রামপাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চাই, চাই সুন্দরবন

নিতাই বাবু
Published : 2 August 2016, 11:06 PM
Updated : 2 August 2016, 11:06 PM

অনেকে মনে করে থাকেন, ও অপরকেও বোঝান যে, প্রস্তাবিত সুন্দরবনের রামপালের কয়লাভিত্তিক তপ-বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র হচ্ছে, পরিবেশগত বিপদসীমার মধ্যে একটি সম্ভাব্য স্থাপনা ৷ এভাবে সহজ-সরল মানুষদের বোঝায়ে ক্ষিপ্ত করে তুলছে, যা একেবারেই নিজ বাড়িতে আগুন লাগানোর মত কাণ্ড ৷ এই সুযোগো, সুযোগসন্ধানীরা বোনে যাচ্ছে নেতা, লাগছে ভাইয়ে-ভাইয়ে লড়াই, চলছে হানাহানি-মারামারি, চলছে দেশজুরে বহুরকম অপপ্রচার ৷ সবর হচ্ছে ফেসবুক, গুগলপ্লাস, টুইটার সহ সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ সাইট ৷ অনেকে দেশের মালিকানা দাবি করেও এর প্রতিবাদ করছে ফেসবুকে ও গুগলপ্লাসে ৷ তাঁরা বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র চায় না, চায় সুন্দরবন ৷ তাঁরা দেশপ্রেমী নয়, তাঁরা পরিবেশপ্রেমী ৷

১৯৪৬ সালে নারায়নগঞ্জের বর্তমান বন্দর থানাধীন লক্ষণখোলার আদর্শ কটন মিল্ স এর নির্মাণ কাজ চলছিল, তখন ওই এলাকার মুরুব্বীরা মিল্ স তৈরির বিরোধীতা করেছিল ৷ পরবর্তীতে মিলের মালিক, এলাকার মুরুব্বী ও জনগণকে বহু তোষামোদ করে, বহু শর্ত মেনে মিল স্থাপিত করে ৷ যখন মিল চালু হয়ে উৎপাদনে যাত্রা শুরু করল, তখন এলাকার মানুষ মিলে কাজ করার জন্য মহাআন্দোলন শুরু করে দিল ৷ এলাকার লোকদের কাজে নিতে হবে সবার আগে, না হয় মিল চলবে না ৷ এখন কথা হচ্ছে, যারা এখানে মিল তৈরি করতে দিবেনা, তাঁরা আজ সেই মিলে কাজ করার জন্য আন্দোলন অন্যথায় মিল চলতে দিবেনা ৷ এই হলো আমাদের দেশের বুঝনেওয়ালারা ৷ তখনকার দিনে সেই একটা মিল দিয়ে, মিলের মালিক তিনটা মিল করেছে ৷ যথাক্রমে: আদর্শ কটন মিল্ স, ১নং ঢাকেশ্বরী, ২নং ঢাকেশ্বরী, তখনকার সময় এশীয়া মহাদেশের মধ্যে ১নং ঢাকেশ্বরী কটন মিল্ স ছিল সেরা বস্ত্র কারখানা, যার কাপড় ছিল এশীয়া মহাদেশের সেরা কাপড় বা সেরা বস্ত্র ৷ এসব কথাগুলো আমার মা'-বাবার মুখে শোনা ৷ সেই অবস্থার, এক অবস্থা এই রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র ৷ হতে পারে, আজ যারা এর বিরোধীতা করছে, কাল তাঁরা আন্দোলন করবে চাকরি করার জন্য, কাজ করার জন্য ৷

কেন এই উন্নয়নমূলক কাজে বিরোধীতা? তা বোঝা বড় দায় ৷ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা ৷ আমরা যারা শহরে বসবাস করছি, আমরাই বুঝি বর্তমানে বিদ্যুতের কী প্রয়োজন আমাদের ৷ বিদ্যুৎ ছাড়া শহরের মানুষের একটা মুহুর্তও চলে না ৷ লোড্‌শেডিং এর কবলে পড়লে বোঝা যায় কত ধানে কত চাউল ৷ সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের সাথে একাত্মতা পোষণ করে, বেসরকারী বিদ্যৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলিও হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ৷ এরপরেও জনগণের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য সরকারের, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হচ্ছে ৷

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরের সময় যে, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, সেখানে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালনের একটি প্রস্তাব ছিল৷ সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতে ২০১২ সালে সুন্দরবনের নিকটবর্তী রামপালে দুইটি ৬৬০ ইউনিট মিলে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা ভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের ন্যাশনাল থারমান পাওয়ার কর্পোরেশনের (এনটিপিসি) সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ৷ সেই থেকেই এর বিরোধীতা করে আসছে একশ্রেনীর সম্মানিত পরিবেশবাদিরা ৷ তাঁরা সেখানকার মানুষদের ধারণা দিচ্ছে যে, এই কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে, এখানে মানষ থাকতে পারবে না, পশুপাখি থাকবে না, সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে, পরিবেশ বিপর্যয় হবে ইত্যাদি ইত্যাদি ৷

পরিবেশবিদের মতে, সুন্দরবনের বাপার জোন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এই কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র অধুনিক পদ্ধতিতে নির্মিত হবে, ফলে এতে সুন্দরবনের ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই, এবং পরিবেশ দূষণও হবে কম ৷ সুন্দরবনের ওপর এই প্রকল্পের কোন ক্ষতিকর প্রভাব পরবে না ৷ বছরের মে' জুন মাসের সময় ছাড়া সরাবছরই উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে বায়ু প্রবাহিত হয় ৷ এই প্রকল্পে তিন শ' মিটার উচ্চতার চিমনি ব্যবহার করা হবে, বছরের সামান্য যেটুকু কার্বনড্রাই অক্সাইড ও বিভিন্ন গ্যাস বের হবে তা বাতাসের উচ্ছতর স্তরে চলে যাবে ৷ ফলে সুন্দরবনের ওপর কোন ধরণের প্রভাব পড়বে না ৷

একটা দেশের সরকার চাইবে না, নিজ দেশের ক্ষতি হোক, পরিবেশের ওপর বিপর্যয় নেমে আসুক ৷ সরকার চায় দেশের উন্নয়ন, সেবা করতে চায় জনগণের ৷ সরকার একটা প্রকল্পের কথা ভাবলেই আগে দেখে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিক, পরিবেশবান্ধব হবে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য নিয়োগ করে বিশেষজ্ঞ দল ৷ বিশেষজ্ঞদের অভিমত নিয়েই সরকার ভেবেচিন্তে অগ্রসর হতে থাকে প্রকল্পের কাজে ৷

সুন্দরবনের রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে সেখানকার দৃশ্যপট ৷ এলাকার কর্মস্থান বাড়বে, মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি হবে ৷ চিকিৎসা সেবার সুবিধা সহ বিভিন্ন ধরণের সুযোগসুবিধা সৃষ্টি হবে এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণ কেন্দ্রে পরিণত হবে ৷ সেই সাথে বদলে যাবে এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের ভাগ্য ৷ আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন, দেশের উন্নতি, বদলে যাক মানুষের ভাগ্য ৷ চাই না সৎ কাজে বিরোধীতা, চাই রামপাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, চাই সুন্দরবন ৷

(ছবি সংগ্রহ গুগল)