স্মার্ট কার্ড ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ

নিতাই বাবু
Published : 7 Oct 2016, 06:58 PM
Updated : 7 Oct 2016, 06:58 PM

সেই ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে আগে, এদেশের আওয়ামী লীগ একটা দাবিতেই আন্দোলন করেছে অনেকদিন ৷ সেই দাবিটি ছিল শুধু জনগণের ভাত-ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার । দাবি পূরণ হলো, জাতীয় পরিচয়পত্র ( ন্যাশনাল আইডি কার্ড) করার কার্যক্রম শুরু হলো, সেই ২০০৮ সালে সেনা স্বমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ৷ বিভিন্ন পত্রপত্রিকার হিসাব অনুযায়ী জানা যায়, তখন থেকে এপর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৮ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৮ জন নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পায় ৷

সেসময় দেখেছি বহু লোককে বহু কথা বলতে, অনেকের মুখে শুনেছি এই জাতীয় পরিচয়পত্র ( ন্যাশনাল আইডি কার্ড ) দিয়ে কী হবে? এটা ধুয়ে কী পানি খাব? কেউ আবার যাই-যাচ্ছি বলে জাতীয় পরিচয়পত্র ( ন্যাশনাল আইডি কার্ড ) করার সময়ও শেষ করে ফেলেছে, তখন আর করতে পারে নাই ৷ যারা এই জাতীয় পরিচয়পত্র ( ন্যাশনাল আইডি কার্ড ) করতে পারে নাই তাঁদের শুধু কপাল চাপড়াতে দেখেছি ৷ হায় হায় কী করলাম, এখন কী করি, কীভাবে করি, এমন করার কারণ হলো যে, জাতীয় পরিচয়পত্র ( ন্যাশনাল আইডি কার্ড ) ছাড়া তো' কিছুই হয় না ৷

চাকরি হয় না, ভোট দিতে পারে না, ঋনও কোন ব্যাংক দেয় না, জায়গা বিক্রি করতে পারে না, পাসপোর্ট করতে পারে না মোট কথা জাতীয় পরিচয়পত্র ( ন্যাশনাল আইডি কার্ড ) ছাড়া কিছুই হয় না ৷ অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্র না পাওয়া কিছু মানুষ এই আইডি কার্ড করার জন্য বা পাবার জন্য অনেক সময় জালিয়াতি চক্রের দ্বারস্থও হয়েছে ৷ কেন-না এই জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া চাকরি নেই, পাসপোর্ট নেই, সম্পত্তি কেনাবেচা নেই, তাই বাধ্য হয়ে চুপিসারে একটা আইডি কার্ডের জন্য জালিয়াতি চক্রের দ্বারস্থ হওয়া ৷ সেই জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা মোটা অংকের বিনিময়ে এই জাতীয় পরিচয়পত্র হুবহু নকল করেও দিয়েছে অনেক নাগরিকদের, যা বিভিন্ন সংবাদপত্রের মাধ্যমে জেনেছি ৷ অনেক সময় ওইসব জালিয়াতি চক্রের অনেক সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর হাতে ধরাও পরেছে ৷

নির্বাচন কমিশন আবার যখন জাতীয় পরিচয়পত্র ( ন্যাশনাল আইডি কার্ড ) হালনাগাদ করার ঘোষণা দিলেন, তখন এই জাতীয় পরিচয়পত্র ( ন্যাশনাল আইডি কার্ড ) করার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ল সেন্টারে সেন্টারে ৷ এখন মানুষ বুঝতে পেরেছে জাতীয় পরিচয়পত্র ( ন্যাশনাল আইডি কার্ড ) কী জিনিষ ! যাদের এই জাতীয় পরিচয়পত্র নাই, তাদের দেখেছি শুধু হায় হায় করতে, বলতে শুনেছি, খামখেয়ালী করে কী ভুল যে করলাম, এখন একটা আইডি কার্ডের জন্য কোন জায়গায় একটা চাকরি পাই না ৷ এখন আর এই ভুল আর খামখেয়ালী কেউ করবে না আশা করি ৷ বাংলাদেশের মানুষ বুঝেছে এই জাতীয় পরিচয়পত্রের কদর কতখানি ৷

