১০ টাকা কেজি দরে চাউল খাওয়ানোর কথা রাখলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

নিতাই বাবু
Published : 24 Sept 2016, 11:07 AM
Updated : 24 Sept 2016, 11:07 AM

সেদিন টিভির খবরে দেখলাম, ১০টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা রাখলেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেরিতে হলেও গত ৭সেপ্টেম্বর বুধবার কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ইউনিয়ন থেকে হতদরিদ্রের জন্য এই 'খাদ্যবান্ধব' কর্মসূচীর শুভউদ্বোধন করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৮সালের জাতীয় নির্বাচনি ইস্তেহারে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ১০টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পর সেই কথা রাখতে পারেনি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। তখন বিরোধী দলের নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সরকারকে, ৭/৮বছর পর হলেও এখন তা বাস্তবায়ন হল ১০টাকা কেজি চাল।

সেই নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতেই তালিকাভুক্ত ১২৫৩ জন হতদরিদ্রদের মাঝে এই ১০টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল তুলে দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। শ্লোগান ছিল "শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ"। সেইসাথে ঘোষণা দেওয়া হয় সরকার ৫০ লাখ হতদরিদ্র মানুষকে মাসে ৩০ কেজি করে, পাঁচ মাস ১০ টাকা কেজি দরে চাল দিবে। এতে বছরে সরকারের দুই হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এর আওতায় বছরে সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ করা হবে, এতে বোঝা যায় দেশকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতায় আনা হল দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার।

বিশ্বের নানা দেশে সামাজিক সুরক্ষা চালু আছে, আমাদের দেশে সেরকম না হলেও সরকারের নেয়া এই ব্যবস্থা কিছুটা হলেও হতদরিদ্র মানুষের জীবনে নতুন আশার আলো বয়ে আনবে আশা করা যায়। যারা হতদরিদ্র কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের ১০ টাকা কেজি দরে 'খাদ্যবান্ধব' কর্মসূচীর মাধ্যমে মাসে ৩০ কেজি করে চাল মানে অনেক কিছু। আগেকার সময় শোনা যেত উত্তরবঙ্গে মঙ্গার কথা। মঙ্গার কথা শুনলেই গা শিউড়ে উঠত, এখন কয়েক বছর ধরে সেই মঙ্গার কথা শোনা যায় না। এর মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিলো 'খাদ্যবান্ধব' কর্মসূচী, আশা করা যায় উত্তরবঙ্গ চিরতরে মঙ্গা মুক্ত হল। এই কর্মসূচীর ফলে দেশের দুর্ভিক্ষ, মঙ্গা, অনাহার বিলুপ্তি হবে।

অনাহারে অর্ধাহারে মানুষের মৃত্যুর খবর আর খবরের কাগজে আসবে না আশা করি। কারণ ৫০ লাখ সংখ্যা কম নয়, যা হাতে গুনে শেষ করা যাবে না, কিছুটা হলেও আমরা দারিদ্র্য মুক্ত হয়েছি। দারিদ্র্য আর ক্ষুধা যে কত কষ্টের তা থেকেও মানুষ মুক্তি পাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য হল যে, দেশের একটা মানুষও যাতে অনাহারে মারা না যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই 'খাদ্যবান্ধব' কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয়েছে।

দূর্ভিক্ষ ১৯৭৪ সাল ৷

আমার ১৯৭৪ সালের কথা এখনো মনে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে, সেসময় আমার বয়স ছিল মাত্র ১২ বৎসর। দেখেছি দুর্ভিক্ষ দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষদের ক্ষুধার আর্তনাদ। আমার মাকেও দেখেছি আটার জাউ রান্না করে আমাদের খেতে দিয়েছে, চাউলের সাথে অর্ধেকের বেশি আলু কুচি দিয়ে ভাত রান্না করেছে। তখন বুঝি নাই, এখন বুঝি, তখন ছিল যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটা দেশ বাংলাদেশ। পোড়াবাড়ি সাজিয়ে তুলতেও একটু সময়ের প্রয়োজন হয়, তখন ছিল পোড়াবাড়ি সাজানোর সময়, আর তখনই দেখা দিল দুর্ভিক্ষ। সেই দুর্ভিক্ষ যেন আর কখনো এদেশে দেখা না দেয় সেই কামনায় থাকি সারাক্ষণ।এখন আশা করা যায়, বর্তমান সরকারের এই 'খাদ্যবান্ধব' কর্মসূচীর মাধ্যমে, এই দেশ থেকে দুর্ভিক্ষ আর মঙ্গা চিরতরে বিদায় করিয়ে দিচ্ছে। পরিশেষে একটা কথা না বললে আর হয় না, সেই কথা হল, এই কার্ডবিত্তিক 'খাদ্যবান্ধব' কর্মসূচীতে যেন কোথাও দলীয় প্রভাব বা পক্ষপাতিত্ব না হয় সেদিকে সরকার কে অবশ্যই নজর দিতে হবে, তাহলেই সরকারের এই 'খাদ্যবান্ধব' কর্মসূচী আরো দ্বিগুণ মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। জয় হোক বাংলার মেহনতি মানুষের।

ছবি সংগ্রহ: গুগল।