একটা মৃতদেহ বা লাশের প্রতি আমাদের এত ঘৃণা কেন?

নিতাই বাবু
Published : 8 Sept 2016, 05:37 PM
Updated : 8 Sept 2016, 05:37 PM

পৃথিবীতে জীবিত অবস্থাই মানুষ পাপ-পুণ্যের কাজ করে থাকে ৷ পাপের শাস্তি আর পুণ্যের পুরস্কারের মধ্যে দিয়েই মানুষের কর্মের বিচার কার্য শেষ হয়, তারপর মৃত্যু ৷ লোক মুখে ও বুড়ো-বুড়িদের মুখে শোনা যায়, পাপের বিচার শেষ না হতে যদি আমার মৃত্যু হয়, তবে আমার অবশিষ্ট পাপ আমার সন্তানদের উপর গচ্ছিত হয় ৷ অর্থাৎ: আমার অবশিষ্ট পাপ আমার সন্তানেরা ভোগ করতে হবে ৷

কথায় আছে "পাপে বাপকেও ছাড়ে না", আর গানের কথায় আছে, "মানুষ মরিলে তবে বিচার হবে কার" ৷ অর্থাৎ: আমি মরে গেলেও আমার রক্ত মরে না, আমার রক্ত মানে আমার সন্তানেরা ৷ যখন আমার মৃত্যু হবে, তখন আমি আর আমি থাকবো না, আমি হয়ে যাব একটা মরা লাশ ৷ নিতাই বাবু মারা গেলে, লোক আসবে দলে-দলে, সবাই বলবে নিতাই বাবুর লাশ দেখতে যাব ৷ তখন আর নিতাই বাবু কেউ বলবে না, বলবে নিতাই বাবুর লাশ ৷

ছিলাম নিতাই বাবু, হয়ে গেলাম লাশ ৷ মানুষ জীবিত অবস্থায় পাপ করে, মরা লাশ তো' পাপ করে না! তাহলে একটা পাপিষ্ঠের লাশের প্রতি মানুষের এত ঘৃণা কেন? একটা মরা লাশকে গ্রহণ করতে মানুষের এত অনিচ্ছা কেন? তাহলে কী ওই লাশেরও আবার বিচার হওয়া দরকার? আমি বুঝে বা না বুঝে পাপ করেছি, পাপের বিচার হয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড ৷ মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে ৷

আমার কুকর্মের বিচার হলো, আমার দেহখানা লাশ হলো ৷ সেই লাশের তো কোন অপরাধ নেই, একটা মরদেহ তো একটা পচনশীল মরদেহ, পচে গন্ধ বেরুলেই তো আমাদের বিপদ ৷ আমাদের দরকার সেই মরদেহ বা লাশটাকে তাড়াতাড়ি করে সৎকার করা, মৃত:ব্যক্তি যেই ধর্মেরই হোক, সেই ধর্মের নিয়ম মত লাশটার সমাধি করা ৷

আমি কোন ধর্ম বিশেষজ্ঞ নই, মৃত্যুর পর আমার দেহখানাও একদিন মরদেহ বা লাশ হবে ৷ তাই আমি আমার কথা চিন্তা করেই বলছি ৷ আমাদের দেশে এই পর্যন্ত কয়েকজনের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড হয়েছে , মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ার পর দেখা গেছে যে, দন্ডিত ব্যক্তির মরদেহ নিয়ে নানারকম ঘৃণা, অনিচ্ছা, অনীহা প্রকাশ করা হয় ৷ গত কয়েকদিন আগে আমাদের দেশে এক বদর নেতার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় ৷ এই মৃত্যুদন্ডের মধ্য দিয়ে জাতির কলঙ্ক-মোচন হয়েছে ৷ ওই ব্যক্তির জন্মস্থান ছিল মানিকগঞ্জে, মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ার পর বদরনেতার মরদেহ তাঁর জন্মস্থানে না আনার দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে মানিকগঞ্জবাসি ৷ বলা হয় এই কুলাঙ্গারে লাশ এখানে কিছুতেই আনা হবে না ৷ বলতে শোনা যায়, এখানে তাঁর লাশ কবর দেওয়া হবেনা, এখানে ওই পাপিষ্ঠের মরদেহ আনতে দিবো না ৷

একটা লাশ বা মরদেহের প্রতি এরকম করা কি আমাদের ঠিক? আমরা মানুষ, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদালত নাকী আমাদের বিবেক! তাহলে আমরা কী বিবেক নিয়ে চলছি? পাপকে ঘৃণা কর পাপীকে নয় ৷ মানুষ জীবদ্দশায় পাপী-তাপী যাই থাকুক না কোন, মৃত্যুর পরে সেই লাশ বা মরদেহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, মরদেহ বা লাশটার সৎকার করা বা সবদাহ করা আমাদের সকলের কর্তব্য ৷