লক্ষ্মী নারায়ণ স্কুলের পুনর্মিলনী স্মরণিকায় ’অনুমতি ছাড়াই’ ব্লগ.বিডিনিউজ২৪.কমে প্রকাশিত আমার ধারণকৃত আলোকচিত্র ব্যবহার

নিতাই বাবু
Published : 13 Jan 2017, 10:38 AM
Updated : 13 Jan 2017, 10:38 AM

একটি বইতে একটি ছবি দেখে আমি বিস্মিত! আমি হতবাক! আমি আবার আনন্দিত হয়েছি আমার দেয়া ছবিখানা দেখে। আমি গত ২২/০৫/২০১৬ ইং তারিখে বিডিনিউজ ব্লগে একটা লেখা লিখেছিলাম, শিরোনামটা ছিল 'বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সীঃ) জুট প্রেস' সেই পোস্টখানায় আমি আমার এলাকার একটা শিল্প প্রতষ্ঠানের কাজের কথা তুলে ধরেছিলাম- কীভাবে বাংলার সোনালী আঁশকে পাটশ্রমিকরা পাট বেলিং করে বাজারজাত করছে। সেই পোস্টের একটি ছবি আমার এলাকার একটি স্কুলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিতরণ করা একটি বইতে দেখেই আমি তাজ্জব বনে যাই! নিম্নে সেই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিতরণের জন্য তৈরি করা বইয়ের কিছু কথা তুলে ধরলাম।

লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলস্ উচ্চ বিদ্যালয়

প্রতি বছরের মত এবারও গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ ইং রোজ শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলস্‌ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭০ বছর পূর্তি উৎসব ও প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ২০১৬ বহু আনন্দের সহিত উৎযাপিত হয়। উক্ত আনুষ্ঠানে সম্মানিত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শামিম ওসমান সহ নারায়ণগঞ্জ শহরের অনেক নামীদামী স্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য ও সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন উক্ত বিদ্যালয়ের ক'জন প্রাক্তন ছাত্র, যারা বর্তমানে অত্র এলাকার স্বনামধন্য ব্যক্তি হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। প্রতিবছর-ই তাঁরা এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে আনেক উৎসাহ-উদ্দীপনায় আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভোজসভার মাধ্যমে।

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রীবৃন্দ ৷

এই অনুষ্ঠানের বিষেশ আকর্ষণ থাকে তাঁদের তৈরি করা হাজার খানেক বই, সেই বইটিতে থাকে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের কর্মকান্ড নিয়ে কিছু কথা, আয়োজকদের ছবি, সম্মানিত সংসদ সদস্য (এমপি) সাহেবের বাণী, প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রীদের ছবি ও স্কুল সহ এলাকার কিছু সুন্দর সুন্দর জায়গার ছবি। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে স্কুলের ভেতরে বহিরাগত কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না, কেউ ঢুকতেও পারে না, কেউ ঢুকেও না, ঢুকতে দেয়া হয় সবাই খাওয়া দাওয়া কারার পর। সেদিন স্কুলটি থাকে নিরাপত্তা বেস্টুনীর আওতায়, থাকে সিসি ক্যামেরা, থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যারা আমন্ত্রিত তাঁরা আমন্ত্রণী কার্ড দেখিয়ে স্কুলটির ভিতরে প্রবেশ করে, প্রবেশ করার সাথে সাথেই পেয়ে যায় একটি করে খাবারের প্যাকেট আর একটি বিশেষ বই।

স্কুলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের তৈরি করা বই

স্কুলটি আমার অফিসের সামনেই, এই স্কুলেই আমার দুই সন্তান লেখাপড়া করেছে। আমিও কোনদিন এই স্কুলের একজন অভিভাবক ছিলাম, এখন আমার ছেলেমেয়ে স্কুলে লেখাপড়া করে না, কাজেই আমি এখন এই স্কুলের কোন অভিভাবক নই। বর্তমানে যারা স্কুলটির অভিভাবক প্রতিনিধি আছেন, তাঁরা সবাই আমার মত একজন অভিভাবকের ভোটেই হয়েছে অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য। এই অনুষ্ঠানে কোন ছাত্র/ছাত্রীর অভিভাবককে আমন্ত্রণ করেছে কিনা আমার জানা নেই, শুধু প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রী আর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা'ই আমন্ত্রিত, তাছাড়া অন্য কেউ নয়।

