প্রিয় গুলিস্তান আর কবে নিরাপদ হবে?

নুরুন নাহার লিলিয়ান
Published : 12 May 2017, 03:28 AM
Updated : 12 May 2017, 03:28 AM

.

গুলিস্তান। এই শব্দটির অর্থ ফুলের বাগান। যদিও বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানে তেমন কোন গাছ বা ফুলের বাগান নেই। তবে অনেক কারণে এই জায়গাটি বিখ্যাত। কারণে-অকারণে সমস্যা, ময়লা-আবর্জনা, ছিনতাই, পকেটমার, ধান্দাবাজ, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ- কি নেই যা গুলিস্তানে ঘটে না।

গুলিস্তান বাংলাদেশের একটি অন্যতম ব্যস্ততম জায়গা। বাংলাদেশের অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এই গুলিস্তানের সাথে সংযুক্ত। তাই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই পথে যাতায়াত করে। অনেক অনেক যানবাহন যেমন বাস, ট্রাক, টমটম, লেগুনা, রিকশা সব সময় এই জায়গায় থাকে। তারপরও সব সময় যেন অনিরাপদ জায়গা হিসেবে গুলিস্তান মানুষের মনে শিহরণ জাগায়।

একটা সময় ছিল যখন গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স অনেক জনপ্রিয় ছিল। রাজধানীর খুব পুরাতন আর্কিটেকচারাল মনুমেন্ট হিসেবে সুপরিচিত। এটি যে মানুষের চোখ ছুঁয়ে যাওয়ার মতো কিছু তা নয় তবে ঢাকার আধুনিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত।

গুলিস্তানের পাতাল পথে মানুষ যাতায়াত করছে

গুলিস্তানের মাঝামাঝিতে আছে গোলাপ শাহ্‌ মাজার, বঙ্গ বাজার, বায়তুল মোকাররাম মসজিদ, স্টেডিয়াম মার্কেট, ওসমানী উদ্যান, অলিম্পিক ভবন, কাছেই রাষ্ট্রপতি সরকারী বাস ভবন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অফিসসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অফিস এবং স্থাপনা।

২০১৩ সালে অক্টোবরে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী উড়াল সেতু নির্মাণ করা হয় ট্রাফিক জ্যাম কমানো এবং মানুষের যাতায়াত সহজ করার জন্য। কিন্তু অজানা কারণে সেই অনেক বছর ধরে গুলিস্তান যেমন ছিল ঠিক তেমনই আছে। কোন প্রত্যক্ষ পরিবর্তন সেখানে দেখা যায়না। ছিনতাই, মলম পার্টি, আর ধোঁকাবাজি সেই আগের মতই আছে। এতো বড় একটা বাসস্ট্যান্ড। মানুষের সাধারণ জীবন চলাচলের পথে যে নিরাপত্তা কিংবা সুযোগ সুবিধা থাকা উচিত তা নেই।

আর ওসমানী উদ্যান নিয়ে লিখে শেষ করা যাবে না। এমন কি অপকর্ম নেই যা না ঘটে। ভিক্ষুক, টোকাই কিংবা মানবেতর জীবন-যাপন করা মানুষের ভিড়। মাঝে মাঝে ভাবলে অবাক লাগে দেশের এতো গুরুত্বপূর্ণ অফিস আর স্থাপনাগুলো থাকার পরও কারো কি ভাবনায় আসে না যে গুলিস্তানের সৌন্দর্য এবং নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করা দরকার।

পৃথিবীর সকল দেশে গুরুত্বপূর্ণ অফিস বা স্থাপনার আশপাশের পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর থাকে। আমাদের দেশের অনেক জেলা থেকে ঢাকায় ফেরার পর বাস গুলোর শেষ স্টেশন থাকে গুলিস্তান। অনেক দূর থেকে ঢাকায় আগত সাধারণ যাত্রীরা গুলিস্তানে বিশ্রাম নেয়। নারী কিংবা শিশুর বিশ্রামের জন্য তেমন ভাল মানের হোটেল রেস্তরা বা সরকারী সুযোগ-সুবিধা নেই। একটি পাবলিক টয়লেট হয়েছে সেটা গুলিস্তানের মূল পয়েন্ট থেকে দূরে। পল্টন যাওয়ার পথে গুলিস্তানের পিছনের দিকে পড়েছ। তাই অনেক সাধারণ যাত্রী সঠিকভাবে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে পারছে না। তাছাড়া আগের পুরোনো পাবলিক টয়লেটগুলো আরও উপযুক্ত করে রক্ষনাবেক্ষণ করা দরকার। কিছু টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ। প্রায়ই পত্রিকা খুললে সেগুলো ঘিরে ঘটে যাওয়া ঘটনা চোখে পড়ে। বিশেষ করে নারীদের ব্যবহার অনুপযোগী।

নানারকম যানবাহন আর মানুষের ভিড়ে গুলিস্তান

তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে পৃথিবী এখন ছোট হয়ে এসেছে। অনেক বিদেশিরাও বাংলাদেশ ভ্রমণে আসে। ফেসবুকের ছবি পোস্টের কল্যাণে মানুষের মধ্যে ভ্রমণ পিপাসও বেড়েছে। অনেক বিদেশিরাও বঙ্গবাজার যায় কম খরচে বাংলাদেশের জামা কাপড় কিনতে। তাই অতি দ্রুত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জায়গা বঙ্গ বাজার সহ জিরো পয়েন্ট, জিপিও আরও জনপ্রিয় করা উচিত। এবং এই জায়গাগুলো ঘিরে আমাদের ইতিহাসের যে অধ্যায় আছে তা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা দরকার। অনেকেই জানে না আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই জায়গাগুলোকে ঘিরে অনেক স্মৃতি আছে।

গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স

শুধু তাই নয়, পাতাল পথে মাদকাসক্ত লোকের চলাচল বন্ধে সকল নাগরিকের সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। আন্ডারপাস বা পাতাল পথ কে আরও নিরাপদ এবং শ্রী বৃদ্ধি করে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা উচিত। তা না হলে হাজার বছরের রাজধানী ঢাকার লুকানো ঐতিহ্য আর ইতিহাস আধুনিক ইট পাথরের তলে পড়ে যাবে। গুলিস্তান কেবল একটি অনিরাপদ জায়গা হিসেবেই মানুষের মনে কাপন তৈরি করবে।

গুলিস্তানের যে ঐতিহাসিক সৌন্দর্য এবং প্রয়োজনীয়তা আছে তা ভাবার সময় এসেছে। আশাকরি সাধারণ জনগণসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এই বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হবে। গুলিস্তান তার নিজের নামের মতো ফুল বাগানে পরিণত হবে। আসুন যে পথে আমরা চলাচল করি সে পথ এবং পথের মানুষগুলোকে নিরাপদে রাখি। নিজেদের সচেতনতা দিয়ে ভালবাসার চেষ্টা করি। কিছু সৌন্দর্যের ছোঁয়া মানুষের বিবেকে লাগুক। কিছু মানবিকতাবোধ যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিবেক কে জাগ্রত করুক।