ডায়াবেটিস রোগের মহৌষধ ডায়াবেটিস গাছ ও গাছের পাতা

নিতাই বাবু
Published : 5 Dec 2016, 03:18 PM
Updated : 5 Dec 2016, 03:18 PM

নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল রসূলবাগ গ্রামে মফিজুল ইসলাম নামের এক বন্ধুর বাড়িতে, টবে রোপণ করা ডায়াবেটিস গাছ|

আমাদের দেশে এখন ডায়াবেটিস রোগ মহামারী আকারে ধারণ করেছে, যা ছেলে, বুড়ো, বউ, ঝি, ভাই-বোন সবাই এই মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত। শরীরের যেকোন একটা অসুখ দেখা দিলেই আমরা ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হই রোগ নিরাময়ের জন্য। ডাক্তারের কাছে গেলেই, আগে জিজ্ঞেস করে রোগীর ডায়াবেটিস আছে কি না। যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে তবে আগেই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে, তারপরে ডায়াবেটিস এর রিপোর্ট দেখে রোগীর রোগ নিরাময়ের ঔষধ দেয়া হয়। আগেকার সময় ডাক্তার প্রথমে রোগীকে জিজ্ঞেস করতো গ্যাস্ট্রিক আছে নাকি? এখন প্রথমেই জিজ্ঞেস করে ডায়াবেটিস এর কথা। বর্তমানে এই ডায়াবেটিস রোগে আমাদের দেশ সহ পৃথিবীর আরো বহু দেশের জনগোষ্ঠীকে গ্রাস করে ফেলেছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে।

ডায়াবেটিস গাছ, বৈজ্ঞানিক নাম যার গাইনূরা প্রোকাম্বেন্স ৷ পরিচিত এক বন্ধুর বাড়িতে টবে রাখা ৷

আমার বড়দিদি আর জামাই বাবুও ডায়াবেটিস এর রোগী ৷ অনেকদিন ফোন করছিলো দিদির বাসায় যাওয়ার জন্য, জামাই বাবুকে একটু দেখে আসতে ৷ সময় হচ্ছিলো না আমার, নিজের কাজের ঝামেলা সবসময় এক অন্যরকম ব্যস্ততা আমার ৷ তারপর আবার গত ৩০ অক্টোবরের পর থেকে চোখের সমস্যায় ভুগছি, যা এখনো সেরে ওঠতে পারি নাই ৷ চোখের সমস্যার কথা শুনে আমার বড়দি আমার বাসায় আসতে না পেরে, ডাক দিল মোবাইল ফোনে দিদির বাসায় যেতে ৷ বড়দি আমাকে দেখতে চেয়েছে, না গিয়ে তো' আর পারা যায় না, তাই গত কয়েক আগে খুব সকালবেলা রওনা হলাম দিদির বাসার উদ্দেশে ৷ গোদনাইল চৌধুরীবাড়ি হতে নারায়ণগঞ্জ যেতে সময় গালে ৩০ মিনিট ৷ দিদির বাসায় পৌঁছলাম সকাল ৭ টায়, বাসার সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলে দিল দিদি ৷ গিয়ে দেখি আমার জামাই বাবু ঘরের মেঝেতে লাফিয়ে লাফিয়ে ব্যায়াম করছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য ৷ জামাই বাবুর সাথে সাথে লাফাচ্ছে আমার ১৯ বছরের এক ভাগিনা ও বড় ভাগিনার ৬ বছরের এক নাতি ৷

ডায়াবেটিস গাছ, ঢালা থেকে যার জন্ম, বৈজ্ঞানিক নাম গাইনূরা প্রোকাম্বেন্স দেশীয় ভাষায় ডায়াবেটিস গাছ; এক বন্ধুর বাড়িতে ৷

