বিডি নিউজ ব্লগারদের একটি সফল মিশন !!!

সুলতান মির্জা
Published : 7 July 2012, 11:12 AM
Updated : 7 July 2012, 11:12 AM

কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, ব্লগার নুরুন্নাহার শিরীন আপু, ব্লগার আইরিন সুলতানা আপু,ব্লগার কৌশিক আহম্মেদ ভাই,ব্লগার সবাক, ব্লগার আব্দুর রাজ্জাক ভাই, ব্লগার সিনথিয়া আপু, ব্লগার আবুল মোমেন ভাই, ব্লগার কাজী মুরাদ, ব্লগার উত্তর পুরুষ(শামীম ভাই), ব্লগার জিনিয়া (জিনিয়াস ব্লগার), ব্লগার হৃদয়ে বাংলাদেশ, ব্লগার জাহেদ উর রহমান, ব্লগার মঞ্জুর মোর্শেদ, ব্লগার পাগল মন, ব্লগার সুমিত চৌধুরী, ব্লগার জামান সহ আরও সহ সকল ব্লগারদের প্রতি যারা এই কার্যক্রম কে সফল করার লক্ষে ভিবিন্য ভাবে সহযোগিতা করেছে।

বিশেষ ধন্যবাদ জানাই শরত্‍ চৌধুরী সামহোয়ারইন ব্লগ মডারেটর। হাসান বিপুল বিডি নিউজ ২৪ ডট কম এর সাংবাদিক। আনসার আলী বিডি নিউজ প্রতিবেদক কক্সবাজার।

আরও অনেকেই রয়েছেন যাদের নাম প্রকাশ করতে পারি নাই। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

বৃহস্পতিবার রাত: মেঘনা সেতুতে একটি ট্রলারের দুর্ঘটনার কারণে পথিমধ্যে আড়াই ঘন্টার যাত্রা স্থগিত ফলে নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পরে কক্সবাজারে পৌঁছাই। যাত্রার মধ্যে আমার সাথে ফোনে কথা বলেন, লণ্ডন থেকে কাজী মুরাদ ভাই, দীর্ঘক্ষন কোথায় বলে আমাদের কিছু দিক নির্দেশনা দিলেন। তার পর কথা হয় আমাদের আরেক ব্লগার আমার খুব প্রিয় চট্টগ্রামের সুমিত চৌধুরীর সাথে। কথা ছিল তাকে আমরা সঙ্গে করে নিয়ে যাব, শর্ত ছিল চট্টগ্রামের কাছাকাছি গিয়ে তাকে ফোন দিতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য সারা রাতের ধকল কাটিয়ে হটাত্‍ করে শরীর ক্লান্ত হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা আর মনে নেই যখন ঘুম ভাঙল তখন দেখি আমরা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতু পার হয়ে পুটিয়া চলে গেছি। যেহেতু সুমিত থাকে হলো আন্দারকিল্লা যেহেতু সেহেতু ইতিমধ্যে আমরা সুমিতের চেয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পার হয়ে চলে গেছি। সুমিত কে ফোন দিলাম কিন্তু তাকে আর নিতে পারিনি বলে ক্ষমা চাইলাম।

শুক্রবার সকালবেলা ১০ টায় কক্সবাজারে গিয়ে পৌছলাম, বাস থেকে নেমে দেখতে হল বৃষ্টি। তারপর খুব কস্ট করে গিয়ে আমরা আমাদের সাথে থাকা ত্রাণ সামগ্রী গুলো হিসেব করলাম ও কিভাবে দেওয়া যেতে পারে সেই মাফিক প্ল্যান করলাম। আমাদের ত্রাণ টিমে ছিলেন, বিডি ব্লগের ব্লগার কৌশিক আহম্মেদ ভাই, ব্লগার সবাক ভাই, ব্লগার শরত্‍ চৌধুরী ভাই, ব্লগার মঞ্জুর মোর্শেদ ভাই, ব্লগার আরিফ হোসেন সাঈদ, ব্লগার আলোর সন্ধানে(ইমন) ও বিডি নিউজ ২৪ ডট কমের ফিচার বিভাগের প্রধান হাসান বিপুল। সবার সাথে আমি এই প্রথম। এর মধ্যে সকাল বেলা যেহেতু কাজের পরিধি অনেক আর তাই নো নাস্তা নো পানি। কৌশিক ভাই ও বিপুল ভাই কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের সকলকে ব্রিফ করে বেরিয়ে পড়লেন কক্সবাজারের এ ডি সি(অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) জেনারেল মহোদয়ের এর উদ্দেশ্যে কারণ ছিল আমাদের বিডি ব্লগের অন্যতম জনপ্রিয় ব্লগার আব্দুর রাজ্জাক ভাই এডিসি মহোদয় কে আমাদের সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

