চিটাগাং বিসিএসআইআর গবেষণাগারের ডিরেক্টরকে ফের প্রাণনাশের চেষ্টা এবং আমার কিছু ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 5 April 2016, 05:46 PM
Updated : 5 April 2016, 05:46 PM

গত ৩০ শে মার্চ বিসিএসআইআর গবেষণাগারের ডিরেক্টরকে ফের প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়। সেদিন সকাল ৭টায় গবেষনাগারের একটি টিম গবেষণার  স্যাম্পল কালেকশনের জন্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার রাবার বাগানের দিকে রওয়ানা হয়। তাদের সাথে ডিরেক্টর নিজেও যোগ দেন। গবেষণার  সেই অভিনব যাত্রায়  একজন অতিথি  হিসেবে আমারও যাওয়ার সুযোগ হয়। গাড়ি প্রথমে মাটিরাঙার দিকেই ছুটছে। সেখান থেকে  রাবার বাগান ভিজিট,রাবার গাছের চারা সংগ্রহ,কিভাবে রাবার চারা প্রক্রিয়াজাতকরন করা হয় দেখা হবে। তাই রাবার ইনডাসট্রি ভিজিট করা হবে। 

  1. গাড়িতে রাঙামাটির বিসিএসআইআর এর আরেকটি সাব ষেটশন  আছে। সেখানকার কর্মচারি  নেসার উদ্দিন খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালিতে   পাংকু উপজাতি আছে যারা মানুষ খেকো হিসেবে পরিচিত। তাদের নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে লাগলো। তারা নাকি মা বাবা মারা গেলে নিজেরাই  মা বাবার মৃত দেহ খেয়ে ফেলে। তাদের নিয়েও অনেক গবেষনা আছে। তাদের বিশ্বাস  মা বাবা কষট করে তাদের বড় করে। মাটি বা কবর দিলে মা বাবার আত্মা দূরে  চলে যায়। এতে তারা কষট পাবে।তারা যেমন তাদের মা বাবার পেট থেকে পৃথিবীতে এসেছে তাই তারা ও তাদের মা বাবা কে খেয়ে পেটে আপন করে রেখে দিতে চায়। এমন ভয়ংকর গল্প   শুনে সবাই অবাক হয়। 
  1. মাটিরাঙার রাবার বাগান পর্যবেক্ষণ করার পর টিমের সবাই আলুটিলা রহস্যময় গুহা দেখার  জন্য রওয়ানা হয়।গুহার সামনেই লেখা আছে গুহায় প্রবেশ করতে হলে পর্যটককে সাহসী হতে হবে। নেসার  উদ্দিন আগুনের দুটি মশাল  নিয়ে এল। অন্ধকারময় আর রহস্যময় গুহায় প্রবেশ  করতে আগুনের আলো দরকার। সেই গুহার গা ছম ছম করা অভিজ্ঞতার সাথে গবেষনার জন্য একটি রেয়ার কচু চারা সংগ্রহ করল। সেখান থেকে বিসিএসআইআর গবেষনাগারের রাঙামাটি শাখা  ভিজিট এর উদ্দেশ্য বনরুপায় পৌছালে  সেখানে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রীজ দেখে চিটাগাং বিসিএসআইআর গবেষনাগারের গেস্ট হাউজে গাড়ি পৌছায় প্রায় রাত ১০টায়।এদিকে ডিরেক্ট মিসেস মাহমুদা খাতুনের আর্মি অফিসার ছেলে মায়ের সাথে দেখা করার জন্য চিটাগাং  জিইসি মোড়ে অপেক্ষা করছিল। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্যান্টনমেন্ট  ফিরে যেতে হবে।
  1. (ছোট ছেলের সাথে নেভাল একাডেমীতে)
  2. তাই রাঙামাটি থেকে ফিরেই তাড়াহুড়া করে অফিসের গাড়ি নিয়েই রওয়ানা হন। সংগে ড্রাইভার আনিস আর সায়েন্টিস্ট সাইদুর রহমান। গাড়ি চিটাগাং  ট্যাকনিক্যাল মোড় ক্রস করতেই দুজন মোটর সাইকেল আরোহী সন্ত্রাসী হামলা চালায়। ভয়াবহ হামলায় তারা বেচেঁ গেলেও গাড়ি ভেংগে চুরমার । সেদিন সারা রাত আতংকে কারও ঠিকমতো ঘুম হলো না। এ নিয়ে তাকে দুইবার প্রাননাশের চেষ্টা করা হয়। 
  1. এর আগে চৌদ্দ জন সায়েন্টিস্ট কে প্রাননাশের মোবাইলে হুমকি দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে গেস্ট হাউজের ডাইনিংয়ে এই বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।শত্রু কি ভিতরের কেউ নাকি বাইরের বোঝা যাচেছ না। সেদিন সবাই ল্যাবে চলে যাওয়ার পর আমি আমার রুমে চলে আসি। ঠিক মধ্য দুপুর। হঠাৎ বিশ বাইশ বছরের ছেলে   উদ্ভ্রান্ত  ছেলে স্যার কি রুমে আছেন বলে ডাকতে আসে। আমি অবাক হয়ে বের এসে তাকে বলি এখন অফিস টাইম। সবাই ল্যাবে গেছে। কি নাম আপনার? ঘটনা বুঝতে বুঝতেই পালিয়ে যায়।যদিও সারাক্ষণ আনসার বাহিনী পাহাড়া দিচেছ। একের পর এক ভয়ংকর ঘটনা গুলো ঘটে যাওয়ার পর সবার মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এই ঘটনায় ডিজিএফ এবং কমান্ডার কে পুনরায় জানানো হয়েছে। হাটহাজারি থানার নতুন পাড়া এবং বায়জিদ  থানার বালুচরা নিয়ে সুবিশাল  এই গবেষনাগার।শহর থেকে দূরত্ব এবং নিভৃত জায়গায় হওয়ায় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের আধিপত্য অনেক। প্রকৃতির অভয়ারণ্য এই গবেষনাগারটির তদারকির জন্য যথেষ্ট  লোকবলের অভাব।আশা করা যায় নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের আধার এই গবেষনাগারটটিকে রক্ষা, দেশের সম্পদ  রক্ষনাবেক্ষন,দেশের সর্বোচচ মেধাবীদের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা  গ্রহন করবে।