জাবিতে নাগরিক সাংবাদিক আড্ডা ছিল স্মরণীয় এক দিন

নিতাই বাবু
Published : 10 Oct 2016, 05:08 PM
Updated : 10 Oct 2016, 05:08 PM

গত ৩০সেপ্টেম্বর বিডিনিউজ ব্লগে একটা পোস্ট করেছিলেন সম্মানিত ব্লগার/লেখক কাজী শহীদ শওকত দাদা ৷ পোস্টের শিরোনামটা ছিল 'সম্মানিত ব্লগার, নাগরিক সংবাদিক-ব্লগার আড্ডায় আপনাকে স্বাগত!' ৷ পোস্টখানা পড়েই আমি মনে-মনে ভাবছিলাম আমাদের ব্লগার আড্ডায় তো' যেতেই হবে, না গেলে কি হয়? এই ভেবে প্রস্তুতিও নিতে শুরু করলাম পরদিন থেকে ৷ দিন যাচ্ছে তো' টেনশন বাড়ছে, একদিকে নিজের সংসার আর অন্যদিকে চাকরি, তারমধ্যে জাবিতে নাগরিক সংবাদিক ব্লগার আড্ডা ৷ অফিসে আগে থেকে বলে কয়ে রেখেছি ৭তারিখ আমার ছুটি লাগবে, যাব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৷ নিজ সংসারেও বলা হয়েছে সেই প্রথম থএকেই, আনন্দ আর টেনশনের মধ্যেই ঘনিয়ে এলো ৬সেপ্টেম্বর, রাত পোহালেই ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ৷

৬ তারিখ রাতেই শুক্রবারের অফিসের সব কাজ সেরে ফেলেছি হুড়হুড় করে, বসকে বললাম কাল শুক্রবার আমার ঢাকা ফেকে ফিরতে অনেক রাত হতে পারে, শুক্রবারের সন্ধাকালীন কাজটা হয়তো আপনাদের সারতে হবে যদি না' আমি সময়মত পৌঁছতে পারি ৷ বসকে বলে-কয়ে অফিস বন্ধ করে বাসায় ফিরলাম রাত ১২টায়, খাওয়াদাওয়া সেরে গিন্নিকে বললাম, আমাকে ভোরবেলা ডেকে দিতে যেন ভুল না করে ৷

গিন্নি শুধু বললো, কাল সপ্তমী পূজা আর তুমি যাচ্ছ ঢাকায় একটা কাজে ৷ গিন্নিকে বললাম, যেখানে যাচ্ছি সেটা পূজার মত হুবহু একটা পূজা, ওই পূজাটাই আমার আগে করতে হয় গিন্নি, গিন্নির আর কোন কথা নেই মুখে, শুধু বললো ঠিক আছে যাও, সুন্দর ভাবে ফিরে এসো প্রভুর নামে ৷

পরদিন সকাল ৭টায় গিন্নি আমাকে ঘুম থেকে ডেকে উঠালেন, কোথায় যেন যাবে তুমি? উঠো তাড়াতাড়ি ৭টা বাজছে ৷ ৬তারিখ রাতেই পরিচি এক রিকশাওয়ালাকে বলে রেখেছিলাম, আমি যেই কথা সেই কাজ, সকাল ৭:৩০মি: ফোন করার সাথে-সাথে যেন চলে আসে ৷

আমি রিকশওয়ালাকে ফোন করার সাথে-সাথেই রিকশওয়ালা ফোন রিসিভ করে বললো,দাদা আমি আসছি এক্ষণি ৷ আমি অত্যন্ত খুশি হলাম রিকশওয়ালার এমুন কাণ্ড দেখে, বুঝলাম ওযেন সারারাত জেগেই ছিল আমার ফোনের অপেক্ষায় ৷ যাই হোক, রিকশওয়ালা বাসার সামনে এসে আমাকে ফোন করলো, আমি তাড়াতাড়ি করে গিন্নির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ব্যাগটা সাথে করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার উদ্দেশে ৷