এই দৃশ্য দেখে বড়দিকে বললাম কিরে দিদি, তোদের বাসা কি কোন জিমন্যাস্টিক্সের ফ্লোর নাকি? দিদি বলল, না'রে ভাই, জিমন্যাস্টিক্স না, ডায়াবেটিস ফ্লোর ৷ আমার ডায়াবেটিস, তোর জামাই বাুর ডায়াবেটিস, তোর বড় ভাগিনার ডায়াবেটিস, তোর নাতিরও কিছুদিন আগে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে সেও এক রুগী, তাহলে বলতো, জিমন্যাস্টিক্সের ফ্লোরের আর কাকিটা কোথায়? ৷ দিদির কথা শুনে একটু ভাবতে লাগলাম, এত সকালবেলা দিদির বাসায় রিকশা দিয়ে অাসার সময় নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপালের চতুর্দিকে দেখলাম বহুলোকে লাইন ধরে নাচছে, আর হাটছে ৷ কেউ আবার বুকডন নিচ্ছে, হাত-পা নাড়াচ্ছে, কেউ দৌড়াচ্ছে, এরা বেশির ভাগ'ই ডায়াবেটিস রুগী ৷ ভাবতে ভাবতে দিদি আমাকে বলল, ডায়াবেটিস গাছ নাকি পাওয়া য়ায়? একটু দেখিস তো, যদি একটা ডায়াবেটিস গাছ এনে দিতে পারিস তো' ভীষণ উপকার হবে ৷ আমি এই প্রথম শুনলাম ডায়াবেটিস গাছের কথা আমার বড়দির মুখ থেকে, জিজ্ঞেস করলাম এই গাছের গুণাগুণ কী? দিদি বললেন, সকাল বিকাল দুটি করে পাতা দাঁতে চিবিয়ে পানি সহ খেলে ডায়াবেটিস বেশ নিয়ন্ত্রণে থাকে ৷ বর্তমানে অনেক বাড়ির ছাঁদে, বহু লোকে এই ডায়াবেটিস গাছ টবে লাগিয়ে রেখে গাছের পাতা খাচ্ছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ৷

ডায়াবেটিস গাছ ডায়াবেটিস রোগের মহাঔষধ ৷ নিয়মিত দুটি করে পাতা দাঁতে চিবিয়ে পানি সহ সেবন করলেই যথেষ্ট ৷

দিদি আর জামাই বাবুর সাথে কথা বলে আমার নিজ বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম, বাসায় এসে আবার অফিসে গিয়ে নিজের অফিসিয়াল কাজ সেরে পরিচিত লোকদের জিজ্ঞেস করলাম এই ডায়াবেটিস গাছের কথা ৷ সাথে সাথে পেয়ে গেলাম বিদেশি ঔষধি গুণসমৃদ্ধ এই ডায়াবেটিস গাছটির সন্ধান, যা আমার অফিসের কাছেই ৪/৫ টি বাড়িতে খুব যত্নসহকারে রাখা হয়েছে এই ঔষধি গাছটিকে ৷ জানা যায়, এই ঔষধি গুণসমৃদ্ধ গাছটি কোন একসময় সুইজারল্যান্ড থেকে কোন এক ভদ্রলোক গাছটি বাংলাদেশে আনে, সর্বপ্রথম গাছটির গন্তব্য ছিল ঢাকা গুলশান ৷ সেখান থেকে দিনে দিনে এই ডায়াবেটিস গাছটির বিস্তার, বর্তমানে সারা বাংলাদেশের আনাচেকানাচে ৷ গাছটির গুণাগুণ সমন্ধে জানা যায়, ডায়াবেটিস রুগীরা সকাল-বিকাল এই ডায়াবেটিস গাছের দুটি করে পাতা দাঁতে চিবিয়ে পানি সহ নিয়মিত সেবন করলে ডায়াবেটিস আনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ৷ শুধু ডায়াবেটিস'ই নয়, ডায়াবেটিস গাছের পাতা সেবন করলে, কিডনি, লিভার, প্রেসারও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ৷

ডায়াবেটিস গাছ, বৈজ্ঞানিক নাম গাইনূরা প্রোকাম্বেন্স বিদেশি ঔষধি গুণসমৃদ্ধ গাছটি, দেশীয় ভাষায় বলে ডায়াবেটিস গাছ ৷

জানা যায়, গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম গাইনূরা প্রোকাম্বেন্স৷ এটা নাকি চীন এবং সুইজারল্যান্ডে স্থানীয়ভাবে "ডান্ডালিয়েন নামেও ডেকে থাকে ৷ বর্তমানে আমেরিকা, থাইল্যান্ড, চীন, সহ বিশ্ব জয় করে এই এন্টি ডায়াবেটিস গাছটি এখন বাংলাদেশ জয় করতে যাচ্ছে ৷ গাছটির তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে সম্পূর্ণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন এন্টি ডায়াবেটিস গাছটির পাতা এবং পাতার রস সেবনে ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ৷ এছাড়া সুগার এবং কলস্টোরাল নিয়ন্ত্রণ'ই করে না, তরতাজা রাখে কিডনি, লিভার, ব্লাডপ্রেসার ৷ ডাক্তার যাদের চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কোন খাদ্য গ্রহণ করতে নিষেধ করে, তারাও এই এন্টি ডায়াবেটিস গাছের পাতা নিয়মিত সেবনে সবকিছুই খেতে পারবে ৷ শুধু প্রতিদিন সকালবেলা আর বিকেলবেলা দুটি করে পাতা দাঁতে চিবিয়ে পানি সহ সেবন করলেই হল ৷