যাক সেই কথা, এখন মূল কথায় আসা যাক। সেদিন ৩০ ডিসেম্বর আমি আমার অফিসে কাজ করছি, আমার বসও আমার সাথে আছে। হঠাৎ দেখি আমার অফিসে একটা লোক এসে একটা খাবারের প্যাকেট আর একটা বই দিয়ে গেল আমার বসের হাতে। আমি আমার বসকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কিসের বই বস? বস বললেন, এগুলো স্কুলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের বই আর খাবার। বইটা আমার বস ওলটপালট করে দেখছে বারবার, সাথে আমার আরেক বসকেও দেখাচ্ছে। আমি কয়েকবার বইটা চাচ্ছিলাম, বইটা আমাকে আমার দুই বস দিচ্ছেনা, বলছে একটু পরে দেখেন, আমরা দেখে নেই তারপর। আমি মাথা নত করে চলে গেলাম অফিসের বাহিরে, এক চা'দোকানে।

তৈরি করা বইতে বিডিনিউজ ব্লগপোস্টের ছবি, কিন্তু নাম নেই

অনেক্ষণ পর চা'দোকান থেকে আমি আমার অফিসে আসি, তখন অফিসে কেউ নেই শুধু বইখানা অর্থ্যাৎ স্মরণিকাটি পড়ে আছে আমার টেবিলের উপর। আমি স্মরণিকা হাতে নিয়ে দেখছি, বইখানার উপরে লেখা আছে, ৭০ বছর পূর্তি উৎসব ও প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ২০১৬ 'বন্ধন'। নিচে লেখা আছে 'লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলস্‌ উচ্চ বিদ্যালয়'। বইটির ভেতরে প্রথমেই লেখা, ঐতিহ্যবাহী লক্ষী নারায়ণ কটন মিলস্‌ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজকদের নাম। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় লেখা আছে প্রধান অতিথি মাননীয় সংসদ সদস্য আল-হাজ্ব শামীম ওসমান সাহেবের 'বাণী'। তৃতীয় পৃষ্ঠায় লেখা আছে জেলা প্রশাসকের 'বাণী', চতুর্থ পৃষ্ঠায় লেখা স্কুলের সভাপতি সম্মানিতা সালমা ওসমান লিপি সাহেবার 'বাণী'। পঞ্চম পৃষ্ঠায় লেখা আছে ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল হাসনাত কবির সাহেবের 'বাণী', ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় লেখা আছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সম্মানিত বিকাশ চন্দ্র দাস এর 'বাণী'। সপ্তম পৃষ্ঠায় আছে শুভেচ্ছা অভিনন্দন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের ছবি সংবলিত নাম ও শুভেচ্ছা অভিনন্দন। অষ্টম পৃষ্ঠায় আছে স্কুলের বর্তমান অভিভাবক প্রতিনিধি (ম্যানেজিং কমিটি)'র নাম। নবম পৃষ্ঠায় লেখা স্কুল শিক্ষকদের নাম, এর পরের পৃষ্ঠাগুলোতে প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রীদের ছবি ও নাম। বইটির শেষের কয়েকটা পৃষ্ঠায় আছে প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রীরা বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ব্যবসা/বাণিজ্যের প্রচার সহ খবর।

স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করছে ছোট শিশু শিল্পীরা

এর মাঝেই একটা ছবি দেখে আমি অবাক হয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম, বইটিতে ছাপানো একটা ছবিটির দিকে। দেখতে দেখতেই আমার এক বস অফিসে এসে হাজির! আমার বস আমাকে একটু হতবাক দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার বাবু! কী হয়েছে? কী দেখলেন? আমাদের ছবি কেমন হয়েছে? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি আমার বসকে বললাম, দেখুনতো ছবিখানা কেমন লাগছে? আমার বস বললেন বেশ লাগছে! তো কেন? আমি বললাম, ছবিখানা আমার, কিন্তু এই ছবিখানা কোত্থেকে পেয়েছে বা সংগ্রহ করেছে জানিনা, তবে আমার নাম ও বর্তমানকালে দেশের আলোচিত অনলাইন পত্রিকা বিডিনিউজ ব্লগের নামটা দেয়া উচিৎ ছিল। একথা শুনে আমার বস হতবাক! বাবু আপনি বলেন কী? বললাম হাঁ বস, এই ছবিখানা বিডিনিউজ ব্লগে লেখা আমার দেয়া ছবি। ছবিখানা তাঁরা সংগ্রহ করে এই স্কুলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের বইতে ছাপিয়ে বইয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পেরেছে অথচ আমি গরীব বলে আমাকে ঘৃণা করে ছবির নিচে আমার নামটা দিল না, এটা আমার জন্য হৃদয়বিদারক। আমার বস আমার কথা শুনে বললেন, এই ছবিখানা আপনার তার কী প্রমাণ আছে? আমি বললাম আছে বস, দেখুন! মোবাইলের ইন্টারনেট চালু করে গুগলে সার্চ করলাম, "বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা (সীঃ) জুট প্রেস" লিখে।

