নারায়ণগঞ্জ ‘রামকৃষ্ণ মিশনে’ শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ১৮২তম জন্মতিথি ও বার্ষিক উৎসবের আয়োজন

নিতাই বাবু
Published : 24 March 2017, 02:14 AM
Updated : 24 March 2017, 02:14 AM

প্রতিবছরের মতো এবারও নারায়ণগঞ্জ 'রামকৃষ্ণ মিশনে' শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ১৮২তম জন্মতিথি ও বার্ষিক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানটি আগামী ১৪ চৈত্র থেকে শুরু হয়ে ১৭চৈত্র (২৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ) মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বার্ষিক উৎসবটি উদযাপিত হবে। শ্রীরামকৃষ্ণের এই ১৮২তম জন্মতিথি ও বার্ষিক উৎসবের আয়োজনে থাকবে রামায়ণ গান, চলচিত্র প্রদর্শনী। প্রতিবারই চলচিত্র প্রদর্শনীতে দেখানো হয় শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী। এই তিনদিনের উৎসবের অনুষ্ঠানসূচীতে আরও অনেককিছু আছে, তা আমি নিন্মে লিখে জানাচ্ছি। তার আগে আমি রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন নিয়ে কিছু জানানোর ইচ্ছা পোষণ করছি। কারণ: আমিও শ্রীরামকৃষ্ণ পরমংসের নাম নেওয়া একজন নগণ্য শিষ্য, তাই ।

'রামকৃষ্ণ মিশন' এর কিছু তথ্য।

বিভিন্ন তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রামকৃষ্ণ মিশন হল একটি ভারতীয় ধর্মীয় সংগঠন। এই সংগঠন রামকৃষ্ণ আন্দোলন বা বেদান্ত আন্দোলন নামক বিশ্বব্যাপী আধ্যাত্মিক আন্দোলনের প্রধান প্রবক্তা। এটি একটি জনকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ১৮৯৭ সালের ১ মে রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। মিশন স্বাস্থ্য পরিষেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণকার্য, গ্রামোন্নয়ন, আদিবাসী কল্যাণ, বুনিয়াদি ও উচ্চশিক্ষা এবং সংস্কৃতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণকরেছে। এটি শতাধিক সংঘবদ্ধ সন্ন্যাসী ও সহস্রাধিক গৃহস্থ শিষ্যের একটি যৌথ উদ্যোগ। রামকৃষ্ণ মিশন কর্মযোগের ভিত্তিতে কাজকর্ম চালায়।

রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার নিকটবর্তী হাওড়া শহরে বেলুর মঠে অবস্থিত। এই সংগঠন প্রাচীন হিন্দু দর্শন বেদান্তের অনুগামী। এটি সন্ন্যাসী সংগঠন রামকৃষ্ণ মঠ কর্তৃক অনুমোদিত। রামকৃষ্ণ মঠের সদস্যরা রামকৃষ্ণ মিশনেরও সদস্য।

আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রামকৃষ্ণ মিশনের বিশেষত্ব হলো সামাজিক দর্শন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বীকৃতি। এর সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয় অধ্যাত্মসেবা ও পূজাজ্ঞানে, কারণ শ্রীরামকৃষ্ণের মতে মানুষে দয়া নয়, মানুষে ঈশ্বরের প্রকাশ জেনে মানবজাতির সেবায় ব্রতী হওয়াই মানুষের ধর্ম। রামকৃষ্ণ মিশনের সেবার আদর্শ হলো 'জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।'

বাংলাদেশের ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে রামকৃষ্ণ মিশনের শাখাকেন্দ্র রয়েছে। ঢাকা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে, যা ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বেলুড় মঠের স্বীকৃতি লাভ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ অঞ্চলে এটি অধ্যাত্মচর্চা এবং সমাজসেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের অন্য কেন্দ্রগুলি হচ্ছে: বরিশাল (১৯০৪), নারায়ণগঞ্জ (১৯০৯), মানিকগঞ্জের বালিয়াটি (১৯১০), সিলেট (১৯১৬), ফরিদপুর (১৯২১), হবিগঞ্জ (১৯২১), ময়মনসিংহ (১৯২২), দিনাজপুর (১৯২৩) ও বাগেরহাট (১৯২৬)। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্যাপন ছাড়াও কেন্দ্রগুলি চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা, ত্রাণ, পুনর্বাসন প্রভৃতি কাজও পরিচালনা করে। তথ্য; উইকিপিডিয়া ও বাংলাপিডিয়া

