কাজের বুয়া সংস্কৃতি! শো অফ নয় সচেতন হোন

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 20 Nov 2016, 08:19 PM
Updated : 20 Nov 2016, 08:19 PM

"কাজের বুয়া! "ইংরেজিতে যাকে সবাই Maid Servant বলে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় এখন সব কিছুইতে একটা ব্যবসায়িক রূপ থাকে। অনেক ধরনের Maid Servant আছে। যেমন বেবি সিটার, গভর্নারস, হোম মেকার ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত যে শব্দটা হলো "কাজের বুয়া"। আর এই কাজের বুয়া অনেকটা আমাদের সামাজিক অবস্থানকেও তুলে ধরে ।

তাই মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোতেও সংসারে যতো হিসাব নিকাশ থাকুক ছুটা বুয়া কিংবা সিজনাল বুয়া রাখতেই হবে। কোন একদিন আমার বাসায় কলিংবেল বাজলো।
আমি ভিতর থেকে দেখলাম একটা মহিলা। আমি সময় নিলাম। সে আবারও বেল বাজালো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কে? "
মহিলা, " আমি হালিমার মা। দাড়োয়ানের কাছে শুনলাম আপনারা গত কালকে এই ফ্লাটে আসছেন। তাই কাজ নিতে আইছি। দরজা খুলেন। "
আমি ভিতর থেকেই বললাম," আমার কাজের মানুষের দরকার নেই। "
মহিলা," ওম্মা হেতি কি কয়। এতো বড় ফ্লাট লই থাকবো কাজের বেডি লইতো ন। দরজা খুলেন না কেন। আই আননেরে দেখতাম। "

আমি ধৈর্য ধরে বললাম, " হালিমার মা আমার বুয়া বাপের বাড়ি থেকে পাঠাবে। তোমাকে লাগবে না। "
মহিলা, " সব ফ্লাটে আই কামের লোক দেই। আমি কাম করি। আন্নে অহন অন্য জায়গার বুয়া আনবেন এটা কেমন কথা।"
আমি বললাম, " আমি অন্য জায়গার তো তাই অন্য জায়গার বুয়া দরকার। "
মহিলা, " আন্নে দরজা খুলেন। দুইডা কথা কই চইলা যামু।"
রাগ করে আরো চার পাচবার কলিংবেল বাজিয়ে রাগ মিটিয়ে চলে গেলো। আমি দরজা খুলিনি।
এর কিছুদিন পর দুজন লোক ঠিক দুপুরে খাওয়ার সময়ে কলিংবেল বাজালো। যথারীতি ভিতর থেকে দেখলাম দুজন ভদ্র চেহারার ছেলে।
আমি : কে? কাকে চাচেছন?
অতিথি : আমরা ব্যাংক এশিয়া থেকে এসেছি। দরজা খুলেন।
আমি : ব্যাংক এশিয়ায় আমাদের কোন লেনদেন নেই।
অতিথি দুজন: আরে আপু দুই মিনিটের জন্য দরজা খুলেন।
আমি: সরি দরজা খুলা যাবে না।
দরজার সামনে গিয়ে মোবাইলে কল দিলাম ঘরের মানুষকে। সে তখন তার বন্ধু আর সহকর্মি কে নিয়ে বাসায় লাঞ্চ করতে ফিরছে। হাতে নাতে ধরা হলো। উপরে উঠে কেনো দরজা খুলার জন্য পিড়াপিড়ি করেছে। তারা জানালো কোন এক রাখি নামের মহিলা লোন নিয়ে উধাও। অথচ যারা আগে থাকতো তারা বিদেশি ডাক্তার দম্পতি। যাই হোক, নোয়াখালীর চালাক চতুর দাড়োয়ানের ভাষ্য সে মনে করেছে পরিচিত কেউ।
একটা সিন্ডিকেট ঢাকা শহরে কিংবা বাইরে ডাকাতি, চোর অথবা যেকোন ভয়াবহ কাজের জন্য প্রস্তুত। তাই কাজের বুয়া,ড্রাইভার, দাড়োয়ান, মোবাইলের দোকানদার, এটিএম টাকা তোলার সময় সচেতন থাকুন। একটু হেঁয়ালি অনেক বড় বিপদ নিয়ে আসতে পারে। কারও উপর ভরসা করার আগে নিজের উপর ভরসা রাখুন। সামাজিক মর্যাদা অবস্থান শো অফ করার চেয়ে নিজের ঘরের কাজ নিজে করুন।একটু কষ্ট হলেও জীবনটা নিরাপদ থাকুক।