সাথেই লিট্রেলি ইনফরমাল হতে পারেনা। যার ফলশ্রুতিতে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়া মাত্রই সে আবার আগের মতো একা হয়ে যায়!!

আমি যদিও মনরোগ বিশেষজ্ঞ নই, তারপরেও নিজের অবজারভেশান থেকে কিছু সিমটম উল্লেখ করলাম। এখন আসা যাক সম্ভাব্য প্রতিকারে, সেটাও নিজের নিরীক্ষা থেকেই।

উপরে উল্লেখিত উপসর্গগুলি যাদের মধ্যে থাকে, তাঁরা সাধারণত এর বেশীরভাগ সম্বন্ধে অবগত থাকে এবং তার প্রতিকারও খোঁজে। কিন্তু মুশকিল হলো, তাঁরা প্রতিকার খুঁজতে যেয়ে যা যা করে তাতে কোন উপকার তো হয়ই না, কোন কোন ক্ষেত্রে বরঞ্চ তাঁরা সমস্যার আরও গভীরে চলে যায়। যেমন, আমরা সবাই জানি গান শুনলে মন ভালো হয়ে যায়, কিন্তু মন খারাপ (Depression) আর একাকীত্বতা (Loneliness) এক জিনিস না! বই পড়া, গান শোনা, মুভি দেখা কিংবা প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিজেকে একান্ত কিছু সময় দেয়া এইসব ব্যাপারগুলো সাময়িক কোনো কারণে মন খারাপ থাকলে ভালো কাজে দেয়, কিন্তু একাকীত্ব মেটেনা। এই ব্যাপারগুলোতে তোমার নিজের বলার কিছু থাকেনা, হয় তুমি অন্যকে শুনছো নাহয় দেখছো, কিন্তু একাকীত্বতা কাটাতে হলে তোমাকে কিছু বলতে হবে।

আপাতত লেখালেখি দিয়ে শুরু করা যেতে পারে, কারণ লেখালেখিটা একটা বদ্ধ ঘরে ভেন্টিলেটরের মতো কাজ করে। যার মাধ্যমে তোমার মনের দ্বিধা, হীনমন্যতা এবং আরও যেসব দূষিত উপাদান তোমাকে তোমার চারপাশের মানুষের সাথে সেই অর্থে মিশতে বাঁধা দেয় সেসব বেরিয়ে যাবে। বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই, যা খুশি লেখো। যেহেতু লেখালেখি বেশ ধৈর্যের সেই সাথে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তাই এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এমন কয়েকটা উপায় বলছি।

আপন মনে না হোক, কিন্তু যাদের কে তোমার কাছের মানুষ মনে হয় তাঁদের সাথে নিজের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বল, পারতপক্ষে সাধু ভাষা এড়িয়ে চলবে।

যাদের সাথে অনেকদিনের পরিচয়, কিংবা অল্পদিনের পরিচয় কিন্তু তাঁকে ভালোই লাগে, আত্মীয় হোক অনাত্মীয় হোক, বয়সের খুব বেশি ব্যাবধান না থাকলে সম্বোধনটা আপনি থেকে তুমি কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে তুই তে নামিয়ে আনো।

খুব ফর্মাল কোনো পার্টি না হলে, যে কোনো গ্যাদারিং -এ কোন হাসির উপকরণ পেলে মন খুলে হাসো। স্মাইল না, লাফটার!

এতক্ষণ যা যা বললাম সেসব প্যারাসিটামল, আপাতত উপসর্গগুলোকে দমিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু অ্যান্টিবায়টিক অন্যকিছু!!

পরিচিতজনদের মাঝ থেকে একজন কে বন্ধু বানাও, এমন বন্ধু যার সাথে তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে নীলছবি দেখার কথাও নির্দ্বিধায় বলতে পারবে। ভালোবাসাটা একতরফা বাসা যায়, কিন্তু বন্ধুত্বটা একতরফা হয়না। যেই মানুষটাকে তোমার দূর থেকে কিংবা মনে মনে ভালো লাগে এবং মনে হয় সে তোমার বন্ধু হতে পারে, তাঁর সাথে কমিউনিকেশান বাড়াও, নিজে খোলামেলা ভাবে কথা বলে তাঁকে স্পেইস করে দাও খোলামেলা হতে, কথাবার্তার প্রাথমিক পর্যায়ে খুব একটা ভালো না লাগলেও অপেক্ষা করো, দুজনে জড়তা কাটিয়ে উঠতে যতটুকু প্রয়োজন, বন্ধুত্ব হয়ে যাবে। কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার জন্য শুধু দুইটা জিনিস প্রয়োজন; তাঁর সঙ্গ তুমি উপভোগ করো কি না এবং তাঁর উপর নির্ভর করা যায় কি না।

এখন তুমি আর একা না…

~~~মর্তুজা~~~
০৫-০৩-২০১৬ইং।

Facebook: https://web.facebook.com/mortuza.abdullah.9