একনজরে জন্মতিথি ও বার্ষিক উৎসবের অনুষ্ঠানসূচী

১৪ চৈত্র ১৪২৩ বাং (২৮ মার্চ ২০১৭ ইং) রোজ মঙ্গলবার,
দুপুর ১.০০ মি : রামায়ণ গান-শ্রীনিমাই দাস ও তার দল
বিকাল ৪.০০মি : শিশুদের চিত্রাঙ্কনপ্রতিযোগিতা
বিকাল ৫.০০ মি : আলোচনা সভা
বিষয়; বিবেকানন্দ ও মানবকল্যাণ
সভাপতি; শ্রীমৎ স্বামী স্থিরাত্মানন্দজী মহারাজ
অধ্যক্ষ, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন চাঁদপুর
প্রধান অতিথি : জনাব আনোয়ার হোসেন
চেয়ারম্যান জেলা পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ
বিশেষ অতিথি : ইঞ্জিনিয়ার অশুতোষ রায়
চীপ স্টাফ অফিসার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা
শ্রীতারাপদ আচার্য্য
সাধারণ সম্পাদক, সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম, নারায়ণগঞ্জ
ডা. শ্রীসঞ্জয় কুমার সাহা
সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, আল-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতাল ঢাকা
রাত ৮.০০মি: সঙ্গীতানুষ্ঠান
প্রখ্যাত বেতার ও টিভি শিল্পীদের অংশগ্রহণে বিচিত্রানুষ্ঠান

১৫ চৈত্র ১৪২৩ বাং (২৯ মার্চ ২০১৭ইং) বুধবার
দুপুর ১.০০মি: রামায়ণ গান
বিকাল ৫.০০মি: আলোচনা সভা
বিষয়; শ্রীমা সারদাদেবী ও আদর্শ নারী

সভাপতি :শ্রীমৎ স্বামী ধ্রুবেশানন্দজী মহারাজ
অধ্যক্ষ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মুশন, ঢাকা

প্রধান অতিথি : ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি
মাননীয় মেয়র, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন
বিশেষ অতিথি : শ্রীমৎ স্বামী স্থিরাত্মনন্দজী মহারাজ
অধ্যক্ষ, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, চাঁদপুর

শ্রীমতি নিভা রানী দাস
সভানেত্রী, সারদা সংঘ, নারায়ণগঞ্জ
রাত ৮.০০মি: নাটক; ভাগিনী নিবেদিতা
পরিবেশনায়- সারদা সংঘ, নারায়গঞ্জ

১৬ চৈত্র ১৪২৩ (৩০ মার্চ ২০১৭) বৃহস্পতিবার
দুপুর ১.০০মি: রামায়ণ গান
বিকাল ৫.০০মি: আলোচনা সভা
বিষয় : শ্রীরামকৃষ্ণের বিশ্ব প্রেম

সভাপতি : শ্রীমৎ স্বামী ধ্রুবেশানন্দজী মহারাজ
অধ্যক্ষ, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা

প্রধান অতিথি : জনাব এ. কে. এম সেলিম ওসমান
মাননীয় সংসদ সদস্য নারায়ণগঞ্জ-৫

বিষেশ অতিথি : জনাব রাব্বি মিয়া
মাননীয় জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ

জনাব মঈনুল হোসেন
মাননীয় পুলিশ সুপার, নারায়ণগঞ্জ

শ্রীমৎ স্বামী স্থিরাত্মানন্দজী মহারাজ
অধ্যক্ষ, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, চাঁদপুর

শ্রীপ্রবীর কুমার সাহা
পরিচালক এফ.বি. সি. সি. আই
রাত ৮.০০মি: সঙ্গীতানুষ্ঠান
প্রখ্যাত বেতার ও টিভি শিল্পীদের অংশগ্রহণে বিচিত্রানুষ্ঠান

১৭ চৈত্র ১৪২৩ (৩১ মার্চ ২০১৭) শুক্রবার
সকাল ৮.০০মি: ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেবের বিষেশ পূজা, ভজন সঙ্গীত, পুষ্পাঞ্জলি, হোম
সকাল ৯.০০মি: রামায়ণ গান
দুপুর ২.০০মি: নর নারায়ণ সেবা (প্রসাদ বিতরণ)
বিকাল ৪.০০মি: শিশুদের বিচিত্রানুষ্ঠান
রাত ৮.০০মি: নাটক কুমারী পূজা
পরিবেশনায়- বিবেকানন্দ যুব সংঘ, নারায়ণগঞ্জ
রচনা ও নির্দেশনায়- তারাপদ আচার্য্য

শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জন্মতিথি উৎসব উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকেও বহু ভক্তবৃন্দ আসে এই রামকৃষ্ণ মিশনে। উৎসব আরম্ভ হওয়ার আগেই মিশনের আশেপাশে বসে মেলা। মেলায় থাকে নানারকম প্রসাধনী ও খেলনা, থাকে বিভিন্ন ধরনের খাবার। (উৎসব চলাকালীন সময়ে রামকৃষ্ণ মিশনেও প্রতিদিন দুপুরে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়) । সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে এই লোকজ মেলা।

আমাদের নারায়ণগঞ্জের এই রামকৃষ্ণ মিশনটি চাষাঢ়ার সামনে মিশনপাড়ায় অবস্থিত। মিশনপাড়া মহল্লাটি কোনো একসময় এই রামকৃষ্ণ মিশনের নামেই নামকরণ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশনটি বহু পুরানো, তবু আমি আমার এই পোস্টের মাধ্যমে আবার নতুন করে দেশবাসীকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আশা করি আমার এই পোস্টের মাধ্যমে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের অনেক শিষ্যই নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশনে আসবে। উৎসব হোক আরও আনন্দময়, এই কামনা করি। জয় গুরু জয় গুরু।

ছবি সংগ্রহ: গুগল