বর্তমানে শুরু হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত মেশিন রিড্যাবল ন্যাশনাল আইডি কার্ড, যাকে বলা হয় স্মার্ট কার্ড ৷ বিদ্যমান পেপার লেমিনেটেড কার্ডের স্থলে ১০ কোটি মানুষের মাঝে এই উন্নত স্মার্ট কার্ড বিতরণ করবে দেশের নির্বাচন কমিশন ( ইসি) ৷ এর ধারাবাহিকতায় গত ০২/১০/২০১৬ইং তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথমে নির্বাচন কমিশনার ( সইসি ) কাছে মহামান্য রাষ্ট্রপতি'র স্মার্ট কার্ড হস্তান্তর করে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্ড বিতরণের উদ্বোধন করেন ৷ এই কার্ড বিতরণের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আরো একটি মাইলফলক স্থাপিত হলো ৷ শুরু হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া, আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ চলা ৷

জানা যায়, এই স্মার্ট কার্ডের মধ্যে থাকা চিপ বা তথ্যভান্ডারে ৩২ ধরণের তথ্য থাকবে যা মেশিনে পাঠযোগ্য হবে ৷ একজন কার্ডধারী ব্যাংকিং, টিআইএন, ড্রাইভিং, লাইসেন্স ও পাসপোর্টসহ ২২ ধরণের সেবা পাবে ৷ এই স্মার্ট কার্ড নাগরিক সেবায় হয়ে থকবে এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আর কোন দলীয় সরকার করতে পারেনি ৷

স্মার্ট কার্ড কী কী কাজে বাধ্যতামূলক?
১; আয়করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর পাওয়া ৷
২; শেয়ার আবেদন ও বিও হিসাব খোলা ৷
৩; ড্রাইভিং লাইসেন্স করা ও নবায়ন করা ৷
৪; ট্রেড লাইসেন্স করা ৷
৫; পাসপোর্ট করা ও নবায়ন করা ৷
৬; যানবাহন রেজিস্ট্রেশন ৷
৭; চাকরির আবেদন ৷
৮; বিমা স্কিমে অংশগ্রহণ ৷
৯; স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ৷
১০; বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন ৷
১১; ব্যাংক হিসাব খোলা ৷
১২; নির্বাচনে ভোটার শনাক্তকরণ ৷
১২; গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ ৷
১৩; সরকারি বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন ৷
১৪; টেলিফোন ও মোবাইল সংযোগ ৷
১৫; সরকারি ভর্তুকি ৷
১৬; সাহায্য ও সহায়তা ৷
১৭; ই-টিকেটিং ৷
১৮; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ৷
১৯; আসামী ও অপরাধী শনাক্তকরণ ৷
২০; বিজনেস আডেন্টিফিকেশন নম্বর পাওয়া ৷
২১; সিকিউরড ও ওয়েব লগে ইন করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর লাগবে ৷ তবে আইনগতভাবে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এখনো বাধ্যতামূলক করা হয়নি৷

শুধু নাগরিকদের পাওনা সেবা সমূহ জনগণের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্যই, সরকারের এই পদক্ষেপ প্রমাণ রাখে ৷ বর্তমান সরকারের গৃহিত পদক্ষেপগুলো সত্যি প্রশংসনীয় ৷ সরকারের এসব জনকল্যাণ পদক্ষেপে ধীরে ধীরে আমরা চলমান মধ্য আয়ের দেশ হতে উন্নত দেশে পরিণত হবো আশা করি ৷ এমন একদিন আসবে, সেদিন দেখবো আজ আমরা যেসব দেশে গিয়ে কাজ করছি, বিদেশে কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছি, সেসব দেশের নাগরিক আমাদের দেশে এসে কাজ করছে ৷ সেদিন বেশি দূরে নয়, অতি নিকটে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি দ্রুতগতিতে ৷

ছবি সংগ্রহ; গুগল ও বিডি নিউজ ৷