১৫ই আগস্ট জাতির জনকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাস

নিতাই বাবু
Published : 15 August 2016, 02:12 AM
Updated : 15 August 2016, 02:12 AM

১৯৭১ সালে যখন শুরু হয় পাক হানাদার বাহিনর জ্বালাও পোড়াও আর মেশিনগান, এলএমজির গুলির শব্দ, তখন আমি খুব ছোট, বয়স আনুমানিক ৮/৯ বছর ৷ আমাদের বাড়িতেই ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প, তারা সংখ্যায় ছিল ১০/১২ জন ৷ দিনে থাকত ছদ্মবেশি, রাতে তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন জায়গায় চালাতো অপারেশন ৷ আমাদের বাড়ি ছিল নোয়াখালীর বজরা রেলস্টেশনের পশ্চিমে মাহাতাবপুর গ্রামে।

সন্ধ্যার পর আমার জেঠামশাই আর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বসে গল্প করতেন, তখন আমি তাদের মাঝখানেই বসা থাকতাম, আর কথাগুলো শুনতাম খুব মন দিয়ে ৷ বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলতো, যদি দেশ স্বাধীন করতে পারি, আর শেখ মজিবুর রহমানকে খোদায় যদি বাঁচিয়ে রাখে, তবে আমাদের দেশ হবে পৃথিবীর সেরা দেশ ৷ বীরমুক্তিযোদ্ধারা আমাদের শান্তনা দিয়ে বলতেন, আপনাদের বেশি দিন কষ্ট করতে হবে না, শিগ্‌গির দেশ আমরা সম্মিলিত ভাবে স্বাধীন করে ফেলব ৷

এইসব কথাগুলো শুনতাম আর ভাবতাম, দেশ স্বাধীন হলে হয়তো কোন দিন শেখ মজিবুর রহমানের সাথে দেখা হবে, আমার বাবাতো নারায়নগঞ্জেই চাকরি করে, সেখানে গেলে এই মহান নেতার সাথে দেখা হবেই হবে ৷ দেশ স্বাধীন হল, বাবা নারায়নগঞ্জে ফিরে গেলেন, চাকরিতে যোগদান করলেন ৷ যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প দেওয়ার অপরাধে আমরা আর আমাদের বাড়িতে বেশি দিন থাকতে পারি নাই ৷ শুরু হল ক'দিন পরপর ডাকাতি আর চুরি ৷ বাধ্য হয়ে বাবা নামমাত্র মূল্যে সেই ভিটেমাটি বিক্রি করে দিয়ে ১৯৭২ সালের শেষ দিকে আমারা নোয়াখালী ত্যাগ করে নারায়নগঞ্জে চলে আসি ৷

নারায়নগঞ্জে এসে স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়া-লেখা শুরু করলাম, মাঝে মাঝে রেডিও'তে এই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ভাষণ শনতাম, আর ছোটবেলার ভাবনার কথা মনে করতাম, যদি একদিন দেখা পেতাম জীবনটা স্বার্থক হতো ৷ হঠাৎ ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্টের কালরাতে একদল বিপদগামী সেনা সদস্যরা আমার সব আশা আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ করে দিলো, সেই আশা তো পূরণ হলো'ই না, বরং হয়ে গেলাম একজন বেঈমান বাঙালি ৷ ওইসব বেঈমান সেনা সদস্যরা আমাদের গোটা জাতিকে বেঈমান বানিয়ে রাখলো এই মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের কাছে ৷

যার ডাকে সারা দিয়ে লক্ষ বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ল, পাক হানাদার বাহিনীর ওপর স্বাধীনতার জন্য, যেই মহান নেতার জন্য পেয়েছি একটা স্বাধীন দেশ ৷ সেই মহান নেতা সহ তাঁর সপরিবারকে কীভাবে বুলেটবিদ্ধ পারলাম, এটাই শুধু মনে প্রশ্ন জাগে প্রতি বছর এই আগষ্ট মাসের ১৫ তারিখে ৷ আমরা বেঈমান, আমরা ঋণী এই মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের কাছে ৷ ক্ষমা করে দাও হে, মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, তুমি চির অমর হয়ে থাক আমাদের অন্তরে ৷