ওবামার বেঈমানি…

মৃণাল কান্তি দাস
Published : 25 Feb 2016, 07:55 PM
Updated : 25 Feb 2016, 07:55 PM

সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানকে দেওয়া সাহায্য শেষপর্যন্ত ভারতের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হবে। ওবামা প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত প্রাক্তন পাক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি। মার্কিন কংগ্রেসকে লিখিতভাবে সতর্ক করে বলেছিলেন, ওবামা প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির কথা বিবেচনা করছে। প্রায় ১০০ কোটি ডলার মূল্যের সামরিক হেলিকপ্টার, ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধসরঞ্জাম পাকিস্তানকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তা দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাতের আগুনে ঘৃতাহুতি দেবে মাত্র। পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র সম্ভারেও রাশ টানা সম্ভব হবে না। এই পাক কূটনীতিকের কথায়, জঙ্গি দমনে পাকিস্তানের ব্যর্থতার কারণ কখনই অস্ত্রের অভাব নয়। বরং এই ব্যর্থতা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের ইচ্ছাশক্তির অভাবেরই প্রতিফলন।

হাক্কানির কথাকে পাত্তাই দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একই সুরে ওবামার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক কার্লোটা গল। লিখেছেন, বিশ্বে জঙ্গিবাদ ছড়াতে কাজ করে পাকিস্তান। পাক গোয়েন্দা বাহিনী অনেক আন্তর্জাতিক মুজাহিদিন গোষ্ঠীর পরিচালক হিসাবে কাজ করছে। এমনকী ইসলামিক স্টেটের উত্থানের পিছনেও পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তালিবানকে বাগে আনার লক্ষ্যে পাকিস্তান কার্যত কিছুই করেনি। ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তি থেকে কোনও ফায়দা হাসিল করা যায় কি না, এ নিয়েই ইসলামাবাদের যত আগ্রহ। এমন অভিযোগ আফগানিস্তানেরও। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সেই সতর্কবার্তাতেও কান দেননি হোয়াইট হাউজের বাদশা। ওবামা প্রশাসনের বিরোধিতা করেছেন ডেমোক্র্যাট পার্টির বেশ কিছু আইনপ্রণেতাও।

এক দিকে আর্ন্তজাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসের কারখানা নিয়ে সরব হওয়া। অন্য দিকে, প্রায় ৭০ কোটি মার্কিন ডলারের পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম আটটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাকিস্তানকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া। সম্প্রতি ওবামা প্রশাসনের এই দ্বিমুখী আচরণে তাদের পরস্পরবিরোধী নীতিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ডেমোক্র্যাট সরকারই হোক বা রিপাবলিকান সরকার— আমেরিকার এই দ্বিমুখী নীতি-ই গত দু'দশক ধরে দেখে আসছে ভারত। যেমন পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ভারতে সন্ত্রাস পাচার নিয়ে নয়াদিল্লির যাবতীয় অভিযোগকে অনেকটাই লঘু করে দেখে এসেছে মার্কিন প্রশাসন। বিশ্ব দরবারে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানের গায়ে যেন কোনও আঁচড় না পরে তারজন্য 'ভাল' এবং 'মন্দ' তালিবান, এমন কী, 'ভাল' এবং 'মন্দ' সন্ত্রাসবাদীর তত্ত্ব তো আমেরিকাই খাড়া করেছিল।

সন্ত্রাসে মদত দেয় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। ডেভিড কোলম্যান হেডলির বয়ানের পর তা নিয়ে বিতর্ক বিশ্বজুড়ে। এরপরেও সন্ত্রাস নির্মূল করতে পাকিস্তানের উপরই আস্থা রেখেছে ওবামা প্রশাসন। বিদেশ সচিব জন কেরি জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে ৮৬ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য দেবে ওয়াশিংটন। ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ভার্মার যুক্তি, বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানকে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই ইসলামাবাদকে এফ–১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রি নতুন কিছু নয়। পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নাকি জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরিকে লেখা যৌথ চিঠিতে রিপাবলিকান সদস্য টেড পো এবং ডেমোক্র্যাটিক দলের তুলসী গাবার্ড বলেছেন, 'ভারতে পাঠানকোট হামলায় ৭ ভারতীয়ের প্রাণহানির পিছনে পাকিস্তান ও তালিবান যোগ থাকা জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের নাম জড়িয়েছে। যারা ২০০১ সাল থেকেই মার্কিন সরকারের কালো তালিকায় রয়েছে। ২০০৮-এর মুম্বই হামলায় ছ'জন মার্কিন নাগরিকও নিহত হয়েছিলেন, যার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিযুক্ত হাফিজ সইদ পাকিস্তানে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমেরিকা তাঁর মাথার দাম ১ কোটি ডলার ধার্য্য করেছে।' মার্কিন বিদেশনীতি সংক্রান্ত সেনেট কমিটির চেয়ারম্যান বব কর্কার-ও কেরিকে চিঠি দিয়েছেন এই মর্মে, আমেরিকান করদাতাদের টাকা খরচ করে 'ভর্তুকি দিয়ে' পাকিস্তানকে ওই বিমানগুলি বিক্রি করা উচিত হবে না। কারণ, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও হাক্কানির মতো জঙ্গি নেটওয়ার্কের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না পাকিস্তান, এবং 'সম্ভবত সাহায্যও করছে।' নয়াদিল্লির মতে, গত কয়েক বছর সীমান্তের ওপারে পাকিস্তান যে ভাবে সন্ত্রাসবাদকে মদত জুগিয়ে এসেছে, তারপর ওবামা প্রশাসনের কোনও যুক্তি ধোপে টেকে না।

আমেরিকার এত পাক-প্রেম কেন?