রিকশা চড়ে সোজাসুজি চিটাগাং রোড আসলাম, রিকশা থেকে নেমে রিকশওয়ালা সহ দুইজনে চা' আর বিস্কুট খেলাম, পরে রিকশওয়ালাকে ভাড়া দিলাম ৫০টাকা, বললাম হয়েছে তো? রিকশওয়ালা খুশি হয়ে বললো হাঁ দাদা বেশ হয়েছে ৷ তারপর দৌড়ে গিয়ে উঠলাম গুলিস্তানের বাসে, বাসে করে গুলিস্তান সময় লাগলো প্রায় ৫০মিনিটের মত ৷ গুলিস্তান নেমে নিজের মোবাইলে টাইম দেখলাম বাজে সকাল ৯টা, মোবাইল দেখতে দেখতেই হাঁটছি ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের দিকে ৷

নো চিন্তা, টাইম আছে প্রচুর, মনে-মনে বলছি কোন সমস্যা হবেনা আমার, সবার আগেই পৌঁছাতে পারবো আশা করি ৷ এই ভেবে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের সামনে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড এর সামনে গেলাম, ভাবছি এখনই বাসে উঠবো? নাকি পরের বাসে যাব! ঠিক করলাম পরের বাসেই যাই নিরিবিলি, এই ভেবে সামনে চা' দোকানে গেলাম, দোকানিকে বললাম, এককাপ চা' দিন, দুধ চা', দোকানি খুব সুন্দর করে এককাপ চা' বানিয়ে দিলেন আমাকে ৷ চা' গিলছি আর সামনে দাঁড়ানো খবরের কাগজ বিক্রেতার খবরের কাগজে লেখা শিরোনামগুলি পড়ছি ৷ চা' পান করে দোকানিকে চায়ের দাম পরিশোধ করতে করতে পরের বাসখানাও লোকে ভরে গেল মুহুর্তের মধ্যে যা আমাকে অবাক করে দিলো ৷ যাই হোক শেষ অবধি সেই যাত্রী বোঝাি বাসখানায় উঠলাম দৌড়ে গিয়ে ৷ বাসের সুপারভাইজার বললেন, যাবেন কোথায়? বললাম আমাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নামিয়ে দিবেন ৷

সুপারভাইজার সাহেব বললেন উঠুন তাড়াতাড়ি করে বাস আর এক সেকেন্ড দেরি করবে না, উঠলাম বিআরটিসি বাসে, সিট নেই, দাঁড়িয়ে যেতে হবে সারা পথ ৷ কী আর করা! যেতে তো হবে! বাস ছাড়লো আরিচা নগরবাড়ি ঘাটের উদ্দেশে ৷

শুক্রবার বিধায় বেশি একটা জ্যামে পরতে হয়নি সেদিন, তারপরেও জ্যাম যে একবারে নাই তেমন কোন কথা না' আছে টুকিটাকি ৷ পৌঁছলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, ভাড়া ৬০ টাকা মাত্র ৷

বাস থেকে নেমে একটা চা'দোকানে বসলাম, খালিখালি কী আর বসা যায়? এককাপ চা'তো গিলতেই হয়! না হয় দোকানদার বলবে কী? এককাপ চায়ের অর্ডার দিলাম দোকানদারকে, দোকানদার চা' দিলেন, খাঁটি গরুর দুধের চা ৷

চা' গিলতে গিলতে গিলতেই ফোনে স্মরণ করলাম আইরিন সুলতানা দিদিকে ৷ আরো স্মরণ করলাম কাজী শহীদ শওকত দাদাকে, স্মরণ করলাম ফারদিন ফেরদৌস দাদাকে, স্মরণ করলাম গুরুমহাশয়কে ৷

ফোনের অপর পান্থ থেকে আইরিন দিদি বললেন, দাদা আমি এখনো গাবতলীতে আছি, একটু পরে বাস ছাড়ছে, আমি শফিক মিতুলকে ফোন করে বলে দিচ্ছি, ও আপনার সাথে অবশ্যই দেখা করবে ৷

তাই হলো, কিছুক্ষণ পর শফিক মিতুল বাইসাইকেল নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির হয়ে গেল ৷ সময় তখন ১১:৩০মি: ৷ শফিক মিতুল আর আমি কথা বলতে বলতে বেজে গেল দুপুর ১২:৩০মি: ৷

এরপর দুপুর ১২:৪৫মিনিটএ সবাই আসতে শুরু করলো ৷ প্রথমেই আড্ডায় যোগ হয় বিডি নিউজ ব্লগের মধ্যমণি আইরিন সুলতানা দিদি, সাথে আছে আরো দুজন কিশোরী, সুমনা ও শ্রাবন ৷ শফিক মিতুল, আমি, আইরিন দিদি, সুমনা,শ্রাবন এই পাঁচজন হাঁটতে লাগাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট অতিক্রম করে৷

গেলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে চারদিক সবুজে ঘেরা কয়েকটি দোকান সম্মিলিত ছোট একটা বাজারের মত একটা জায়গায় ৷ খুব সুন্দর জায়গা, হাতে গোনা কটা চায়ের দোকান, দোকানের পিছনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবে না নিশ্চিত ৷

চা, বিস্কুট, ফ্রিজের ঠাণ্ডাপানি সহ সবই আছে দোকানগুলোতে ৷ আমরা একটা বন্ধ দোকানের সামনে গিয়ে বসলাম পাঁচজনে, এরমধ্যে আমাদের সাথে যোগ হয় আরো দুইজন, মাহবুব আলম ও স্বাধীন ৷ আমার ছেলের বয়সী, ওদের খুব ভালো লাগলো, ওদের আন্তরিকতায় আর ভালোবাসায় আমাকে মুগ্ধ করে ফেলেছে মুহূর্তের মধ্যে ৷

এর মধ্যে ছবি উঠানোর কাজ আরম্ভ হয়ে গেছে ওদের, হটাৎ আমার মোবাইলে একটা কল আসলো গুরুমহাশয় জুলফিকার জুবায়ের সাহেবের, বললো কোথায় আছেন আপনারা? আমি বললাম, কোথায় যে আছি গুরুমহাশয়, তা'তো' আমি বলতে পারছি না, আপনি শফিক মিতুলের সাথে কথা বলুন ৷

ফোনটা দিলাম শফিক মিতুলের কাছে, ফোনে কথা বলে শফিক মিতুল বাইসাইকেল নিয়ে ছুটে গেলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গুরুমহাশয়কে আনতে ৷

এমন সময় দেখা যায় রিকশা যোগে একজন আসছেন, সামনে আসতেই চিনতে পেরেছি এ হচ্ছে সম্মানিত লেখিকা রোদেলা নীলা দিদি ৷ আমি আইরিন দিদিকে জিজ্ঞেস করলাম, দিদি রিকশা দিয়ে আসছে উনি রোদেলা নীলা দিদি না? আইরিন দিদি বললেন হাঁ দাদা, উনই রোদেলা নীলা ৷ রিকশা ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে আমাদের সামনে এসে দেবি রূপে আবির্ভাব হলো সম্মানিত লেখিকা রোদেলা নীলা দিদি ৷

দিদিকে আমি নমস্কার জানালাম, উনি স্বাচ্ছন্দ্যে নমস্কার গ্রহণ করলেন, আমি ভালো আছি কিনা জিজ্ঞেসও করলেন ৷ এর কিছুক্ষণ পরেই আড্ডায় মিলিত হলো গুরুমহাশয় জুলফিকার জুবায়ের সাহেব, সম্মানিত মজিবর রহমান দাদা, আতাস্বপন দাদা ৷

তাদের পরপরই ফোন এলো কাজী শহীদ শওকত দাদার, কোথায় আছেন আপনারা? আবার ফোনটা ধরিয়ে দালাম শফিক মিতুল দাদার কানে, ফোনে কথা বলে, শফিক মিতুল আবার বাইসাইকেল নিয়ে ছুটে চললো গেটের দিকে ৷

আসলেন আড্ডার আহ্বায়ক কাজী শহীদ শওকত দাদা, একটু পরেই আসলেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সাজ্জ রাহমান দাদা ৷ এবার আমরা সংখ্যায় হয়ে গেলাম প্রায় দশবারজন ৷ নামাজের সময় হলো, যারাযারা নামাজ আদায় করেন, তাঁরা সবাই নামাজ আদায় করতে মসজিদের উদ্দেশে গেলেন ৷ আমি অধীর আগ্রহে ছিলাম, জাহেদ দাদা আসবেন, মনোনেশ দাদা আসবেন, জাকির হোসেইন দাদা আসবেন, দ্বীব্যেদু দ্বীপ দাদা আসবেন, নুরুন নাহার লিলিয়ান দিদি আসবেন কিন্তু না কেউ আর আসলো না ৷ ফারদিন ফেরদৌস দাদাকে ফোন করলাম, দাদা আপনি আসবেন কিনা? ফারদিন ফেরদৌস দাদা বললেন, নিশ্চিন্তায় থাকুন আমি আসবো সময় মত ৷ তাদের না দেখে মনের দুঃখ মনেই থেকে গেল, এসব ভাবতে ভাবতে দেখি, জুম্মার নামাজ শেষ করে সবাই এসে হাজির হলেন ৷

