‘ফ্রেঞ্চ ওমেন ডোন্ট গেট ফ্যাট’- মেরিল গুইলিয়ানো (পর্ব- ১)

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 25 March 2017, 01:04 AM
Updated : 25 March 2017, 01:04 AM

ফরাসি নারীরা মোটা হয়না। কথাটা শোনার পর হয়তো অনেকেই থামবে। কপাল কুচকাবে। তারপর চিন্তা করবে। কিন্তু কেন? কি কারণে তারা মোটা হয়না? পৃথিবীর সব নারীদের মতো ফরাসি নারীরাও ব্রেড খায়, পেস্ট্রি খায়, ড্রিঙ্ক করে এবং তিন বেলার খাদ্য ও আনন্দের সাথে গ্রহণ করে।

শুধু তাই নয় নারীদের জীবনেও আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, মজা, প্রেম, বন্ধুত্ব আর আছে জীবন শৈলী। সবার সাথে সব কিছু মিলে গেলেও এই জীবন যাত্রা আর জীবন শৈলীতে আছে কিছু পার্থক্য। আর এই পার্থক্যগুলো নিয়ে বর্তমানে ফরাসি বই জগতে মেরিল গুইলিয়ানোর নাম বেশ জোরালো ভাবেই এসেছে। তার লেখা বই 'ফ্রেঞ্চ ওমেন ডোন্ট গেট ফ্যাট' বইটি আধুনিক নারীদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আলোচনা এবং তুমুল সমালোচনার মধ্যে বইটি সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে।

এটি এমন একটি বই যা আপনার দেখা চেনা-জানা জীবন এবং চিন্তার পথকে পাল্টে দিতে পারে। প্রথম ২০০৪ সালে এই বইটি প্রকাশ হয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪০টি ভাষায় এই বইটি প্রকাশ হয়েছে। পুরো দুনিয়ায় তিন মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়ে গেছে। নিউইয়র্ক টাইমসে বেস্ট সেলারের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

ফরাসি-আমেরিকান এই লেখক ১৯৪৬ সালের ১৪ এপ্রিল ফ্রান্সের ময়ুভ্রে গ্রান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু জীবনের অনেকটা সময় ধরে তিনি আমেরিকায় পড়াশুনা করেন এবং সেখানেই নিজের পছন্দের কাজগুলো করেন। বর্তমানে তিনি আমেরিকার ম্যানহাটনে স্বামী এডওয়ার্ড গুইলিয়ানোর সাথে বসবাস করছেন। ফরাসি উচ্চারণে তার নামটি হবে মিইহে গুইলিনো। কিন্তু ইংরেজি থেকে বাংলায় করলে তা হয় মেরিলে গুইলিয়ানো।

অন্য যে কোন সাধারণ নারীর মতো ১৯৬৬ সালে একচেঞ্জ স্টুডেন্ট হয়ে আমেরিকায় পড়াশুনা করতে যায়। কিন্তু একটা সময় নিজেকে তিনি খুব ভারী শরীরের একজন হিসেবে আবিস্কার করেন। নিজেকে নিজে দেখে অবাক হন। সেই সময়ের মানসিক অবসাদ তাকে কৈশোরকালীন যন্ত্রণায় ঠেলে দেয়। সে সময় তাদের পারিবারিক মহৎ বন্ধু ফিজিসিয়ান ডঃ মিরাকল এই দুঃসময়ে পাশে থাকেন। তিনি তখন ফ্রেঞ্চ গ্যাস্ট্রনমির মূল বিষয় এবং সময় কে সম্মান জানিয়ে নারীর গোপন বিষয়গুলো বুঝতে শেখায়। সেই মানসিক ধাক্কা তাকে নতুন করে জীবন বুঝতে শেখায়।

আর সেখান থেকে পুনরায় নিজের আর আমেরিকান জীবনের পার্থক্যগুলো খুঁজে ফিরেন। নিজের খাওয়া দাওয়া আর জীবন যাত্রায় যে বিষয়গুলো জীবনকে থামিয়ে দিতে উৎসাহ দেয় সেগুলো আবিস্কার করেন। নতুন করে নিজের জীবনের সাথে বোঝাপরা করেন। নতুন করে পরিচিত খাদ্য এবং খাদ্যাভাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। সমঝোতা করেন যাপিত জীবনটার সাথে। কিভাবে খাদ্যকে উপভোগ্য করা যায়, আর সুন্দর অবয়ব আর সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায়। আনন্দময়, সংবেদনশীল আর একটি শক্তিশালী জীবনকে স্বাগত জানাতে হলে কিছু গোপন রহস্য অনুসরণ করতে হয় প্রকাশ্যে। খুব দায়িত্বের সাথে, খুব ভালোবেসে, খুব প্রাণবন্ত ভাবে। ফরাসি নারীরা সপ্তাহান্তে খাদ্য, পানীয় আর চলাফেরায় ভারসাম্য রাখে।

