চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে স্থায়ী ট্রাফিক সমাধান জরুরি

নিতাই বাবু
Published : 13 Oct 2017, 07:02 AM
Updated : 13 Oct 2017, 07:02 AM

রাত প্রায় ১০টা, এখনো চৌধুরীববাড়ি বাসস্ট্যান্ডে মহা-যানজট। রাস্তা পারাপারে সাধারণ মানুষের মরণ ফাঁদ।

মাননীয় মেয়র,

আমরা আপনার নারায়ণগঞ্জ সিটি গোদনাইল এলাকাবাসী। গোদনাইল এলাকার চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডটি হলো আমাদের প্রাণ। আমাদের কোনো জায়গায় যেতে হলে চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকেই যেতে হয়। চৌধুরীবাড়ি আসলেই শরীর শিউরে ওঠে যানজটে আটকে পড়া গাড়ি দেখে। এই আটকে পড়া গাড়ির পাশ কেটেই আমাদের রাস্তা পাড় হতে হয়। এখানে যানজট নিরসনের দায়িত্বে আছে দুইজন 'হিরোইনচি'। তবে ওদের কেউ কমিউনিটি পুলিশ হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। ওরা নিজেরা নিজেদের ধান্ধায়-ই হাতে লাঠি নিয়ে ট্রাফিকের কাজ করে। কাজ যাই করে, তার চেয়েও বেশি করে গাড়ি থেকে মাসোয়ারা আদায়ের ধান্ধা।

এভাবেই চলছে মাসের পর মাস, আর বছরের পর বছর। কিন্তু এই যানজটের ভূক্তভোগী এলাকার সবাই হলেও এ বিষয়ে কেউ কথা বলে না। সময়সময় সাধারণ মানুষ রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনার শিকারও হয়। তখন দু'একটা গাড়ি ভাংচুর ছাড়া আর কিছুই হয় না। দুর্ঘটনার ঘটে যাওয়ার দু'চার ঘন্টা পর এমনিতেই থেমে যায় সব। ভুলে যায় কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কথা। আবার শুরু হয় যানজটে আটকে পড়া গাড়ির চিপা গলি দিয়ে রাস্তা পারাপার।

আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন যে, চৌধুরী বাড়ি বাসস্ট্যান্ড হলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল এলাকায়। যা আপনার সিটি কর্পোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। বর্তমানে এটি বিশাল চৌরাস্তার মোড়। তবে ব্যস্ততম ও যানজটের জন্য অন্যতম মোড় বা বাসস্ট্যান্ড। যা নারায়ণগঞ্জ টু ডেমরা ভায়া চিটাগাংরোড নামে সবার কাছে সুপরিচিত। আপনি এই চৌধুরীবাড়ি হয়ে কোথাও গেলে আপনার চোখেও পড়বে এই জ্বালাময়ী যানজটের চিত্র।

মাননীয় মেয়র,

শুনেছি গত মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০১৭   চৌধুরীবাড়ি বউবাজার এসেছেন। তখন হয়ত নিজ চোখেই চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডের যানজটের চিত্র দেখেছেন। আবার আপনি না-ও দেখতে পারেন, কেননা আপনারা কেউ আসলে তো মোড়ে-মোড়ে পুলিশ বাহিনী থাকে। রাস্তা থাকে খালি, যেখানে গন্তব্য সেখানে চলে যান আরামে। আপনাদের সেই যানজটের কবলে কখনো পড়তে হয় না। যত জ্বালা আর যানজটের অসয্য যন্ত্রণা সইতে হয় আমাদের সাধারণ মানুষের। আমরা যখন কোনও জরুরি কাজে এলাকার বাইরে যাই, তখন এই চৌধুরী বাড়ি হয়ে যেতে হয়; না হয় খুঁজতে হয় বিকল্প রাস্তা। আসা-যাওয়া করতে হবে শীতলক্ষ্যা নদী পাড় হয়ে, না হয় পঞ্চবটী-মোক্তারপুর রোড দিয়ে।