নামাজ আদায় করে আসার পর, সবাই একসাথে হাঁটতে শুরু করলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন রোডে আসার পর সবাই দাঁড়িয়ে আছি রিকশার জন্য, উদ্দেশ্য ছিল 'লাঞ্চ,' সবাই যাবো হোটেলে ৷

এমন সময় দেখা যায়, ক'জন লোক রাস্তার পাশে মাঠের এক কোনে বন্ধুক দিয়ে পটকা ফুটাচ্ছে ৷ এই পটকা ফুটানো দেখে রোদেলা নীলা দিদি আর আইরিন দিদি বন্ধুকওয়ালা বুড়ো লোকটার সামনে গিয়ে হাজির হলো, কৌতূহলী মন নিয়ে রোদেলা নীলা দিদি বন্ধুক হাতে নিয়েই ঠুসঠাস করে পটকা নিশানা করে মারছে ৷

দেখা গেল একজন ভাল শুটার রোদেলা নীলা দিদি, নিশানাও বেশ চমৎকার, রোদেলা নীলা দিদির ঠুসঠাস দেখে আইরিন দিদির মন তো আর মানছে না! কতক্ষণে বন্ধুক হাতে নিয়ে নিজে মারবেন পটকার ওপর গুলি সেই ধান্দা ৷

তাই হলো, আইরিন দিদি বন্ধুক নিয়ে গুলি ছুরতে আরম্ভ করলেন পটকা নিশানা করে ঠুসঠাস, আইরিন দিদিরও ভাল নিশানা, বহু আগে থেকে এই বন্ধুক দিয়ে হয়তো উনি পটকা ফুটিয়েছেন ৷

এমনি করে সবাই চার-পাঁচটা করে গুলি চালালাম পটকার উপর ৷ শুটিং শেষ করে ভ্যান-রিকশা করে সবাই ছুটলাম ক্ষুধা নিবারণের জন্য, আগের ভ্যান-রিকশায় ছিল রোদেলা নীলা দিদি, আইরিন সুলতানা দিদি, সুমনা, ও শ্রাবন ৷

মাঝখানের ভ্যানে ছিল গুরুমহাশয় জুলফিকার জুবায়ের সাহেব, মাহবুব আলম, স্বাধীন, সহ চারজ, পিছনে ছিলাম আমরা কাজী শহীদ শওকত দাদা, সম্মানিত মজিবর রহমান, আতাস্বপন, সাজ্জাত রাহমান দাদা ৷ আমাদের জায়গাটার নাম তখনো জানা হয়নি আমরা কোথায় যাব! একসময় আগের ভ্যানগাড়ি আমরা হারিয়ে ফেলি ভ্যানওয়ালার কারণে ৷

আগের ভ্যানগাড়িগুলো গেছে অন্যদিকে আর আমরা যাচ্ছি তার ঠিক বিপরীত দিকে ঠিক উল্টো পথে, ফোনে কথা হলো কোথায় যাব, ফোনে নির্দেশ এলো বটতলা যেতে হবে আমাদের ৷ গেলাম বটতলায়, হায়রে বটতলা, কিযে সুন্দর বটতলা জায়গাটা কেউ না গেলে তাকে বিশ্বাস করানো হবে কঠিন ৷

নয়নাভিরাম এক জায়গার নাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বটতলা, দেখার মত এক চিরসবুজে ঘেরা চারদিক, বড়বড় গাছ, রাস্তার পাশে শাপলা পুকুর, বিস্তর হোটেল আর হরেক রকমের দোকানে সম্মিলিত জায়গা বটতলা ৷ ভ্যানগাড়ি থেকে নেমে সবাই মিলে গেলাম হোটেলের দিকে, হাঁটছই আর দেখছি হোটেলের বাহার ৷ একটার চেয়ে আরেকটা আবার কম নয়, মানুষও অনেক যা শহরের হোটেলগুলোতে দেখা যায় না এত মানুষের ভিড় ৷

সেই হোটেলগুলোর প্রধান আকর্ষণ হলো বর্তা আর নানাবিধ তরকারি ৷ যাই হোক বেছেনিয়ে একটা হোটেলে সবাই ঢুকলাম ক্ষুধা নিবারণের জন্য ৷ কী খাব, আর কী খাবো না সেটা নিয়ে চলছে আলোচনা ৷

