এক কাপ চা ও সিটি কর্পোরেশন

সালমা কবীর
Published : 2 Jan 2013, 07:28 PM
Updated : 2 Jan 2013, 07:28 PM

ব্রিটিশরা আমাদের চা পান শিখিয়েছে।হাঁটে বাজারে সুদৃশ্য দোকান খুলে চোঙা ফুঁকে ফ্রি চা'র আমন্ত্রণ জানাতো।ফ্রি চা খেয়ে খেয়ে আমরা চা পানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি।আজকাল একজন নীরস জনেরও দৈনিক দু'কাপ চা না হলে চলে না।
আমাদের পুবে চীন দেশে এখনো অনেকটা সেই রকম রীতি চালু আছে।খুচরা চা পাড়ার দোকানের সামনে চায়না সিল্কের লম্বা ফুলেল কামিজ পড়ে সুদর্শন মেয়েরা চা'র ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে থাকে।থাকে নানান ধরনের নানান সুগন্ধযুক্ত ঐতিহ্যবাহী চা।কাগজের কাপের সেই চা'র স্বাদ নিয়ে আপনি যেন বুঝতে পারেন কোন চা'টা আপনার দরকার।

গল্প আছে, ব্রিটিশ ভারতে আমাদের প্রধান কবিদের একজন যৌবনে কলকাতা ভ্রমন করে ফেরার সময় শখ করে কিছু চাপাতা কিনে আনেন।ইয়ার-বন্ধুদের সাথে জামপেশ আড্ডার সাথে হঠাত্‌ কবির সে চা'য়ের কথা মনে হল।তখনি খবর গেল অন্দরমহলে।জিনিষটি ছিল কবি গিন্নির কাছে একেবারে অচেনা।তিনি নিজ বুদ্ধি বিবেচনায় পানীয়টি মাছ দিয়ে রান্না করে বাইরের ঘরে পাঠিয়ে দেন।কি মাছ দিয়ে রান্না করলেন সেটি না-ই বা বললাম।

আমার দাদা ছিলেন ব্রিটিশ চা বাগানের কর্মকর্তা।সেই কারণে হয়ত দাদি দৈনিক ৪ বার চা পান করতেন, তা আবার ঘড়ির কাঁটার সাথে মিলিয়ে।ছাটি-ছাঁটার দিনগুলিতে আমার মরহুম পিতা একসঙ্গে চা পান করার জন্য সকালের পাকা ঘুম ভাঙ্গিয়ে পরিবারের সবাইকে একসাথে চা খেতে বসাতেন।

অভ্যাসমত আমি চা খাই, আদা কুঁচি দিয়ে রং চা সকালে এবং বিকেলে।আর সন্ধ্যায় বা রাতে হালকা জেসমিন চা।সময় সুযোগে রবীন্দ্রস্মরণীতে গিয়ে ডিসপজিবল প্লাষ্টিক কাপে আয়েস করে পুরোনো বন্ধুদের সাখে দুধ চা'ও খেতাম।আর সমস্যাটা সেখানে, ইদানিং কাঁচের কাপ আমদানী করেছে। বালতির ময়লা পানিতে আলগা করে ধুয়ে রাখা সে কাপে চা খাওয়ার রুচি আর হয় না।ভয়টা জীবানু-সংক্রামক পানিবাহিত রোগের।

চা-মামুকে জিজ্ঞেস করাতে জানা গেল পরিবেশের কারনে সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশে ডিসপজিবল প্লাষ্টিক কাপ বন্ধ করা হয়েছে।চা প্রেমিকরা নাকি প্লাষ্টিক কাপ ডাস্টবিনে না ফেলে এদিক সেদিক ফেলে রাখে। এটা আবার সিটি কর্পোরেশনের কি ধরনের যুক্তি? আমার জানা মতে, খালি কাপ মাটিতে পড়ার আগেই টোকাই'রা কাকের মত ছোঁ মেরে তুলে নেয়।

পরিবেশ প্রেমিক সিটি কর্পোরেশনের আসলে উচিত অন্য যায়গায় চোখ দেয়া। তাদের চোখ রাখা দরকার তাদের উপর, যারা ব্যস্ত সড়কে ইট-সুঁড়কি-রডের পাহাড় বানায়,যারা মাটি ভর্তি খোলা ট্রাক চালিয়ে কংক্রিটের সুদৃশ্য সড়ককে কাঁদাময় রাস্তায় পরিণত করে বা যারা হাঁটার ফুটপাতকে দোকানের শো রুম বানিয়ে ব্যবসা করে ।