মাননীয় মেয়র,

বর্তমানে বাংলাদেশে যেমন বাড়ছে মানুষ, তেমনি বাড়ছে যানবাহন। শুধু নারায়ণগঞ্জেই নয়, সবকটি জেলাশহরেই কচুরিপানার মতোই বাড়ছে যানবাহন। শুনেছি কচুরিপানা না-কি একরাতে সাতটি করে কচুরিপানা জন্ম দেয়। ঠিক তেমনি করেই বেড়ে চলেছে ট্রাক, বাস, ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, সিএনজি, ইজিবাইক-সহ ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসবের তুলনায় বাড়ছে না রাস্তার প্রস্থতা, তৈরি হচ্ছে না কোনও নতুন রাস্তা। দেশের নামকরা কয়টি মহাসড়ক ছাড়া শহরের আশেপাশের কম প্রস্থতা রাস্তাগুলো ঠিক আগের মতোই আছে। যেমটা আছে নারায়ণগঞ্জ শহরের ভেতরের টানবাজার, নিতাইগঞ্জ, বাবুরাইল, তামাকপট্টি-সহ আশেপাশের রাস্তাগুলো। এ বিষয়ে আপনি নিজেও অবগত আছেন মাননীয় মেয়র। তবে আপনার সুদৃষ্টির ফলে বর্তমানে বহু রাস্তাই নতুন সাজে সেজেছে। তা অস্বীকার করার মতন নারায়ণগঞ্জ সিটিতে এমন কোনও মানুষ নেই। যেখানে ছিল নর্দমার পঁচা পানির খাল, সেখানে আজ সুবিশাল পাকা রাস্তা। সবই আপনার উন্নয়নের ছোঁয়া, মাননীয় মেয়র।

মাননীয় মেয়র,

দেশের যেকোনো স্থান থেকে নারায়ণগঞ্জ আসার প্রবেশদ্বার হলো তিনটি বা চারটি। এই তিন-চারটি প্রবেশদ্বারের মধ্যে একটি হলো, নারায়ণগঞ্জ টু ডেমরা রোড। এই নারায়ণগঞ্জ টু ডেমরা রোডটি হলো ব্যস্ততম সড়কের মধ্যে অন্যতম। নারায়ণগঞ্জ হতে ডেমরা পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার। এই ১৪ কিলোমিটার পথে বাসস্টপ আছে অনেকগুলো, মাত্র দু'টি বাসস্ট্যান্ডে আছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। একটি চিটাগাং রোড, অপরটি সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে। তাও আদমজী শিল্প নগরীর শ্রমিকদের সুবিধার্থে। আমি অন্যসব বাসস্ট্যান্ডের কথা বলবো না, বলবো চৌধুরী বাড়ি বাসস্ট্যান্ড মোড়ের কথা। কারণ, এই এলাকাটি এখন বলতে গেলে বলা যায়, মিনি শিল্পনগরী। দৈনিক হাজার-হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ এই চৌধুরীবাড়ি-ডেমরা রোডটি অতিক্রম করে। অথচ এই জনবহুল ব্যস্ততম একটা বাসস্ট্যান্ডে স্থায়ীভাবে কোনও ট্রাফিক ব্যবস্থা নেই।

আমি চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে স্থায়ী ট্রাফিক ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে লিখেছিলাম, ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে । লেখার শিরোনাম ছিল; চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে স্থায়ীভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি! লেখাটা প্রকাশিত হয়েছিল গত ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে।

এই লেখা ছাড়াও গত ৫ মার্চ ২০১৭ ইং রোজ রবিবার বিকাল ৩টায় নাগরিক সাংবাদিকদের সাথে নগর প্রধানের সাক্ষাতে গিয়েছিলাম ব্লগ ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে। আপনার হাতে তুলে দিয়েছিলাম নাগরিক সমস্যা নিয়ে সংকলন 'নগর নাব্য মেয়র সমীপেষু-২০১৭' । আরও গিয়েছিলেন নাগরিক সাংবাদিক ফয়সাল, আশিক, জয়নাল আবেদীন, শফিক মিতুল, ব্লগ পরিচালক আইরিন সুলতানা। আপনি বইখানা হাতে পেয়ে নিশ্চয়ই পড়ে দেখেছেন। বইটিতে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র গড়ে ওঠা বাসস্ট্যান্ড নিয়েও লেখা রয়েছে।

মাননীয় মেয়র,

সেই সাক্ষাতে আপনার দরবারে আমি অধম ভাগ্যক্রমে দু'চারটি প্রশ্নসহ কিছু দাবি রাখার সুযোগ পাই। দাবিগুলোর মধ্যে একটি দাবি ছিল, চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে একটি ফুট ওভারব্রিজ, না হয় স্থায়ীভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থা করে দেওয়া। আপনি ফুট ওভারব্রিজের বিষয়ে বলেছিলেন, এটা সড়ক মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার।