আইজেনহাওয়ার ১৯৫২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর বিদেশ সচিব জন ফস্টার ডালেস হয়ে ওঠেন দেশের বিদেশনীতির সর্বময় কর্তা। চীনকে ঘিরে ফেলার উদ্দেশ্যে ডালেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি রাষ্ট্রকে নিয়ে গঠন করেন নয়া জোট। পাকিস্তান সেই সামরিক জোটে যোগদান করে এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরিকল্পনার অঙ্গীভূত হয়। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঘিরে ফেলার উদ্দেশ্যে তারা গঠন করে বাগদাদ চুক্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশকে নিয়ে এই সামরিক জোট গঠন করে। পাকিস্তান এই জোটেরও অন্তর্ভুক্ত হয়। সেই শুরু। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই নয়াদিল্লির পালটা শক্তি হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে ইসলামাবাদ। ভারতই পাকিস্তানের একমাত্র বহিঃশত্রু। সেই সময় ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সুসম্পর্ক থাকায়, পাকিস্তান চীন, আমেরিকাকেই বেছে নিয়েছিল পালটা শক্তি হিসাবে। কিন্তু একদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অসামরিক নেতৃত্বের ধসে পড়া অবস্থা এবং অন্যদিকে বিভিন্ন শক্তিশালী সামরিক জোটের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধার কারণে পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধির শর্ত তৈরি হয়। এই শর্তের উপর ভর করেই সামরিক বাহিনী পাকিস্তানে প্রায় সর্বময় রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী হয়। এর প্রথম আনুষ্ঠানিক বহিঃপ্রকাশ ঘটে আয়ুব খানের সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্যে।

পাকিস্তান-মার্কিন সামরিক সম্পর্ক ও গাঁটছড়া বাধার প্রেক্ষাপটে রয়েছে তৎকালীন ভারতের শক্তিশালী বিদেশনীতি। যে নীতি কখনও কোনও শক্তিশালী দেশের কাছে মাথা নত করেনি। যে নীতির জোরে পাকিস্তানি সামরিক ও সেনা আশ্রিত রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষীদের শোষন-নির্যাতনের জোয়াল ভেঙ্গে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ। একাত্তরের সেই সময়ে যখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে টিকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হঠতে থাকে তখন এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পাকিস্তানকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা দিতে আদেশ দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া। কিন্তু নিক্সনের উদ্দেশ্য সফল হয়নি ভারতের বিরোধিতার কারণেই।

দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানকে বরাবরই তার বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে দেখে এসেছে আমেরিকা। আজ থেকে নয়, সেই ঠান্ডা যুদ্ধের সময় থেকেই। মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রাধান্য বিস্তারে মার্কিন স্ট্র্যাটেজির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল পাকিস্তান। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আয়ুব খান দেশের ক্ষমতা দখলের পর থেকে এখনও কাড়ি কাড়ি ডলার দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করে চলেছে পাকিস্তানকে। জেনারেল ইয়াহিয়া খান, জেনারেল জিয়াউল হক, জেনারেল পারভেজ মোশারফ পর্যায়ক্রমে সকলেই সামরিক সাহায্য পেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দীর্ঘ সময় ধরে যেসব দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সাহায্য পেয়েছে সেই তালিকায় পাকিস্তানের নাম ওপরে। শুধুই আর্থিক সাহায্য নয়, পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী কাদির খান তো স্বীকারই করে ফেলেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা না থাকলে পাকিস্তানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সহজ হত না।

ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরির মূল্য চোকাতে হবে

কে না জানে, মধ্য ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অধুনালুপ্ত সোভিয়েত প্রভাববলয় সঙ্কুচিত করতে কৌশলগত কারণেই পেন্টাগন পাকিস্তানের কাঁধে সওয়ার হয়েছিল। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ'র সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণেই আইএসআই একটি পেশাদার ও চৌকষ গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে গড়ে উঠেছিল। পাকিস্তানও দ্রুত সামরিক ও অর্থনৈতিক দুই সেক্টরেই মার্কিন প্রভাববলয়ের পুতুলে পরিণত হয়েছিল। একইসঙ্গে দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঘাটতির সুযোগে দফায় দফায় সামরিক উচ্চাভিলাষের মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে পাকিস্তান। এরপর আফগানিস্তানকে কব্জায় রাখতে কৌশলগত কারণে সোভিয়েত-মার্কিন কূটনৈতিক ও গোয়েন্দা লড়াই তীব্রতর হয়। কাবুলের সোভিয়েত প্রভাবিত সরকার হঠাতে সিআইএ তালিবান ও আল-কায়েদা তৈরির মহাপ্রকল্পে বিপুল অর্থ ও অস্ত্র বিনিয়োগ করে। তালিবান ও আল-কায়েদা নেটওয়ার্ক তৈরি, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা বাবদ সিআইএ ২০০১ সালের ৯/১১ পর্যন্ত খরচ করেছে অন্তত ৫ হাজার কোটি ডলার। এই বিপুল বিনিয়োগ আসে আইএসআইয়ের হাত ঘুরে। পাকিস্তানে জঙ্গি তৈরির মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের উপঢৌকন হিসেবে সামরিক-অসামরিক নীতি নির্ধারকেরা রাতারাতি বিপুল ক্ষমতা ও অর্থের মালিক বনে যান। এই অর্থের অর্ধেক আইএসআই তথা পাকিস্তানি সামরিক-অসামরিক নব্য এলিট শ্রেণি পকেটে ঢুকিয়েছে। ফুলে ফেঁপে উঠেছে তাদের বেনামি সুইস ব্যাংকের অ‌্যাকাউন্ট। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরির মূল্য এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানকে যুগপৎ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

জঙ্গি মদতদাতা পাকিস্তানই ওবামার মিত্র

কাশ্মীরে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য পাকিস্তান জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এমন বিস্ফোরক মন্তব্য শোনা গিয়েছে পাকিস্তানের প্রাক্তন সামরিক শাসক পারভেজ মোশারফের মুখ থেকেও। অকপটে জানিয়েছেন, ১৯৯০ সালে কাশ্মীরে স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ওইসময় লস্কর-ই-তোইবা সহ ১১ -১২টি  সংগঠন গড়ে ওঠে। শুরু থেকেই পাকিস্তান ওই গোষ্ঠীগুলিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছে। এমনকী নিরাপদ আশ্রয়ও। তালিবান, হাক্কানি, ওসামা বিন লাদেন, জাওয়াহিরি, হাফিজ সইদ, লাকভি একসময় পাকিস্তানে হিরো ছিল। তাদের ধর্মীয় জেহাদের পাশেই ছিল পাকিস্তান। পরবর্তীকালে এই ধর্মীয় জেহাদই সন্ত্রাসবাদে পরিণত হয়। এখন এই জঙ্গিরাই নিজেদের দেশের লোকেদের হত্যা করছে। তালিবানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রাশিয়ার পাঠিয়েছি আমরাই। এরপরও নীরব থেকেছে ওয়াশিংটন।

অথচ, গত বছর ২৫ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বার্তা দিয়েছিলেন ওবামা। সেদিন ভারতের স্বস্তি আরও বাড়িয়ে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র এরিক শুলজ জানিয়েছিলেন, আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও অসামরিক পরমাণু চুক্তি হচ্ছে না। শুলজের কথায়, ''আমেরিকা নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে এখন পরমাণু চুক্তি হবে না।'' গুজরাত দাঙ্গার পরে তাঁকে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল যে আমেরিকা, সেই নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ওবামার গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। ওবামা প্রশাসনের প্রাক্তন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টনও মন্তব্য করেছিলেন, ''ভিসা বিতর্ক এখন ইতিহাস।'' ব্যাবসা আর সামরিক সমঝোতায় মোদি সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করতে আগ্রহী আমেরিকা।

ভারত সফরকারী প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার। ১৯৫৯ সালের শীতে তিনি দিল্লি পৌঁছবার পর রাস্তার দু'ধারে ভিড় জমে গিয়েছিল তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য।  সুসজ্জিত ঘোড়ায়-টানা গাড়িতে চড়ে এলেন তিনি, পাশে ছিলেন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ। সেই সময় ভারতের সঙ্গে মার্কিন দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। কাশ্মীরে পাকিস্তানের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ বিষয়ে একটুও সমালোচনা না করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন দুটি দেশই তখন কাশ্মীরকে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। আর, তার ফলে, আমেরিকার থেকে মুখ ঘুরিয়ে ভারত সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে আমেরিকার তীব্রতম শত্রু মস্কোর দিকে। তবু সেদিন ভদ্রতার ত্রুটি রাখেননি ভারতীয়রা।

পঞ্চান্ন বছর পর, মোদির বাড়ানো হাত ধরতে দিল্লি দরবারে পৌঁছে গিয়েছিলেন আর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নরেন্দ্র মোদি জানতেন যে 'সুপার-পাওয়ার'কে পাশে পেতেই হবে। জানতেন, বৃহত্তর কূটনৈতিক লক্ষ্যটি পূরণের জন্য অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহযোগিতার সেতু শক্ত না করলে চলবে না। নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন মোদিও। কিন্তু সেই স্বপ্নে ধাক্কা দিলেন ওবামাই। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিংহাসনকে চিরবিদায় জানানোর আগে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়ে গেলেন তিনি। নয়াদিল্লির প্রতিবাদকে পাত্তা না দিয়ে, অত‌্যাধুনিক আটটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার সবুজ সংকেত দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে তাদের কোলে লালিত পালিত পাকিস্তানই আমেরিকার পরম মিত্র!