অবশেষে হাতমুখ ধুয়ে বসলাম খাবারের টেবিলে, আগে আর পরে, আড়াআড়ি করে দুই টেবিল আমাদের ৷ হোটেলবয় ভাতের প্লেট আর বর্তার প্লেট সামনে এনে সাজিয়ে দিল, বর্তার বাহার দেখে ভাবছি, এত বর্তা কেউ কারো বাসায়ও করে না ৷ ৮রকমের বর্তা আর চিংড়িযুক্ত লাউশাক দিয়ে শুরু করে দিলাম খাওয়া ৷ আমি খাচ্ছি আর ফলো করছি, আমাড় আতাস্বপন দাদাকে, জ্বাল খাওয়ার জম যাকে বলে! সাথে আমাদেরও খাওয়া চলছে পুরোদস্তুর, যোগ হলো মুরগীর মাংস ৷

খাওয়ার পর্ব শেষ করে বাহিরে আসলাম, সাথে আতাস্বপন দাদা, কাজী শহীদ শওকত দাদা, সাজ্জাদ রাহমান দাদা আর আমি ৷ আমার একটা বদনেশা আছে তা নিবারণের জন্য ফাঁক খুঁজছি নেশার ক্ষুধা মিঠানোর জন্য, একটু দূরে গিয়ে একটা দোকানে গেলাম আমরা তিনচারজন মিলে ৷

আতাস্বপন দাদা পান চিবানোর জন্য খোঁজাখুঁজি করছে, জিজ্ঞেস করলাম, কী খুঁজছেন দাদা? বললো পান, বললাম আসুন দেখি পান কোথায় পাওয়া যায়! পানের দোকান পাওয়া গেল, দুজনে দুটো পান নিয়ে মুখে দিতেই এলেন কাজী শহীদ শওকত দাদা, গুরুমহাশয় জুলফিকার জুবায়ের সাহেবে, সাজ্জাত রাহমান দাদা ও আরো অনেকে ৷ কাজী শহীদ শওকত দাদা সবার জন্য নিলো পেপসি আর 7up, পানটাই গেল বিফলে, পান ফেলে দিতে বাধ্য হলাম 7up এর লোভে পড়ে ৷ তারপর বটতলার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সবাই সোজাসুজি চলে এলাম জহির রায়হান মিলনায়তন এর সামনে ৷

দেখার মত জায়গা এই জহির রায়হান মিলনায়তনের চারপাশ, সবুজের হাতছানি, নজরকাড়া, মনমুগ্ধকর পরিবেশ ৷ সবুজঘাসের বিছানায় একটু বসলেই শুয়ে ঘুমাতে মন চাইবে সবার ৷

পাশাপাশি দুটি পুকুর, মাঝখানে সরুপথ, পথের দুধারে সারিবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে রেখেছে সুপারিগাছ, মাঝখানের পথ পেরুলেই 'জহির রায়হান মিলনায়তন', এর সামনে দিয়েও একটা রাস্তা পূর্ব-পশ্চিমে ৷

বটতলা খাওয়াদাওয়ার পর এখানেই বেশি সময়ের আড্ডা, এরমধ্যেই উপস্থিত হলেন মাছরাঙা টিভি সংবাদিক ফারদিন ফেরদৌস দাদা ৷ আড্ডা আরো জমে উঠলো, ফারদিন ফেরদৌস দাদাকে পেয়ে সবাই খুশি, হ্যান্ডসেভ আর কোলাকুলি, হাসাহাসি আনন্দ আর হাততালির বাজনা ৷

এরমধ্যে আমিও ঘোষণা করে দিলাম এই আড্ডায় একটা লটারির আয়োজন করা আছে আমার পক্ষ থেকে ৷ সবাই জানতে চাইলো কীভাবে লটারি ড্র করা হবে? খুলে বললাম সব নিয়মকানুন, সবাই খুশি আর হাসাহাসি শুরু করে দিলো ৷ এই আনন্দের হাসাহাসিতে জহির রায়হান মিলনায়তনের চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠলো মুহুর্তের মধ্যে ৷

লটারির ঘোষণা ছিল মানুষ যতজন থাকুক না কেন, ভাগ্যবান ব্যক্তি নির্বাচিত হবে চারজন, এই চারজনেই পাবে আমার পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র পুরস্কার ৷ লটারি ড্র হলো, চারজন নির্বাচিত হলো, পুরস্কার বিতরণ করার দায়িত্বও আমার ওপর পরল ৷

