আমরা স্বাধীন দেশের বন্দী নাগরিক

নাসির আহমেদ
Published : 27 March 2011, 03:01 PM
Updated : 27 March 2011, 03:01 PM

স্বাধীনতা আমাদের গৌরবের। স্বাধীনতা আমাদের অর্জিত সম্পদ। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের গৌরবের মায়া গাঁথা এই লাল সবুজের পতাকা। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর এক ঐতিহাসিক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আমারা অর্জন করি মহান স্বাধীনতা। ইতিহাসের বিচারে মাত্র নয় মাসের সংগ্রামের অর্জিত স্বাধীনতা বিশ্বের ইতিহাসেও বিরল। যেখানে ভিয়েতনামের স্বাধীনতা লাভ করতে সময় লাগে ২৬ বছর। ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে চল্লিশ বছরের ওপর আন্দোলন করে ভারত অর্জন করে স্বাধীনতা। ফরাসী শক্তির বিরুদ্ধে নয় বছর ধরে লড়াই করে আলজেরিয়া পায় স্বাধীনতা। ইরেত্রিয়া রক্তাক্ত সংগ্রাম করে আজও ইথিওপিয়া থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারেনি। কাশ্মীর সহ ভারতের সাত রাজ্য অব্যাহত রেখেছে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। তাই স্বাধীনতা আমাদের জন্য গৌরব ও অহংকারের। আমরা স্বাধীন ভূ-খন্ড পেয়েছি সত্য, কিন্তু পায়নি তার আয়তন। আমরা স্বাধীন একটি রাষ্ট্র পেয়েছি বটে, কিন্তু পাইনি আমাদেও সংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকার। আমরা পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি ফেলেও এখনও নিজ দেশেই যেন বন্দী। অথচ স্বাধীনতা শব্দটির মাঝেই লুকায়িত প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়ের চাওয়া পাওয়া আর আত্মার প্রশান্তি। সেই পাওয়া অঢেল সম্পদ আর ক্ষমতার মালিকানা নয়। কিংবা আভিজাত্য আর বিলাসিতা পূর্ণ জীবন ও নয়। স্বাধীনতা মানে আমার কথা বলার অধিকার, স্বাধীনতা মানে আমার জান মাল, ইজ্জত, আব্রুর নিরাপত্তা। স্বাধীনতা মানে আমার পরাধীনতার বেড়াজাল থেকে মুক্তি। স্বাধীনতা মানে আমার ছোট্ট একটি সংবিধান। স্বাধীনতা মানে আমার, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি। কিন্তু আজ আমাদের মানচিত্র খন্ড বিখন্ডিত। বিডিয়ারকে হত্যা করে সীমান্ত অরক্ষিত, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার আজ ভুলুন্ঠিত। প্রতিটি নাগরিক অধিকার নির্বসিত। মানুষের জান মাল, ইজ্জত, আব্রুর নেই কোন নিরাপত্তা। কিন্তু কেন? আমার দেশের প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধমীয় স্বাধীনতা কোন দল বা গোষ্ঠীর করুণা কিংবা দয়া নয়। এটি সংবিধান
স্বীকৃত আমাদের প্রাপ্য অধিকার। এ আধিকার হরণের সাধ্য কার!