এই ভারসাম্য দৈনন্দিন জীবনের সাথে কোন বিরোধ নেই। নেই কোন আলাদা ডায়েটিং। খুব সুন্দর ভাবে নিজের মতো জীবনকে উপভোগ করা যায়।

তিনি প্রথমত যে বিষয়টি গুরুত্ব দেন তা হল অন্তরের শৈলী এবং অন্তরকে ভাল রাখা। মানুষের মনোজাগতিক সৌন্দযকে। সেখানে আছে চারটি বিষয়-

১। সাধারণ থাকা, ২। পরিধানের পোশাককে গুরুত্ব দেওয়া, ৩। ব্যবহৃত গহনার সচেতনতা, ৪। কেনাকাটায় সুঅভ্যাস।

এই বিশদ আলোচনায় যাওয়ার আগে ফরাসি নারীদের স্বাভাবিক সৌন্দর্যের পাঁচটি গোপন রহস্য জেনে নেই।

১। ফরাসি নারীরা জানে হাইড্রেশন বা জলয়োজন শরীরের ত্বক এবং চুলের জন্য কতোটা জরুরি। তাই মেরিল গুইলিয়ানো পরামর্শ দেন প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে এক গ্লাস পানি খাওয়া। যা কিনা ফরাসি নারীদের সৌন্দর্য এবং ভাল স্বাস্থ্যের গোপন অস্ত্র। শুধু তা নয় যখন আপনি অনেক বেশি ক্ষুধার্ত তখন হাল্কা স্নাক্স কখনই খাবেন না। আপনার শরীর সত্যিই তৃষ্ণার্ত থাকে। যতোটুকু পানি এবং খাদ্য প্রয়োজন তা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। তাই নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে খাদ্যের সুঅভ্যাস খুব জরুরি।

২। ফরাসি নারীরা উপলব্ধি করে একটা ভাল প্রচলন সব সময় নিজেকে প্রদীপ্ত রাখে। তাই তারা গোসলে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে ভয় পায় না। শরীরের আভ্যন্তরীণ ছোট ছোট বন্ধ ছিদ্র গুলো প্রথমে গরম এবং পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিচর্যা করে স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখতে হয়। প্রতিদিনের নিয়মমাফিক কাজের অংশ হিসেবে করতে হয়। যা ক্লান্ত মস্তিস্ককে কে জাগিয়ে রাখে। একটা প্রানবন্ত গোসল শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং উজ্জ্বল ত্বক তৈরি করতে সাহায্য করে।

৩। ফরাসি নারীদের তাদের দাদিদের পুরনো রীতি নীতি এবং ধর্মানুষ্ঠান শিক্ষা দেওয়া হয়। গুইলিয়ানো বলেন যে তার মা তাকে শিখিয়ে ছিল এমন যে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে পুরো মুখমন্ডল ভাল করে পরিস্কার করতে হবে। একটা সাধারণ মাস্ক মুখে পনের মিনিট রাখতে হবে এবং এক টুকরো শসা চোখে দিয়ে চোখ কে বিশ্রাম দিতে হবে। এর পর স্ট্রবেরির রস মধুর সাথে মিশিয়ে মুখে মেখে দিতে হবে। চুল সব সময় ঠান্ডা পানিতে ধুতে হবে এক টেবিল চামচ ভিনেগার অথবা লেবুর রস মিশিয়ে। যা সব সময় চুলকে উজ্জ্বল এবং নরম রাখে।

৪। ফরাসি নারীরা স্বাস্থ্য ভাল দিক এবং সূর্যের ক্ষতিকর দিক গুলোকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারে। সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে নিয়মিত সানগ্লাস এবং সানক্রিম ব্যবহার করে। প্রতি সপ্তাহে নিজের মতো একান্ত কিছু সময় নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে মনের আনন্দে। হতে পারে খেলাধূলা অথবা গভির মগ্নতা নিয়ে হাঁটাহাঁটি।

৫। ফরাসি নারীরা জানে একটা শৈল্পিক চুলের কাট, একটা প্রিয় পানীয় আর নিজের সবচেয়ে প্রিয় পারফিউম সাথে থাকলে মন আনন্দে থাকে নিজের মতো। অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকা যায়। আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলা একজন ফরাসি সুখি নারীর জন্য প্রয়োজন নেই।

চলবে …।

অনুবাদ: নুরুন নাহার লিলিয়ান।
উৎস: দ্য নিউয়র্ক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান, উইকিপিডিয়া এবং গুইলিয়ানোর ওয়েব সাইট।