যদিও চৌধুরীবাড়ির ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে কোনও কথা বলেননি, তবু আমি শতভাগ আশায় ছিলাম। মনে করেছিলাম চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে স্থায়ীভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থা হয়ে যাবে। যেহেতু আমি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়রের কাছে দাবি জানিয়েছি, তাই। কিন্তু না, ৮ মাস গত হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে কোনও ট্রাফিক চোখে পড়েনি, এখন বুঝতে পেরেছি, চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে আর কোনদিন ট্রাফিক ব্যবস্থা হবে না। গোদনাইল এলাকাবাসীও নিরাপদে নির্বিঘ্নে রাস্তা পারাপার হতে পারবে না।

মাননীয় মেয়র,

চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ড বা মোড়টি গোগনাইল এলাকাবাসীর নাভি। এই মোড় থেকে পশ্চিমে তাঁতখানা হয়ে ফতুল্লা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। যা কিছুদিন আগে ছিল ভাঙ্গাচোরা রাস্তা, এখন আপনার সুদৃষ্টির ফলস্বরূপ সুবিশাল পাকা রাস্তা। এই রাস্তাটি পাকা হবার পর, রাস্তার বেশিরভাগ জায়গাই থাকে ভ্যানগাড়ি আর ফলব্যবসায়ীদের দখলে।

মেয়র আইভীর উপহার নতুন রাস্তা, পাশেও বেশি। তবু রাস্তাটি ফুল ব্যবসায়ী আর রিকশা ভ্যানগাড়ির দখলে। একটা মালবাহী ট্রাক আসলেই লেগে যায় যানজট।

নতুন করে রাস্তার প্রস্থতা বাড়লেও তা আর চোখে দেখা যায় না। চোখে পড়ে শুধু ফলের দোকানের সামনে রাখা ঝুড়ি আর রাস্তার পাশে থাকা কাঁচা তরকারির ভ্যানগাড়ি। আর পূর্বদিকে আরামবাগ, লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস্, চিত্তরঞ্জন কটন মিলস্ ও শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ে যাওয়ার রাস্তা। তা-ও একইরকম অবস্থা, যে যেভাবে পারছে নিজ দোকানের সামনে বসাচ্ছে হকার।

তাই একটা গাড়ি মোড় নিতে গেলেই শুরু হয় যানজট, দীর্ঘসময় ধরে বসে থাকতে হয় রাস্তায়। একপর্যায়ে মহা-যানজটের কবলে পড়ে যায় নারায়ণগঞ্জে আসা-যাওয়ার সকল মানুষ ও এলাকাবাসী। স্থায়ীভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকার কারণে আটকে পড়া গাড়ির চিপা-চাপা দিয়েই মানুষকে রাস্তা পারাপার হতে হয়, মাননীয় মেয়র সাহেবা। এভাবে রাস্তা পারাপারের সময় ঘটে যায় দুর্ঘটনাও। সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মহা-যানজট এই মোড়ের নিত্যদিনের সঙ্গী। ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকার কারণে গাড়িচালকেরা যার যার মতো করেই গাড়ি চালায়। ফলে সৃষ্টি হয় যানজট, ঘটে দুর্ঘটনা।

বর্তমানে এই চৌধুরীবাড়ি এলাকার চারদিকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নীট গার্মেন্টস। শিল্প নগরী বলা না হলেও কিছুদিনের মধ্যেই এই এলাকাটি শিল্প নগরীকে ছাড়িয়ে যাবে আশা করি। এখানে আছে বহু নামীদামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও মার্কেট। জনসংখ্যার দিক দিয়ে ২০ বছরের আগের তুলনায় এখন চারগুণেরও বেশি। বর্তমানে ছোট শিশুদের স্কুলগুলো সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়। এরপর শুরু হয় প্রাইমারি ও হাইস্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের আসাযাওয়া। তারও আগে থেকে যানজটে রাস্তা থাকে জ্যাম, আটকে থাকে যানবাহন।

পরিবারের অভিভাবকেরা শিশুদের নিয়ে আসাযাওয়া করে যানজটের ভেতর দিয়ে। রাস্তা পারাপারের সেই দৃশ্য দেখলে মনে আতংক জাগে। স্থায়ী ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকলে আর এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে রাস্তা পারাপার হতে হতো না। সবাই নিরাপদে নির্বিঘ্নেই সুন্দরভাবে রাস্তা পারাপার হতে পারতো।

আমি গোদনাইল এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আপনার কাছে আমার মিনতি করছি ও দাবি জানাচ্ছি, চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে স্থায়ীভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থা করে দিন। সেই সাথে চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ড যানজট মুক্তসহ আমাদের নিরাপদে নির্বিঘ্নে রাস্তা পারাপার হতে সাহায্য করুন।