একে একে চারজনকে মঞ্চে ডেকে পুরস্কার দেয়া হলো ৷ লটারির পুরস্কার পেয়েছে সম্মানিত আতাস্বপন দাদা, ফারদিন ফেরদৌস দাদা, সম্মানিত মজিবর রহমান দাদা আর আসাদুস জামান ৷ পুরস্কার দেয়ার পর আরেক ঘোষণা দিয়ে দিলেন সম্মানিত রোদেলা নীলা দিদি আর আইরিন সুলতানা দিদি ৷

ঘোষণাটা ছিল যারা লটারিতে জিতেছেন তাদের পাশের পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরাতে হবে, এটা ছিল প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ার জ্বালা মিঠানোর একটা পন্থা, সেটা কেউ টের পায়নি ৷

লটারিতে কারচুপি হওয়ার অভিযোগও উঠেছে বহু, যা পত্র-পত্রিকার প্রথম পাতার প্রথম শিরোনামে বড়বড় লাল অক্ষরে লেখা, 'জাবির সংবাদিক আড্ডার লটারিতে কারচুপি' ৷ আসলে আমি ছিলাম নির্দোষ, কারচুপি যদি হয়েও থাকে সেটা লটারি পরিচালনা কমিটির ওপর'ই বর্তায় ৷

যাই হোক, কমিটির সভাপতির ঘোষণাকে সম্মান জানিয়ে মুহুর্তেই আমাদের আতাস্বপন দাদা পুকুরে ঝাঁপ দিয়েও দেয়া হলোনা পুকুপাড়ে থাকা কিছু অসাধু জঙ্গলের জন্য ৷ ঝাঁপ দেয়ার সাথে সাথে সেই অসাধু জঙ্গলগুলো আতাস্বপন দাদাকে আটকে দেয়, এমনভাবে আটকে দেয় যে, সেই জঙ্গল থেকে আতাস্বপন দাদাকে উদ্ধার করতেও সমস্যা হয়েছিল ৷

আমি ভাবছিলাম, আতাস্বপন দাদাকে এই জঙ্গল থেকে উদ্ধার করতে হলে, নিকটে থাকা কোন এক ফায়ার স্টেশনে খবর দিয়ে উদ্ধারকর্মীর প্রয়োজন হয়তো হতে পারে ৷ কিন্তু না, সেটার আর দরকার হয়নি আতাস্বপন দাদাকে দুইজনে টেনে হেঁছড়ে বহু কষ্টে ওই অসাধু জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে ৷

আতাস্বপন দাদাকে উদ্ধারের পর সবাই তাকে হাততালি দিয়ে নতুন করে বরণ করে নেই ৷ এমনি করেই বেলা শেষ করতে লাগলাম জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে হাসিখুসিতে ৷ এরমধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগ সংকলন ২০১৬ইং প্রকাশিত একটা বই নিয়ে হাজির হলেন সম্মানিত শফিক মিতুল ৷

বইখানার নাম: "নগরনাব্য" বইটিতে আছে বিডি নিউজ ব্লগের ছয়জন লেখকের লেখা, দেশ-বিদেশের ছয়টি ভ্রমণ কাহিনী ৷ বইখানা শফিক মিতুল সবার হাতে হাতে বিতরণ করলেন, বইটি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে একশত পঁচিশ টাকা মাত্র ৷

খুবই সুন্দর লেখায় বইটি খুবই জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকবে আশা করা যায়, আমি নিজেও একটা বই নিয়েছি শফিক মিতুল এর কাছ থেকে ৷ কারণ: এই বইখানা আমার সহ ব্লগার/লেখকের লেখা তাই, এটা একপ্রকার আমার গর্বও বলা চলে ৷ যাই হোক সন্ধ্যার একটু আগমুহুর্তে সবাই চলে গেলাম সপ্তছায়া নাট্যমঞ্চের কাছে একটা বটবৃক্ষের সামনে ৷

সেখানে বাসারও খুব সুন্দর ব্যবস্থা করা আছে, সেখানে যাওয়ার পর একটা ঘোষণা এলো আইরিন সুলতানা দিদির কাছ থেকে ৷ ঘোষণা হলো, ব্লগ ডটকম টোয়েন্টিফোর এর একটা মিনি ডকুমেন্টারী হবে, এতে সবার অংশগ্রহণ করতে হবে ৷ তার মানে একটা নাটকের মত রিয়ের্সাল, অভিনয় করতে হবে একের পর এক সবাইকে ৷ এই পর্বটা শেষ করতে করতেই শেষ হয়ে গেল সন্ধ্যার লগ্ন, শুরু হয় রাতের পালা ৷

