নিশ্চিন্তপুরের শবের মিছিল

সালমা কবীর
Published : 19 Dec 2012, 03:10 AM
Updated : 19 Dec 2012, 03:10 AM

২৪শে নভেম্বর, শনিবার । বাতাসে শীতের হাল্কা আমেজ আর তাজরীনের শ্রমিকেদর রক্তমাংসের পোড়া গন্ধ। যারা জীবন জীবিকার সন্ধানে সকালে কারখানায় কাজে ঢুকে উদ্দাম গতিতে তারা কি জানত তাদের ভাগ্যের এই নির্মম প রিহাস ! দুপূর গড়িয় সন্ধ্যা নামে । শ্রমিকের আর্তচিৎকার আর স্বজনের আহাজারিতে বাতাস ভারী হতে থাকে । সকল শ্রেণী পেশার মানুষ দুরদুরান্ত থেকে যেমন জমায়িত হতে থাকে, তেমিনিভাবে তাজরীনের িসঁড়ি ভেঙ্গে জমায়িত হতে থাকে একের পর এক শব দেহ । সারিবদ্ব হয়ে পরিণত হয় স্তুপে; প্রশ্ন তুলে কে জানত তাদের এই প রিণতি? তালাচাবির মালিক ? েফ্লারের কমর্কর্তারা ? আজ যে অঙ্গার দেখে ভাই-বোনকে অনুভব কর এ আবেগ আদৌ কি ছিল? শব-শোকে স্তব্ধ জনতা আবেগে উদ্ধেলিত হয়, সচিকত হয় এমিন হাজােরা প্রশ্নের !বেজে উঠে মুঠোফোন স্বজনেক বাঁচানোর মিথ্যা আশ্বাসে ।

ফেক্টরীতে যখন ছুটির ঘন্টা বাজে শ্রমিকরা একে একে হাতের কাজ গুছিয়ে বহির্গমনের পথের দিকে যেতে থাকে। গড়ে হাজার কর্মৃীর ৫০ শতাংশ থেকে যায় ফেক্টরীতে ওভারটাইেমর জন্য। বহির্গমনের সময় গতি সাবলীল থাকলেও প্রত্যাবর্তনের সময় একে একে হয় দেহ তল্লাসী, গতি থাকে মন্থর, বের হ্ওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার । গেটে দারোয়ানরা ছাড়া উপিস্থত থাকে এডিমন কমর্চারীরিরা । কারারক্ষীরা যে কায়দায় কয়েদীদের দেহ তল্লাসী করে ঠিক সে কায়দায় কারখানার সুঁই, সুতা, কাপেড়র জন্য চিরুণী তল্লাসী হয় । বলা বাহুল্ল্য, বহির্গনের ফটকিট থাকে বড়জোড় দেড়ফুটের মত, আর মূল ফটক ১০/১২ ফুটের, এটার ব্যবহার কন্টেইনার ট্রাক আসা-যাওয়ার জন্য । কর্তৃপক্ষের জন্য সব ফটকই থাকে তালাবদ্ধ-মৃত্যুকূপ।

বহিগর্মেনর পথে চেিকং এর সময় ধরা পড়ার জন্য গ্রীভেন্স প্রসিডিউরের মাধ্যেমে শ্রমিকের জন্য রয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা – লঘু ও গুরু পদ্ধতি ; কারন দর্শানোর নোটিশ, 'অনিদর্ষ্টকালের জন্য ছাটাই' 'বরখাস্ত' । শািস্ত এপ্লাইেয়র শাস্তির দায়িত্ব থাকে এ্ইচ আর সেকশেন নিয়োজিত কমর্চারীদের । তবে আন্তর্জাতিক বায়ারের অডিটের ক্ষেত্রে নন-কম্প্লায়েন্স ইস্যুর শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় ইনভলব হতে হয় কারখানার উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গকে। যে শ্রমিকটি কারখানায় কাজে ঢোকে নবউদ্দোমে বের হতে হয় অনিশ্চয়তা নিয়ে। অসচতেনতা, জীবর-ধারনের সাথে পয়সার অসঙ্গিত, বেকয়া বেতন, তদুপির আছে ফ্লোরের কমর্চারীর দুর্ব্যবহার। রাগে, ক্ষোভে ভাঙ্চুর করে, পোড়ায় কখনো বা নিজেই পুড়ে অঙ্গার হয় কারখানার তালাবদ্ধ ফটকে । কোম্পানির মালিক এবং সংষ্লিষ্টরা হয়ত বুঝোও বুঝে না, তারা শুধু বুঝে নিজেদের মুনাফা ।