আমার সোনার বাংলা বৃটিশদের দু'শো বছরের গোলামী শাসন, দ্বিজাতি তত্ত্বের মাধ্যমে স্বতন্ত্র্য জাতিসত্তার বিকাশ আর পাকিস্তানীদের শোষণ থেকে মুক্তি পেলের তাদের দোসরদের কবল থেকে মুক্ত হয়নি এখনো। সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে ভারত হাঙ্গরের মত তার আসল চরিত্র নিয়ে হানা দিচ্ছে বাংলাদেশের উপর। এর অন্যতম কারণ আওয়ামী লীগের অতিমাত্রায় ভারত প্রীতি। ভারতের প্রতি এই কৃতজ্ঞতা অবশ্য আওয়ামী লীগের ঐ নেতারাই বেশী প্রকাশ করেন, যারা যুদ্ধ না করে মুন্সিয়ানার মত ভারত পালিয়ে লজিং ছিলেন। এই জন্যে অনেক আওয়ামীলীগারদের-ই সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া ভালো লাগেনা, এক মন্ত্রীতো সেদিন বলেই ফেললেন "ভারত ও বাংলাদেশ চেতনায় এক ও অভিন্ন"। এর বড়
প্রমাণ মিলবে ইটালিয় বংশোদ্ভত সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাচির " ইন্টারভিউ উইথ হিষ্টরী" গ্রন্থে। যিনি ইন্দিরা গান্ধীকে প্রশ্ন করেছিলো- আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশ আপনার কাঙ্খিত মিত্র হবে। ইন্দিরা গান্ধী উত্তর দিলেন- "বাংলাদেশ ও আমাদের বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। অবশ্য একতরফা বন্ধুত্ব হবে না। প্রত্যেকেরই কিছু দেবার ও নেবার থাকে আমরা আমাদের পাওয়ার ব্যাপারে সব সময়ই সচেষ্ট "। সম্মানিত পাঠক বৃন্দ এখান এটি খুবই পরিস্কার যে, ভারত নিজেদেও স্বার্থেই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহন করেছে আওয়ামী সরকার। ক্ষমতা লাভের মুহূর্ত থেকেই তাদের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সেই সঙ্গে খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি-বাণিজ্য, চুরি-ডাকাতি, দখল, লুণ্ঠন, হত্যা, খুন, রাহাজানি ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করে। ফলে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় এক মারাত্মক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির। ভারতের সাথে কয়েকটি গোপন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চলটিকে বিচ্ছিন করার পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মহাজোট সরকার। ভারতকে বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের অনুমতি প্রদান করে বাংলাদেশের এক বৃহৎ
অংশ (সিলেট অঞ্চলকে) মরুভূমিতে পরিণত করার নীল নঁকশা ইতিমধ্যে প্রায় চুড়ান্ত। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে দেশকে ধর্মহীন করার প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষানীতি প্রণয়নের কাজও সম্প্রতি শেষ করেছে সরকার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বিনা বিচারে হত্যার সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হিসেবেই মাসে রাজধানীতেই ৩০৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে খুন হয়েছেন ২৫ জন। দেশের জননিরাপত্তা ব্যবস্থা যেভাবে ভেঙে পড়েছে সেটা স্বাধীনতা-পরবর্তী ৭২-৭৪ সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ক্ষমতার দাপট, সীমাহীন লোভ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, এলাকাপ্রীতি ইত্যাদি সরকারের সর্বত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করিয়ে 'শান্তিরক্ষা'র অজুহাতে বিরোধী দলের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে, যা তাদের পুরনো ফ্যাসিবাদী ধারারই অনুসরণ। বাংলাদেশ এখন যেন পুলিশী রাষ্ট্র। রিমান্ডের নির্যাতন, হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি এখন পুলিশের নিয়মিত কাজ পরিণত হয়েছে। মানুষ সুবিচারের জন্য ছুটে যায় সর্বোচ্চ আদালতে। কিন্ত শেষ আশ্রয়টুকুও এখন আর অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। গ্যাস বিদ্যুৎ পানিসহ জনদূর্ভোগ , দ্রব্যমূল্যের উর্ধোগতি সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ ও সাংবাদিক নির্যাতন ,
বিরোধী দলের উপর দমন নিপিড়নের ও শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসের ফিরিস্তি অল্প কথায় শেষ করা কঠিনই বটে। ছাত্রলীগের অত্যাচারে গোটা জাতি যখন অতিষ্ট। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই দিশেহারা। কখনও বলেন- ছাত্রলীগেকে ত্যাজ্য করে দিলাম, কখনও বলেন- ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। সধারণ সম্পাদন বলছেন-ছাত্রলীগের দায়দায়িত্ব আওয়ামীলীগ নেবে না। যারা নিজেদের একটা ছাত্রসংগঠন চালাতে পারেন না, তারা দেশ চালাবে কিভাবে? এই প্রশ্ন-ই এখন সবার।

সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বেছে নেয় বিরোধী দলের উপর দমন নিপীড়নের পথ। কারণ সরকার খুব ভালো করেই জানে, এ দেশে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের কোন চক্রান্ত-ই সফল হবে না। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন কোন দিনই পুরণ হবেনা। যার কারণে জামায়াত-শিবিরের সংঘবব্ধ শক্তিই হয়ে ওঠে এই সরকারের সকল মাথা-ব্যথার মূল কারণ। তাছাড়া জরুরী অবস্থার সময় বিএনপি সংগঠিত করতে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রেখেছে জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এটি সকলেরই জানা। ফলে একটি ঠুনকো মিথ্যা ও জামিনযোগ্য মামলায় ২৯ জুন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেফতার করেছে সরকার। অন্যায়ভাবে আটককৃত নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রখ্যাত আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ, সাংবদিক ও বুদ্ধিজীবি হিসেবে তাদেও রয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে আইনে পরিচিতি। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী দেশের একজন বরেণ্য আলেম, তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দলের আমীর। দু'বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন

এবং কেবিনেট মন্ত্রী হিসেবে ৫ বছর সফলভাবে সততার সাথে দুটি মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেছেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসছিরে কুরআন। তিনি দু'বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং তাঁর বক্তব্যে আকৃষ্ট হয়ে হাজার হাজার অন্য ধর্মাবলম্বী ইসলাম গ্রহণ করে শান্তির ছায়াতলে আসার সুযোগ পেয়ে আসছে। জনাব আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ দলের সেক্রেটারী জেনারেল ছাড়াও একটি ইংরেজী পত্রিকার সম্পাদক, গত ৫ বছর সৎ ও সফল মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা সকলেই জাতীয় নেতা। তাঁদের সকলের বয়স ৬২-৭০এর মধ্যে। তাঁদের মতো এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রবীণ নেতাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন- নিপীড়ন চালানো এ দেশের শুধু নয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক নজীরবিহীন কলঙ্কজনক ঘটনা। যাঁরা তাঁদের জীবনটাই ইসলামের জন্য নিবেদন করে দিয়েছেন, তাঁরাই কি-না ইসলামকে হেয় করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন (নাউযুবিল্লাহ)! আর তাঁদেরকে নাজেহাল করার জন্য আদালতের মাধ্যমে সমন জারি করে তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হলো। অথচ সে মামলায় তাঁদেরকে জামিনও দেয়া হলো। সঙ্গে সঙ্গে অনেক মিথ্যা মামলা তাদের বিরুদ্ধে রুজু করা হলো, ৫টি মামলায় কথিত জিজ্ঞাসাবাদের নামে প্রায় ১ মাসের মত রিমান্ডে নেয়া হলো। আসলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য ধর্মীয় অনুভূতি নয়, জামায়াত-শিবির ও ইসলামকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করা। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া
আওয়ামী লীগেরই স্বভাব। সচেতন দেশবাসী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি প্রদান এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগেরই স্বভাব। লক্ষ্য করুন, অতিসম্প্রতি ধর্মের
ওপর তারা কিভাবে একের পর এক আঘাত হেনে চলেছে-

(ক) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী বলেন, "লাখ লাখ কোটি কোটি বছর পর আল্লাহ যদি আমাদের বিচার করতে পারেন তবে আমরা এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারব না কেন?" এটা কি আল্লাহর নিরঙ্কুশ ক্ষমতার সাথে তার অংশীদারিত্বের দাবি নয়?