কিছুক্ষণ এর মধ্যে কৌশিক ভাই ও বিপুর ভাই ফিরে এলেন সকল প্রকার প্রশাসনিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। সেই সাথে যেহেতু কক্সবাজারের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা ছিল পত্র পত্রিকা অবলম্বনে মাত্র। এ ডি সি মহোদয় বাস্তব চিত্র তুলে ধরে কোথায় কোথায় ত্রাণ কার্যক্রম চালানো যায় সেই বিষয়ে কৌশিক ভাই ও বিপুল ভাই কে নির্ধারন করে দিলেন সদর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ বাকখালি নদীর ঝিলাংজি ইউনিয়নে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর জন্য। পাশাপাশি উনার ব্যবহত জিপ গাড়িটি আমাদের উদ্দেশ্যে বরাদ্দ দিলেন। ফোন করে সদর উপজালার নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঝিলাংজি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে বিষয়টি অবহতি করে দিতে ভুললেন না। সময় নির্ধারিত হলো বিকাল চারটার মধ্যে আমরা ঝিলাংজি ইউনিয়ন পরিষদে ত্রাণ কার্যক্রম চালাব ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করব। আমাদের টিম সেই ভাবে প্রত্যেকে যার যার কাজ বুঝিয়ে দিল।

এইবার আমরা গোসল ছাড়া সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার খেলাম বেশি না কম করে কারণ হাতে সময় ছিল কম। চারটার কিছুক্ষণ পূর্বে এ ডি সি মহোদয়ের পাহান জিপ গাড়িটি আমাদের নির্ধারিত সাথে এলো। ঠিক ওই সময় উল্লেখিত স্থানে গিয়ে যা দেখতে হলো

দুপুর থেকে অপেক্ষা। অসহায় মানুষ গুলো দাড়িয়ে রয়েছে কেউ তাদের পাশে আসবে শুনে। যাদের বেশির ভাগ বয়সে প্রবীণ পরনে মলিন জামা-কাপড়, দুই চোখে এক ধরনের স্বপ্নহীন ধূসর কালো ছাপ নিজের চোখে না দেখলে বুঝার উপায় নেই। কিছু দিন আগেও তাদের ঘর ছিল, মাথা ঘুচানোর মত মাথার উপরে একটা ছায়া ছিল, বুকের গহীনে স্বপ্ন ছিল। কিন্তু আজ আর অনেক কিছুই নেই, সব নিয়ে গেছে পাহাড়ী ঢলে, ঘর-বাড়ি,ফসল, এক কথায় বেচে থাকার সকল অবলম্বন। শুধু রয়ে গেছে এই সকল বানভাসী মানুষ গুলো। যাদের চোখের দিকে তাকালে চোখ গরিয়ে জল পড়বে। হা বলছি সাম্প্রতিক কালের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভয়াবহ প্রাকৃতিক ধংস লীলার কথা। যা আপনারা ইতিমধ্যে শুনেছেন, সেখানে পাহাড় ধসে, বন্যার পানিতে ভেসে নিহত হয়েছে ১১৯ জনের মত,নারী ও শিশু, খোলা আকাশের নিচে রয়েছে এখনো শত শত অসহায় পরিবার। এক কথায় অমানবিক।

অবশেষে সেই কাঙ্খিতক্ষণ বিডিনিউজ ব্লগের ব্লগাররা এক এক করে তুলে দিল তাদের হাতে, যতটুকু সামর্থে ছিল। কিছু তা সময়ের জন্য তাদের মলিন মুখ খানা খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠল। আমি দেখেছি সেই চিত্র। মনের অজান্তে আমার দুই চোখ দিয়ে বের হয়ে গেল কয়েক ফোটা জল। এ যেন আনন্দের জল।
আর পারছি না। থাক সেই সব কথা।

সেই বানবাসী, ঘরহারা মানুষের বিপদের দিনে বিডি নিউজ ব্লগের ব্লগাররা হোক না আমাদের মানবতা ছিল গুটিকয়েক মানুষের জন্য। কিন্তু এই তৃপ্তি কম কিসে। অন্তত অনেক কিছু করতে পারিনি কিন্তু যতটুকু করতে পেরেছি, তা কম নয়। সেটা বিডি নিউজ ব্লগের জন্য এক দৃষ্টি নন্দন মাইলফলক হয়ে থাকবে সারা জীবনের জন্য। এখন আমরা ও বলতে পারব, আমরা বিডি নিউজ ব্লগের ব্লগাররা শুধু ব্লগে নয় ব্লগের বাইরে ও কিছু করে দেখানোর মত যোগ্যতা অর্জন করেছি।

শুধু মাত্র বিডি নিউজ ব্লগ নয় অন্যান্য ব্লগের ব্লগারদের ও যেন এটা এক শিক্ষণীয় অধ্যায়।

এই মহতী কার্যে সংশ্লিষ্ট সকল ব্লগার দের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা। যারা প্রবাসে থেকে ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের কে ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করতে চাই না। তবে আশা জাগানিয়া হয়ে যেন চিরদিন পাশে পাই সেই প্রত্যাশা রইল। হয়তো বিডি ব্লগে আমি থাকবো না কিন্তু আশা প্রকাশ করব এই ধরনের মহতী কাজ যেন যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে।

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।