মৃত নারীদের গ্রাম পর্ব: চাদঁপুরের পশ্চিম হাটিলা

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 5 May 2016, 10:00 PM
Updated : 5 May 2016, 10:00 PM

মৃত নারীদের গ্রাম কথাটা শুনলেই হয়তো কেউ কেউ আঁতকে উঠবে ।গ্রামের নাম শুনলেই যে কোন মানুষের মনে ভেসে উঠে টিনের চালের বৃষ্টির শব্দ।পথের ধারে ছোট পুকুর। বাগান বিলাস ফুলের সৌন্দর্যের বিলাসিতায় ছোট টিনের ঘর ভালবাসায় সিক্ত। গ্রামের মানুষের সরলতা।অারো কতো কি!ভাবনার জগত ছেড়ে অামরা যখন বাস্তব জীবনের দিকে তাকাই তখন হয়তো অনেকের চিন্তা থমকে যায়। মেয়েটির নাম লিরা(ছদ্মরূপ) । চারপাসের সম্পর্ক নিয়ে দুর্যোগ দেখে বিয়ে করতে ভয় পেতো।বছর দুই হলো মালটি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে। বয়স অার বাস্তবতার কথা ভেবে একদিন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। বর একজন পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক। আমেরিকাতে গবেষনা করছে।বরের বাবা ও গ্রামের স্কুল শিক্ষক। লিরা ভেবেছিল চিন্তার দিক থেকে উদার হবে। বরের দুই বোন। অামেরিকা জীবনের ব্যস্ত জীবন শেষে সোজা বরের বাবার বাড়ি হাটিলা। লিরার জন্ম ও বেড়ে উঠা ঢাকায়। সংস্কৃতিতে দুই পরিবারের অনেক পার্থক্য।কিন্তু মানবিক চিন্তার দিক থেকেও যে এতো ভয়ংকর কোন সমাজ গ্রাম থাকতে পারে জানা ছিলোনা। বিয়ের পর ঈদে লিরা কে কিছু দেয়া হয়না। যদিও ভেবেছিল গবেষনার ব্যস্ততায় ভুলে গেছে। কিন্তু লিরার সামনেই বাড়ির সবার জন্য টাকা পাঠানো হয়।
ছোট ছোট ভয়ংকর অবহেলা গুলো এড়িয়ে থাকতে লিরা জব নেয়।অাসলে শিক্ষক সাহেব চাকুরিজীবী মেয়ে বিয়ে করতে চেয়েছেন বিয়ের অাগের জমানো অর্থ অার বিয়ের পর তাকে টাকা দিয়ে সহযোগীতা করতে পারবে সে অাশায়। সে নিজেই বন্ধুদের কাছে বলতো। একজন মেধাবী শিক্ষক বরের মানসিকতা নিজেই মিলাতে পারতো না। বরের মা বাবা সব সময় কান ভারী করে রাখতো মেয়ের পিছনে বেশি খরচ করিসনা। অনেক অবিশ্বাস অার শংকা দিয়ে ছেলের কান ভারী করে রাখা হতো। লিরা ধীরে ধীরে টের পায়। সে সময় ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে বরের বাবা, বোন, অারেক বোনের ছোট মেয়ে, বোনের বর অাসে।
গাড়িতেই বরের বোন পা হতে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে কর্কস কনঠে বলে , নাক ফুল কই? বিয়ার চিহ্ন নাক ফুল। শুরু হলো তা নিয়ে কথা শুনানো। তারপর সোনা গয়নার হিসেব নেওয়া। একটানা ঢাকা থেকে জার্নি সোজা গ্রাম হাটিলা। চাদপুরের হাজীগনজ থানা। সেখানে থেকে অারও কয়েক ঘনটা। যেখানে এই যুগে পুকুরের ময়লা পানি দিয়ে রান্না হয়। নারী মানে বাড়ির বাদী। অলপ দুই এক দিনের মধ্যে দেখলো ঘরের বউ কে সবাই তুই বলে তুচছ তাচিছলের সাথে ডাকে। বরের সাথে রাতে কি কি কথা হয়েছে শাশুড়ি কে বলতে হবে। কয়টায় ঘুম থেকে উঠেছে শশুর হিসেব নেয়। ছোট ছোট মেয়েদের বিয়ে, বাল্য বিয়ে, বহু বিবাহ অার যৌতুকের ভয়াবহতা কেউ জানেনা। ২০১৬ সালে বাংলা দেশের অনেক উননতি সবাই দেখছে। কিন্তু গ্রাম গুলো কেমন আছে কেউ খবর নেয়না। গ্রাম উন্নয়ন নিয়ে কন পদক্ষেপ নেই। সিক্ষার মানবিক দিক গুলো চর্চা নেই।অধিকাংশ মানুষ সার্থপর,হীনমন,লোভী অার মাদকের ভয়াবহতা কি নেই।এক সপতাহের মধ্যে লিরা প্রতিবাদী হয়ে উঠে। কিন্তু সেই প্রতিবাদের পরিনাম শুধুই মৃত্যু।ডিজিটাল যুগেও হাটিলা গ্রামটা মৃত নারীদের গ্রামই বলা যায়।যেখানে নারীদের জীবন অার মন মৃত নারীদের আত্মা ছাড়া আর কিছুইনা।