আমরা সবাই মুখে অনেক বড় বড় কথা বলি দেশকে নিয়ে। দেশের উন্নতি নিয়ে ভাবতে ভাবতে কপালে ভাঁজ ফেলে দেই। দেশের প্রতি মমত্ব আর ভালোবাসা দেখিয়ে উতলিয়ে উঠি। কিন্তু সঠিক কাজটি করতে বললেই আসল মুখোশটা বের হয়ে আসে। সাধারন জনগণকে বলছি না। সাধারন মানুষতো বরং ভুক্তভোগী। তাঁদের বড়জোর মানসিক বিকৃতি হয়েছে দালান ধসে পিষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষ দেখে, দগ্ধ পোড়া মানুষ দেখে, রক্তাত্ত মানুষ দেখে। গা সওয়া হয়ে গেছে অন্যায় আর অবিচার দেখতে দেখতে। প্রতিবাদের ভাষা দিয়ে এখানে কিচ্ছু হয় না। জীবন ভিক্ষা চেয়েও কিচ্ছু হয় না। এসব মুখবন্ধ করে সয়ে নেওয়াটাই যেন কপালের লিখন।
আমি বলছি এ দেশের উন্নতির চরম শেখরে বসে থাকা মানুষগুলর কথা। যারা দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখানোর নামে স্বপ্ন বিক্রি করে। যারা মুখে অনেক বড় কথা বলে, প্রতিস্রুতি দেয়, মিথ্যে আশ্বাস দেয় সাথে থাকার কথা বলে। যারা আপনার করা কোন শ্রেষ্ঠ কাজকে নিজেদের বলে চালিয়ে দেয় আর প্রতিপন্ন করে সে কত বিশাল কাজ করছে দেশের জন্য!
বিকেন্দ্রীকরণের কথা আমরা সবাই বলি। কিন্তু কাজে কর্মে কতটুকু সেটার বাস্তবায়ন ঘটছে? কাজে নামলে প্রথমে আপনাকে বাহবা দেবে, অনেক বড় কথা শোনাবে, প্রতিস্রুতি দেবে সাথে থাকবার। কিন্তু প্রক্রিতপক্ষে বাস্তবতা হচ্ছে ব্যাবসার মুখ না দেখলে কেউ এগিয়ে আসবে না। সবটাই এখন ব্যাবসায়িদের দখলে চলে গেছে। এখানে সত্যিকারের দেশপ্রেম বলে কিচ্ছু নেই। সম্মিলিতভাবে কেউ যে নিঃস্বার্থে কিছু করবে দেশের জন্য, এক্টিও নজিরে নেই। উপরন্তু, কেউ কিছু বললেই তাকেও চুপ করিয়ে দেবার সকল ব্যাবস্থা তাঁদের আছে।
বিগত দশ বছরের হিসেবের খাতাটা একটু খুলে দেখুন। শ্রেণী বৈষম্য কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে একটু ভাবুন। দেশের বড়লোকেরা আরও বড়লোক হয়েছে গরীবেরা হয়েছে আরও গরীব। উচ্চ শ্রেণীর মানুষদের ব্যাংকক থাইল্যান্ড ছাড়া শপিং হয় না। কথায় কথায় বিদেশ যাওয়া আসাটা কোন ব্যাপারই না।হ্যা, গরীবেরা ভাতে পেটে খেয়ে বাঁচছে ঠিকই, কিন্তু এ শুধুই বেঁচে থাকা কীটপতঙ্গের যায়গা দখল করে। কিন্তু কৃষকেরাতো আর ডিজিটাল হয়ে উঠেনি যে আইটিতে ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে আয় করবে।উপরন্তু তাঁদের ধানি জমিতে হয়েছে ইটের ভাটা। ফসল, গাছপালা, পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে দিনের পর দিন। কখনো হারিয়েছে ভিটা নাদীর ভাঙ্গনে, কখনো হারাচ্ছে বিঘার পর বিঘা ধানের জমি।
এই শ্রেণী বৈষম্য কাটিয়ে উঠা একদিনে সম্ভব নয়। কিন্তু সম্ভব। যখন সবাই ট্যাক্স দিবে এবং যখন সরকার ট্যাক্স এর টাকা জনগনের কাছেই সঠিকভাবে ফিরিয়ে দেবে, সবাই ন্যায্য মুল্যের জন্য দাবি করবে, যখন বুঝবে উঁচু স্তরের মানুষগুলোর চেয়ে সাধারন মানুষগুলো সংখ্যায় অনেক বেশী, যখন শুষে নেবার সকল উপায় বন্ধ করা যাবে। শ্রেণী বৈষম্য তখনই দুর হবে যখন নিজের ন্যায্য পাওনা চাইতে শিখব আমরা। যখন অন্যের প্রতিশ্রুতির আশায় আর বসে না থেকে নিজেদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কিছু করতে পারব আমরা। সবাইকে একে অন্যের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশের জন্য কিছু করা মানে কিন্তু ঘুরে ফিরে নিজের জন্যই করা।