সাথেসাথে ছবিখানা মোবাইল স্কিনে প্রদর্শিত হলো, বসকে বললাম দেখুন তো এই ছবিটা কিনা? বসকে বললাম, আরো দেখুন! ছবিটার নিচে সাইটে ক্লিক করলাম, ক্লিক করার সাথে সাথে ব্লগ.বিডিনিউজ২৪.কমে আমার পোস্ট করা লেখা চলে এলো, এবার বললাম, এখন ভালো করে দেখুন ছবিটা কার? আমার সম্মানিত বস খুশিতে আত্মহারা। আমি বসকে বললাম, বস আপনি খুশিতে আত্মহারা হলেও আমি কিন্তু মোটেও খুশি না। কারণ, যেখানে ছবিটা সংগ্রহ করা ওয়েব সাইটের নাম নাই, ছবিটা কে দিলো তার নাম নাই, যদি আমি আপনাদের মত এমন বিত্তশালী হতাম, তাহলেই ছবির নিচে আমার নাম থাকতো এবং ছবিটার ব্যাপারে আমাকে আগে থেকেই জানানো হতো। এই কথা শুনে আমার বস আরো দুইতিনজন মানুষকে ডেকে ছবিখানা দেখালেন, ছবি দেখে সবাই অবাক! কয়েকজন বলছে আপনি জিজ্ঞেস করেন যে, ছবিটার নিচে প্রেরকের নাম দেয় নাই কেন? আমার বস বলছে ফোন করেন এক্ষুণি! আমি সাথে সাথে যিনি বইখানা তৈরি করেছেন তাঁর কাছে ফোন করলাম। ফোন করে বললাম,  সাহেব, স্কুলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বই বিতরণের জন্য যেই বইখানা তৈরি করেছেন সেই বইয়ের শেষাংশে "বাংলাদেশ সমবায় শিল্প সংস্থা'র একটা ছবি ছাপিয়েছেন, সেই ছবিখানা আপনি জনাব কোত্থেকে পেলেন? আর ছবিখানা যেখান থেকে পেয়েছেন সেখানকার প্রেরণকারির নাম দিলেন না কেন জনাব? প্রত্যুত্তর পাওয়া গেল শুধু 'আমি এখন ব্যস্ত, পরে কথা বলবো'। তারপর আবার ফোন করলাম, সেই একই কথা, 'পরে কথা বলবো'।

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের খাওয়াদাওয়ার একটা পর্ব

তখন স্কুলের প্রধান ফটকের কর্তব্যরত প্রহরীকে ম্যানেজ করে স্কুলের ভিতরে গেলাম, ওই ভদ্রলোকটাকে একটু জিজ্ঞেস করতে, সেখানে গিয়ে দেখি সুবিশাল নাট্যমঞ্চে নৃত্যানুষ্ঠানে নৃত্য করছে ছোটছোট শিশুশিল্পিরা। মঞ্চের চারিপাশে অনেক খোঁজাখুঁজির পর, সেখানে ওনাকে আর পাওয়া গেল না। অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরি করে, কিছু ছবি সংগ্রহ করে, স্কুল থেকে বাহিরে এসে স্কুলের একজন অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্যের সাথে এ বিষয়ে কথা বললাম। ওনাকে আমার মোবাইল ফোন থেকে বিডিনিউজ ব্লগে আমার পোস্ট করা ছবিখানা দেখালাম। তিনি বললেন দাদা, আপনার তো টাকা নাই, তাই নামটা উনি দেয় নাই। যদি হাজার দুয়েক টাকা দিতে পারতেন, তবে হয়তো ছবির নীচে-উপরে সর্বত্র আপনার নাম থাকতো দাদা। তবু দাদা যিনি এই বইখানা ছাপিয়েছেন তাকে জিজ্ঞেস করুন, কেন নামটা উনি দেয়নি? নামটা দিতে ওনার সমস্যাটা কী ছিল? সম্মানিত অভিভাবক প্রতিনিধি সাহেব আমাকে এই বলে শান্তনা দিলেন। আপসোস থেকে গেল যে, গরীব হয়েছি বলে আজ আমার দেয়া ছবিখানার নিচে আমার নাম নাই। তবু কোন দুঃখ নাই, ভালোবাসি আমার প্রিয় এলাকাটিকে, ভালোবাসি এলাকার প্রিয় মানুষগুলোকে।