(খ) সিইসি এটিএম শামসুল হুদা তো স্বয়ং আল্লাহর বিরুদ্ধেই জিহাদ ঘোষণা করেছেন এভাবে, "সেনাবাহিনী ফেরেশতা নয় যে তারা এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। সেনাবাহিনী কেন, খোদ আল্লাহতায়ালা নেমে এলেও কিছু করতে পারবেন না।"

(গ) কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী রাসূলের (সা.) উম্মত সংক্রান্ত বিষয়ে পবিত্র ধর্ম ইসলামের ওপর আঘাত হেনেছেন এভাবে, "বিএনপি কর্মীরা জিয়ার উম্মত আর জামায়াত কর্মীরা নিজামীর উম্মত। আর আমরা যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি তারা নবীজীর উম্মত।"

(ঘ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে কয়েকটি অনুষ্ঠান কুরআন তেলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্র সঙ্গীত দিয়ে শুরু করা হয়েছে যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রতিষ্ঠিত রীতির ব্যতিক্রম। এটা ৯৫% মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা নয়?

(ঙ) সম্প্রতি ইসলামী ফাউন্ডেশনের ডিজি ইমাদের অনুষ্ঠানে অশ্লীল নৃত্য আর ভারতীয় শিল্পীদের দিয়ে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।

ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বেশি জিঘাংসার শিকার হয়েছে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে তারা শঙ্কিত হয়ে এর নেতা-কর্মী সর্বোপরি নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা করেছে। অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার পথে প্রধান অন্তরায় বলে তারা মনে করছে জামাত –শিবিরকে। ফলে দমন-পীড়ন, অত্যাচার-নির্যাতন এবং খুন-জখমের টার্গেটে পরিণত হয়েছে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছে না বাড়িতে থাকা মা-বোনেরাও। গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির সেক্রেটারি এমবিএ'র মেধাবী ছাত্র শরীফুজ্জামান নোমানীকে হত্যা করা হয় অত্যন্ত নির্মমভাবে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কেটে নেয়া হয় তার হাতের
বৃদ্ধাঙ্গুল এবং উপর্যুপরি কোপে দ্বিখণ্ডিত করা হয় আল্লাহকে সিজদাকারী মাথার মস্তক। কিন্তু জঘন্য নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়ে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই মামলা রুজু করা হয়। জামালপুরে হত্যা করা হয় হাফেজ রমজান আলীকে। দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া এই মেধাবী ছাত্রকে হত্যা করে চলন্ত ট্রেনের নিচে ফেলে দিয়ে দিখণ্ডিত করে দেয় নরপশুরা। এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জেরকে তারা একঢিলে দুই পাখি মারার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ উস্কানিতে পুলিশ প্রশাসন শিবির নির্মূলের অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গণগ্রেফতার আর অত্যাচারের ভয়াল থাবা বিস্তার করে শিবিরের নিরীহ মেধাবী ছাত্রদেও উপর। এই ঘটনাকে পুঁজি করে সারাদেশে ব্যাপক ধরপাকড় চলে কথিত "চিরুনি অভিযান"-এর নামে। মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে লাশে পরিণত হন দুই জন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্র পিতামাতার একমাত্র সন্তান হাফিজুর রহমান শাহীনকে। এলাকার প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে যখন সবাই শোকে কাতর, সেখানে জানাযায় পর্যন্ত বাধা দেয়া হয়, কবর জিয়ারত থেকে বিরত রাখতে র্যাব পুলিশ দিয়ে পাহারা দেয়া হয় কবর। কত জঘন্য ও নিষ্ঠুর হলে মানুষ এমনটি করতে পারে! চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিন মাসুমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে ছাত্রলীগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক মেধাবী ছাত্র শিবির নেতা হারুনুর রশীদ কায়সারকে শাটল ট্রেন থেকে অপহরণ করে জবাই করে ফেলে দেয়া হয়। এ সকল ঘটনায় মামলা দায়ের করতে গেলে মামলা নেয়া তো দূরের কথা উল্টো কয়েকশ' মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়
আমাদের নেতা ও কর্মীদেরকে। আক্রমণ-জখম, মামলা আর জেলে ভরে চলে মানবতার বিরুদ্ধে চরম অবমাননা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটিকে ছড়িয়ে দেয়া হয় সারা বাংলাদেশে। দেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নামধারী গুণ্ডাদের নির্মম আক্রমণের শিকার হন ছাত্রশিবিরের হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা। অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক ছাত্রের শিক্ষাজীবনকে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাইজুল ও ইকরামের কাছ থেকে মিথ্যা বক্তব্য আদায় করতে রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দেয়া হয় তাদেরকে। রিমান্ডের নামে নির্যাতনে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে আরও অনেককে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কায়েম করা হয় সন্ত্রাসের রাজত্ব। মিছিল, সমাবেশ এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় প্রতিটি নাগরিকের অন্যতম সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। অথচ গণতন্ত্রের নিরঙ্কুশ দাবিদার বর্তমান আওয়ামী সরকারের উপরোক্ত অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করার জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাইলে সরকার তার অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এমনকি খোদ নিজেরাই তা বানচালের ঘৃণ্য পদ্ধতি অবলম্বন করে। সর্বশেষ ২৬ মার্চ ছাত্রশিবিরের স্বাধীনতা দিবসের র্যালীতে হামলা করতে ও পুলিশ দ্বিধা করেনি। পুলিশ প্রশাসনকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয় তারা। এখন যেন ছাত্রলীগের কাছে অসহায় পুলিশ। পুলিশের সামনেই মেরে আহত করে পুলিশে সোপর্দ আর কোন্ মামলায় গ্রেফতার এবং আরো কী করা যায় তার সব নির্দেশ আসে আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে। এ কেমন দেশ! এ কেমন প্রশাসন! অথচ পুলিশের দায়িত্ব ছিল চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ইভটিজিংসহ অনৈতিক ও অসামাজিক কাজ বন্ধ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু তারা তা না করে উল্টো জামাত-শিবিরের নেতা-কর্মী যারা আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে এ সকল অন্যায়, অনৈতিক ও অসামাজিক কাজ থেকে দূরে থাকছে এবং অন্যকে দূরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, গড়তে চাচ্ছে মদিনার মত একটি সুন্দর সমাজ- তাদের দমন করাই প্রধান কাজ বানিয়েছে। মেসে-বাসাবাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মিছিলে বাঁধা দান ও খুনের নেশায় আক্রমণ, চোরাগুপ্তা হামলা, অপহরণ প্রভৃতি নিকৃষ্ট পন্থায় ইসলামপ্রিয় শিবিরকর্মীদের ওপর মধ্যযুগীয় বর্বরতার এক কালো দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে চলেছে। এ দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের প্রাণের
সম্পদ পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগ করতেও পিছপা হয়নি নরপশুরা। আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবিধান ইসলামকে জানা ও বোঝার জন্য আলেমদের সুচিন্তিত মতের আলোকে রচিত বিভিন্ন ইসলামী বইপুস্তককে তথাকথিত "জিহাদী বই" বলে প্রচারণা চালায় এবং তা সংরক্ষণ করার অজুহাত এনে গ্রেফতার করা হয় ১৩-১৪ বছরের বালক থেকে শুরু করে জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হওয়া বৃদ্ধদেরকেও। জেলের অন্ধকারে আটকে রেখে, রিমান্ডের নামে নির্মম অত্যাচার চালিয়ে অসংখ্য মা আর বাবার চোখের পানির ধারাকে প্রবাহমান রেখেছে জালেম নরপশুরা। ইসলামের ধারক ও বাহক এইসব নিরীহ যুবকদের ওপরে শাসকদলের জিঘাংসার স্বরূপ দেখে আপনিও চোখের পানি আটকে রাখতে পারবেন কি?। এ সরকার ২৮
অক্টোবরের মামলা রাজনৈতিক বিচেনায় প্রত্যাহার করলেও, শহীদের মায়েদের বিনিদ্র রজনীর চোখের পানি কি রুখতে পারবে? শীর্ষ নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সারাদেশে গ্রেফতার হয়েছে ৫০০০ (পাঁচ হাজারের) অধিক নেতাকর্মী, মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে শত শত।

