রাজধানীর সাইন্সল্যাব এলাকার আশেপাশে ময়লার মহামেলা

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 21 April 2017, 02:12 PM
Updated : 21 April 2017, 02:12 PM

রাজধানী ঢাকা শহরে সাইন্সল্যাব বাসস্ট্যান্ড খুব পরিচিত একটা নাম। কিন্তু অনেক সাধারণ জনগণই জানে না কেন এই রাস্তার নাম সাইন্সল্যাব মোড়। বাটা সিগন্যাল থেকে একটু সামনে গেলেই চারটা রাস্তা চারদিকে গেছে। দুটো রাস্তা একই দিকে শাহবাগ এবং এলিফেন্ট রোডের দিকে । আর বিপরীত মুখে থাকা এই রাস্তা দুটো নিউ মার্কেট এবং মিরপুর রোডের দিকে। প্রতিদিন এই রাস্তায় হাজারও মানুষের আনাগোনা। নিউমার্কেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পপুলার হাসপাতাল, সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ,আড়ং শপিং সেন্টার, বাটা সিগন্যালের মার্কেট, ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মল, গাউছিয়া, সাইন্সল্যাব মোড়ের পাঞ্জাবি মার্কেট অনেক অনেক ব্যস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাছাকাছি হওয়াতে নিয়মিতই এই পথে মানুষ থাকে। কিন্তু মানুষের জন্য এই পথ কতোটুকু নিরাপদ। কতোটুকুই স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ। সেটা নিয়ে আছে অনেক বিতর্ক। তার চেয়ে বড় বিষয় হল যে কারনে এই রাস্তার নাম সাইন্সল্যাব হয়েছে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের অধীনে পরিচালিত বিসিএসআইআর গবেষণাগার এখানেই অবস্থিত। এই গবেষণাগারের নামের সাথে মিল রেখেই এই রোডের নাম সাইন্সল্যাব।

বর্তমান প্রজন্ম এবং আগের প্রজন্মের অনেকেই এই সাইন্সল্যাব সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানে না। এখানে অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দেশি-বিদেশি অনেক গবেষক এবং সরকারি দফতরের অনেক উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন গুণী ব্যক্তিবর্গ এই গবেষণাগারে নিয়মিত যাতায়াত করেন। কিন্তু খুব দুঃখের বিষয় এই গবেষণাগারের ভিতরটা অসাধারণ সুন্দর হলেও বাইরের চারপাশে দুর্গন্ধ আর ময়লার স্তুপ ঘিরে আছে।

কিন্তু কারও কোন দেখ ভাল নেই। জানিনা এই শহরে বসবাস করে এই শহরের মানুষের কতোটুকু ভালোবাসা আছে । যখন আমরা এই দেশকে সত্যি ভালোবাসবো তখন সব কিছুকে সুন্দর রাখার চেষ্টা করবো। এই দেশের রাস্তাঘাট আলো-বাতাস সব তো আমার আর আমাদের জন্য। জানি না কেন কেন সবাই দেখেও না দেখার ভান করে। এই গবেষণাগারের মেইন গেট থেকে একটু সামনে এলেই উড়াল সেতু। অপর পাশে আড়ং শপিং সেন্টার। বিপরীত পাশে উড়াল সেতু থেকে নামার পর যে কি পরিমান ভয়াবহ দুর্গন্ধ আর বাজে ময়লার স্তুপ তা দেখলে যে কোন সুস্থ্য মানুষ বমি করে ফেলবে। তারপরও চোখ অর্ধেক বন্ধ করে আর নাকে হাত চেপে পথচারিরা পার হচ্ছে প্রতিদিন। জীবনের প্রয়োজনে সবাইকে ঘর থেকে বের হতে হয়। ঘরের বাইরের পরিবেশ অনেক ভাবেই আমাদের ঘরকেও প্রভাবিত করে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে এবং চলার পথকে সুন্দর করা আমাদের দায়িত্ব। শুধু তা নয় এই রাস্তাটায় অনেক ধরনের ভিক্ষুক এবং প্রতিবন্ধী নানা ভাবে ভয় দেখায়। ভিক্ষা চেয়ে পথচারিদের বিবেচনাহীন বিরক্ত করে। অথচ সাথেই পূবালী ব্যাংক। এই রাস্তা থেকে আরও একটু কাছে গেলে ময়লার ড্রেন। সেই ড্রেনের উপর ছোট ছোট খাবারের দোকান। সেই দুর্গন্ধের মধ্যেই দাঁড়িয়ে মানুষ সিঙ্গারা, পুরি আর নানা রকম খাবার খাচ্ছে। এখান থেকে একটু সামনে গেলে গবেষণাগারের পিছনের দিকে ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজ। সেই কলেজের সামনে এবং গবেষণাগারের দেয়াল ঘেঁষে আরও একটা ময়লার স্তুপ। যদিও সেখানে ময়লা না ফেলার একটা সাইন বোর্ড দেওয়া আছে এবং নিয়মিত পুলিশ পাহাড়া দেয়। সবার সামনেই আইন অমান্য হচ্ছে। সবার সম্মুখেই প্রস্রাব করে দেয়াল আর ড্রেনে নিজেদের ভদ্রতার অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে।

গবেষণাগারের মেইন গেট থেকে বাটা সিগন্যালের দিকে যে পথটা গেছে সেদিকেই আবাসিক এলাকা। কয়েকশ পরিবার বসবাস করে এই আবাসিক এলাকায়। এই দিকেও আছে আরও কয়েকটি ময়লার স্তুপ। এই পথ দিয়ে স্কুলের বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সবাই যাতায়াত করে। কিন্তু কারও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। বলা যায় এই সাইন্সল্যাবের চারদিকেই ময়লার মেলা। দুর্গন্ধ এবং ময়লার মধ্যেই আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে। একটু কি চিন্তা করলেই বলা যায় সেখান থেকে কতোটুকু ভাল কিছু আশা করা যায়। সাইন্সল্যাবের চারপাশের এই দুর্গন্ধ আর ময়লার স্তুপগুলো নিয়ে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আমাদের জীবন মানে দামি জামা কাপড়, বিউটি পার্লার, দামি রেস্তরাঁ, গাড়ি বাড়ি সবই যোগ হচ্ছে কিন্তু আমাদের বোধবুদ্ধি আর সচেতনতা সে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। একটি দেশকে সবার কাছে উপস্থাপনই নয়। নিজেদের স্বাস্থ্যসম্মত জীবন মানের জন্য আসুন আমাদের চারপাশের ময়লার স্তুপগুলো যথাযথ জায়গায় সরিয়ে দেই। আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর করি। নিজেদের উন্নত করি। নিজের দেশকে আরও বেশি ভালবাসতে উজ্জীবিত হই।