কোম্পানির শ্রমিকদের মানহানি, সেফটি, সিকিউিরিটি তোয়াক্কা না করে ৮০-র দশক থেকে এভাবেই চলেছ গার্মেন্টস বাণিজ্য পাশাপাশি তার প্রসার । ৯০-এর দশক থেকে কারখানার ভেতরে আগুনে পুড়ে প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক । স্বংর্ এক উদ্যোক্তার নিজের পুলিকভারবিহীন মেশিনে দুর্ঘটনার শিকার হয়। অবধারিত হয়ে পড়ে কমপ্লায়েন্স বিষয় । ২০০৬ সালে শ্রম-মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রণিত হয় শ্রম-আইণ । শিল্প পায় গতিময়তা ; আবশ্যিক হয়ে পড়ে প্রচার এবং বাজার করায়ত্ব। আন্তর্জতিক বাজারে বাংলাদেশ রপ্পাতানিকারক দেশ হিসেবে পায় দ্বিতীয় স্থানের মর্যাদা ।বছরে অন্তত কয়েকবার তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড বা শ্রমিক অসন্তোষে শ্রমিকের মৃত্যু পাশাপাশি কারখানার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। প্রতিবারই দুর্ঘটনার পর সরকার, বিজিএমইএ ও অন্যান্য সংস্থা সচিকত হয়, পুঙ্খানুপিঙ্খ আলেচনা করে,উপায় বিশ্লেষন করে নানা প্রতিশ্রুতি দেয় । এবারের নৃসংশতার আলোচনা আর্ন্তজাতিক পর্যোয়ে চলে যায় । যদিও পূর্বেকার দেয়া প্রতিশ্রুতির মধ্যে সেফিট, সিকিউিরিট, অভিযুক্ত আসামীদের শাস্তি, গার্মেন্টস পল্লী স্থাপন, মালিকসহ সব শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন কার্যত হওয়ার প্রশ্নে একেবারেই অবান্তর ! তদুপির এবারের আলোচনায় পূর্বোক্ত শর্তসমূহ ঝালাই এর পাশাপাশি নুতন বা অবিশষ্ট কিছু শর্ত যোগ হয় কেননা এবারের আশুলিয়ায় তাজরীনের অভ্যন্তরে মৃত্যুর সংখ্যা ভয়াভহ- ১১১ ছাড়িয়ে যায় । পূর্বোক্ত শর্তসমূহের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য কিছু শর্ত– জরুরীভিত্তিতে জন্য কারখানা থেকে বের হওয়ার জন্য দুাট সিঁড়ি না থাকেল কারখানাটি সীল মারা হবে,পূর্বোক্ত টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্তের মধ্যে বিদেশী অডিট কোম্পানি, কলাকুশলী নিয়োগের অন্তর্ভূক্তি পায় ।

মৃত শ্রমিকদের জন্য অনুদান আসে দেশী বিদেশী সংস্থা থেকে । পরিবারের উপার্জনক্ষম একটি শ্রমিকের মৃর্ত্যু একটি পরিবারের মৃত্যু । মাথা যার ব্যথা তার । এ অপূরণীয় ক্ষতি কেবলমাত্র আর্থিক অনুদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা চলে না । মৃত্যুর অনিভূতি আর অসংখ্য পড়ে থাকা লাশের ফলশ্রূতি অনুধাবন করে আন্তর্জাতিক আ্ইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন, আ্ইনের পরিবর্তন, পরিবর্ধন পাশপাশি তৎাক্ষিণক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের ভাগ্যও আজ একই পরিণতির সম্মূখীন হতে হবে; মুখ থুবের পড়বে অর্থনীতি এটাই সংশ্লিষ্ট সবার আতঙ্ক ।

কারখানা যেন শ্রমিকের জন্য মৃত্যুফাঁদ না হয়ে ফটক তালাবদ্ধতার বিপরীতে শ্রমিকদের সচেতন করে তুলতে প্রয়াসী হয়, অন্তত তাদের বেঁচে থাকার আশ্বাস দেয় এটাই সবার কাম্য।

অডিট, সারেভেইলেন্স অডিট এবং উপর্যপুরি অডিটের লাল সংকেতে পূণরায় অপরাধী মালিকের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা না করে কারখানা সীল করার মত কঠোর আ্ইনের পাশাপাশি শ্রমিকদের বেঁচে থাকার মত মৌলিক অধিকার রক্ষার সুযোগ দেয়া আজ অবশ্যম্ভারীরুপে সত্য হয়ে উঠেছে। তাজরীনের মত অন্যান্য গার্মেন্টসের মালিকরা যেন খেঁটে খাওয়া শ্রমিকদের জন্য মৃত্যুফাঁদ তৈরী না করে তাদের এমনিক নিজেদের জীবেনর জন্য অঙ্গিকারবদ্ধ হন; সত্যিকার অর্থে শ্রমিকদের ভাই-বোনের মর্যাদা দিয়ে একসাথে বলে উঠেন, ' শ্রমিকের রক্ত আমার রক্ত, শ্রমিকের মৃত্যু আমার মৃত্যু। '