পুলিশ মিথ্যা মামলা তৈরী করতে করতে প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে, তার প্রমাণ জামায়াতের ঢাকা সিটি আমীর জননেতা রফিকুল ইসলাম খাঁন, জেলে থাকা অবস্থায় তার নামে গাড়ী পোড়ানো মামলা রুজু করা কত বড় মিথ্যা চারের প্রমাণ। অবশ্য পরে কোর্টে পুলিশ এর জন্য দারুণ লজ্জা পেয়েছে। এ কেমন গণতন্ত্র! কেমন সভ্যতা! যাঁরা নিজেদের জীবনটাই উৎসর্গ করেছেন মানবতার ধর্ম ইসলামকে সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে, তাঁদের বিরুদ্ধেই যখন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার কল্পিত অভিযোগে মিথ্যা মামলা হতে দেখা যায় এবং তার কারণে কারান্তরীণ হতে হয়, তখন বাংলাদেশে ইসলামের ভবিষ্যৎ আসলে কোন দিকে এগুচ্ছে। তা নিয়ে সকলেই শঙ্কিত। কথিত ওই মামলায় তাঁদের জামিন হলেও
রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশে আরোও কয়েকটি মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডের নামে চরম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সাজানো মিথ্যাচারের কল্পকাহিনী। অবশ্য আজ গোয়েবলস জীবিত থাকলে
আওয়ামীলীগের শিষ্যত্ব গ্রহণ করতো।

সরকারের দেশ, জাতি, স্বাধীনতা ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কোনো আওয়াজ তুলতে না পারে সেজন্য জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কারাগারে আটক রেখে জামায়াত-শিবিরকে নির্মূল করতে চায়। এভাবে একে একে সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে নির্মূল করে আওয়ামী সরকার একদলীয় বাকশাল কায়েম করে বাংলাদেশকে একটি করদ রাজ্যে পরিণত করবে। সরকারের এ অভিযান শুধু জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে নয়। এ অভিযান দেশ-জাতি, গণতন্ত্র ইসলাম ও দেশপ্রেমিক সকল মানুষের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই জালেম সরকার নারী উন্নয়ন নীতি ও ফতোয়া বন্ধের নামে কুরআন –সুন্নাহ ও ঈমান-আকীদার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তাই আসুন, আওয়ামী লীগের
ফ্যাসিবাদের হাত থেকে দেশ, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ঈমান ও আকীদাকে রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলি। তাইতো ১৯৪৭ সালে আমেরিকার হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাকলোয়েন চার্লস মানুষের দূর্দশার চিত্র আঁকতে গিয়ে বলেন, '' ইতিহাসের কোন যুগেই কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এত কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়নি, প্রশাসনের সামনে বিচার বিভাগ কখনো এতটা অসহায়ত্ব বোধ করেনি, এ বিপদ অনুভব করা এবং তার প্রতিকারের ব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্বে কখনো চিন্তা করার এতটা তীব্র প্রয়োজন দেখা দেয়নি- যতটা দেখা দিয়েছে আজকের এ সময়ে। আজ আওয়ামী দূ:শাসনের এই মানব রুপি অক্টোপাসের জুলুম নির্যাতনের নিষ্পেষণে ক্ষত বিক্ষত আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। আমরা সকলেই যেন আজ সেই স্বাধীন দেশের বন্দী নাগরিক!