ডায়াবেটিস রুগীর জন্য চিনির বদলে বিকল্প চিনির ট্যাবলেটস যা ডায়াবেটিস রোগীরা চা'এর সাথে মিশিয়ে সেবন করে থাকে৷
ডায়াবেটিস গাছের পাতা সেবনের পর এই বিকল্প চিনি আর ব্যবহার করতে হয় না ৷

"যেসব ডায়াবেটিস রুগীরা খাওয়ার আগে এই ইনজেকশন ব্যবহার করে তারাও আজ মুক্ত হয়েছে, এই ডায়াবেটিস গাছের পাতা সেবনের ফলে ৷

আমার এক পরিচিত বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখি খুব যত্নসহকারে গাছটিকে একটা টবে করে রাখা হয়েছে ৷ জিজ্ঞেস করলাম, গাছটি কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে? প্রত্যুত্তর পেলাম, ঢাকা এক পরিচিত স্বজনদের বাড়ি থেকে বহু কষ্ট করে আনা হয়েছে ৷ গাছের একটা ঢালা কেটে এনে একটা ফুলের টবে মাটির সাথে অল্প কিছু গোবর মিশিয়ে ডায়াবেটিস গাছের ঢালাটি রোপণ করা হয়েছে ৷ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেই ঢালা থেকে দুএকটা কুঁড়ি বাহির হতে লাগলো, তা দেখে আরো বেশি যত্ন নিতে লাগলো বাড়ির সবাই মিলে ৷ বর্তমানে ওই ঢালার গাছ থেকে ঢালা কেটে আরো দুইটা টব বাড়ানো হয়েছে ৷ আশেপাশের দুই তিনটি বাড়িতেও এই ডায়াবেটিস গাছের ঢালা বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান আমার বন্ধু ৷ অনেক ডায়াবেটিস রুগীকে জিজ্ঞেস করলাম, এই ডায়াবেটিস গাছের পাতা সেবন করে কী কী উপকার পাওয়া গেছে? উত্তর পেলাম, তিন মাস নিয়মিত এই ডায়াবেটিস গাছের পাতা সেবন করে "ইনসুলিন" ব্যবহার করা বাদ দিয়েছি, যা আগে ক'দিন পরপর ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে লাগতো, এখন আর ডাক্তারের কাছে আগের মত যেতে হয় না ৷ ডাক্তারের পরামর্শে অনেক কিছুই খেতে পারতাম না, এখন সবই খেতে পারি কিছুই বাদ নেই ৷ যারা ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত তারা দুবেলা দুটি করে পাতা সেবন করতে হয়, যারা অল্প আক্রান্ত তারা একবেলা সেবন করলেই যথেষ্ট ৷

গাছটি গাছের ঢালা থেকেই জন্মে থাকে, বেঁচে থাকতে পারে কমপক্ষে ২৫ বছর, গাছটি লম্বা হয় ৩ ফুট ৷ গাছটি পাতা চিবিয়ে খেতে খুব একটা সুস্বাদু না হলেও অরুচিকর নয়, গাছের জাত গন্ধ ছাড়া বাজে কোন দুর্গন্ধ নেই ৷ আমি নিজেও এই ডায়াবেটিস গাছের পাতা দাঁতে চিবিয়ে খেয়ে দেখেছি, ডায়াবেটিস রুগী ছাড়াও সুস্থসবল লোকেরাও এই ঔষধি গুণসমৃদ্ধ গাছের পাতা সেবন করতে পারে ৷ এটাকে বলা চলে বহু রোগের মহাঔষধ, উপকার ছাড়া ক্ষতি হয় না ৷

জয়তু ডায়াবেটিস গাছ, ঘরে ঘরে বিস্তার লাভ করুক ডায়াবেটিস গাছ, দূর হোক চিরতরে মরণব্যাধি ডায়াবেটিস ৷ সবাই ভালো থাকুক সুস্থ থাকুন ৷