ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদ, নারায়ণগঞ্জে বাড়ছে কেনাকাটা

নিতাই বাবু
Published : 19 June 2017, 07:54 AM
Updated : 19 June 2017, 07:54 AM

.

নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল চৌধুরীবাড়ির মার্কেটগুলোতে শেষ মুহূর্তে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। ঈদকে সামনে রেখে মার্কেটগুলোতে এখন ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়, প্রতিবছর ভারতীয় সিরিয়ালের নামে পোশাকর জন্য আমাদের দেশে যেভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যেত, এবার বিপণিবিতানগুলোতে সেসব পোষাক নাই বললেই চলে।

এবার লেহেঙ্গা নামের পোশাকের জন্যই বেশি পাগল উঠতি বয়সের মেয়েরা। তবে সচরাচর দেশে তৈরি বাহারি ডিজাইনের যেসব পোশাক আছে, সেদিকে আকর্ষণ ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবার। তারমধ্যে নারীদের জন্য নানা রকম বাহারি রংয়ের শাড়ি, থ্রি পিস, ফতুয়া ও ছেলেদের আকর্ষণীয় পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, বাচ্চাদের জন্য নানা ডিজাইনের পোশাক শোভা পাচ্ছে দোকানগুলোতে। পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকমের সুতি ও জর্জেটের থ্রিপিসও। ইতিমধ্যে ক্রেতা সামলাতে চৌধুরীবাড়ির দোকানিরা অতিরিক্ত লোকও নিয়োগ দিয়েছেন, যাতে বিক্রি বেশি করা যায় আর ক্রেতার চাপ একটু সামলানোর জন্য।

ইতিমধ্যে রোজা অর্ধেক শেষ হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে ঈদের কেনাকাটা। চৌধুরীবাড়ির মার্কেটগুলোর সামনে বেশি একটা ফুটপাত নাই, তবুও ফুটপাতে যে  ক'টা দোকান আছে, সে কয়টা দোকানের ব্যবসায়ীরা দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর ফলে ব্যবসায়ীদের দেখা গেছে কথা বলারও সময় পাচ্ছেন না তারা। এদিকে যাদের টাকা আছে, যারা বিত্তবান, তাঁরা ঈদের কেনাকাটা করতে বেশিরভাগই সপরিবারে চলে যায় নারায়ণগঞ্জ অথবা ঢাকায়। তবুও ক্রেতার অভাব নেই, উপচেপড়া ভিড়ে, কোথাও কোথাও হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষের, ফলে সৃষ্টি হচ্ছে রাস্তার যানজটও।

ঈদ উপলক্ষে ফুটপাতে ভিরের একটি কারণও আছে। কারণ, শহরের বড়-বড় মার্কেট অথবা শপিংমলগুলোর সামনে ফুটপাতেই বসে জেলাশহরের অন্যতম জমজমাট ঈদের বাজার। সেখানে বিত্তবানদের জন্য কেনার উপযোগী না হলেও, সেখানে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের অনেকটাই স্বস্তির নিশ্বাস।

তাই এখন পবিত্র ঈদ-ঊল-ফিতরকে সামনে রেখে প্রতিদিনই সকাল থেকেই গোদনাইল চৌধুরীবাড়ির প্রধান সড়কে রিকশা, ভ্যান সিএনজি ও অটো রিকশার চাপে অধিকাংশ সময়ই ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ-ডেমড়া-চিটাগাং রোড এর মাঝ পথেই চৌধুরীবাড়ি বাসস্টপ থেকে শুরু হওয়া চিত্তরঞ্জন, লক্ষ্মীনারায়ণ রোডকেন্দ্রীক দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা যায়। এছাড়াও বর্তমান সময়ে গড়ে ওঠা বড়-বড় মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষণীয়। বিশেষ করে চৌধুরীবাড়ির এ, আর কমপ্লেক্স, এম, রহমান সুপার মার্কেট, নজরুল প্লাজা, বৈশাখী মার্কেট, আদর্শ বাজার চৌকি প্লাজায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতাসাধারণের ভিড় লেগেই থাকছে।

এই মার্কেটগুলোর মধ্যে এম রহমান সুপার মার্কেটের 'অনামিকা বস্ত্র বিতান' এর মালিক অপু সরকারের কাছে কেনাবেচার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, "বিক্রি ভালো তাই সামনের কয়েকদিন আরও বেশি বিক্রি হবে বলে আশা করছি।" আদর্শ বাজার 'রাহুল ফ্যাশন' এর মালিক বাসুদেব বলেন, "গতবারের চেয়ে এবার মনে হয় বিক্রি একটু বেশিই হবে, কেননা এখানকার মানুষ এখন বেশি একটা নারায়ণগঞ্জ মার্কেটে যায়না।"

আদর্শ বাজার বৈশাখী মার্কেটের ফাতেমা দোকানগুলোতে শিশু ও নারীদের পাশাপাশি পুরুষের পাঞ্জাবি ও ভাল ব্র্যান্ডের টিশার্ট পাওয়া যায়। একই মার্কেটের প্রতিটি দোকানেই সব বয়সের মানুষের ভিড় লেগেই আছে। বৈশাখী মার্কেটের দোকান মালিক ও কর্মচারীরা জানান, গতবারের চেয়ে এবার এই মার্কেটের বিক্রি অনেক ভালো। বৈশাখী মার্কেটে শুধু পোশাক আর কাপড়ের দোকানই নয়, আছে কসমেটিকসের দোকান, সেন্ডেল, জুয়েলারি। সেসব দোকানগুলোতেও প্রচুর ভিড় যা চোখে পড়ার মত। ওইসব স্বর্ণ আর কসমেটিকসের দোকানে ভীড় থাকলেও এখনো ভীড় লাগেনি সেন্ডেলের দোকানে।

গোদনাইল চৌধুরীবাড়িতে মার্কেটগুলোর পাশাপাশি আছে অনেক নামিদামি টেইলার্সও। রোজার শুরু থেকে টেইলার্সগুলোতে অর্ডার নিলেও এখন অনেক টেইলার্সেই অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এর কারণ, যদি সময়মত ডেলিভারি না দিতে পারে, তাই। বর্তমানে টেইলার্সের দোকানে রাত দিন নির্ঘুম সময় পার করছেন দর্জি শ্রমিকেরা, তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বালিশের কভার, বেডকভার তৈরির দর্জিরাও। সবমিলিয়ে চলছে এক অন্যরকম আনন্দ-উল্লাস। এতো ব্যয়বহুল খরচের মধ্যেও ছেলে-বুড়ো সাবার মুখে হাসি, এই হাসি যেন সেই ঈদের আনন্দের হাসি, হাসি যেন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের পরও থেকে যায়, সেই কামনাই করছি। ঈদ হোক সবার জন্য। ঈদ-মোবারক, ঈদ-মোবারক।