তখনো অভিনয় চলছে পুরোদস্তুর ভাবে, মোবাইলের টসলাইট জ্বালিয়ে অভিনয় শেষ করার জন্য চলছে প্রাণপণ চেষ্টা ৷ বহু কষ্ট করে নাটকের পরিচালক সাহেবা আইরিন সুলতানা দিদি আর রোদেলা নীলা দিদি সন্ধ্যা ৭টায় শেষ করে সেই নাটকের চিত্রগ্রহণ ৷ নাটকের চিত্রগ্রহণে নিয়োজিত ছিলেন দক্ষ ফটোগ্রাফার ফারদিন ফেরদৌস, সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন কাজী শহীদ শওকত ৷ নাটক শেষে সবার উপস্থিতিতে বিডি নিউজ ব্লগ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নাগরিক সংবাদিক আড্ডার সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় ৷

সবাই তখন নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর ধান্দা, আমারও তাই একই রকম অবস্থা, অফিস থেকে বারবার ফোন আসছে কখন ফিরছি, সাথে নিজের গিন্নিও ফোনের পর ফোন ৷ তাদের শুধু বলছি আসছি এক্ষণি, বেশি দেরি হবে না ৷ ফোনে কথা বলতে বলতে সবাই চলে এলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাসস্ট্যান্ড, তখন প্রায় ৭:৩০মি: এর মত বাজে ৷ এতক্ষণ একসাথে ছিলাম, এখন চলে যাচ্ছি, এসব ভাবতেই খুব খারাপ লাগছিলে আমার কাছে ৷ ফারদিন ফেরদৌস দাদ, কাজী শহীদ শওকত দাদা, আর আতাস্বপন দাদাকে বললাম 'চা'বিস্কুট খাবো চলুন 'চা'দোকানে! আতাস্বপন দাদা খুবই রসিক মানুষ, বললেন হ্যাঁ চলুন খাওয়া যাবে ৷ আতাস্বপন আর ফারদিন দাদার সাথে কথা বলতে বলতে কাজী শহীদ শওকত দাদা কখন যে হারিয়ে গেল একটু টেরও পাইনি ৷ পরে জানতে পারলাম তিনি চলে গেছেন, কারণ: সেই ময়মনসিংহ তো আর একটু-আধটু দূরে নয় তাই তিনি তাড়াতাড়ি করে বাড়ির উদ্দেশে চলে গেছেন ৷ আমরা সবাই 'চা'বিস্কুট খেলাম, আমি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম আবার কোনদিন দেখা হবে বলে ৷

শফিক মিতুল আমাকে ফুট ওভারব্রিজ পার করে গুলিস্তানের বাসে উঠিয়ে দিলেন, আমি গুলিস্তানের উদ্দেশে বাসে উঠে চলে এলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিডি নিউজ ডটকম টোয়েন্টিফোর এর নাগরিক সংবাদিক আড্ডা থেকে ৷

আমি রিক্ত, আমি শূন্য, আমার কাছে দেবার মত কোন ভালোবাসা ছিলো না, আমি গিয়েছি আমার প্রাণপ্রিয় সহব্লগার/লেখকদের কাছ থেকে ভালোবাসা কুড়িয়ে আনতে ৷ আমগাছ থেকে আম ঝরে পরলে যেমটা মানুষে কুড়ায়, ঠিক তেমনি ভাবেই আমি আমার সহব্লগাদের কাছ থেকে ভালোবাসা কুড়িয়ে এনেছি অনেক অনেক ভালোবাসা, যা কোনদিন ফুরিয়ে যাবেনা ৷ সেই কুড়িয়ে আনা ভালোবাসা আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় বহু যতন করে রেখে দিলাম চিরদিনের জন্য ৷ জয়তু বিডিনিউজ, জয়তু বিডিনিউজ ব্লগ, জয়তু নাগরিক সংবাদিক/ জয়তু ব্লগার/লেখক/লেখিকা ৷ জয় হোক সকলের ৷

পোস্টের ছবি নিজের তোলা কিছু, আর বাকি ছবি ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা ৷