বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তান যাবে না- বিসিবি’র কর্মকর্তাদের পরিবারসহ পিকনিকে পাঠানো হোক

কাফি রশিদ
Published : 21 Dec 2012, 01:23 PM
Updated : 21 Dec 2012, 01:23 PM

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তানে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট টীম। ২০০২ এ নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট টীম যেই হোটেলে অবস্থান করছিলো সেই হোটেলে হামলার ধারাবাহিকতায় ২০০৯ এ শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট টীমের উপর হামলা হলে দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এক প্রকার নিষিদ্ধ। ২০০৯ এর ঘটনার পর কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশ পাকিস্তান সফরে যায়নি। বাংলাদেশ দলের সফরের সিদ্ধান্ত আরো আগেই নেয়া হয়েছিলো, লোটাস কামালের সময়ে। কিন্তু সেই সময় জাতীয় দলের খেলোয়ার-কর্মকর্তা-সমর্থকদের আপত্তি ও এর রেশ ধরে ট্যুরের উপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারনে তা আর সম্ভব হয়নি। আইসিসি'র সহ-সভাপতি পদে পাকিস্তানের ভোট পাওয়ার আভাস পেয়ে লোটাস কামাল উপহার হিশেবে জাতীয় দলকে অসভ্য এক দেশ পাকিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার ঘোষণা করেছিলেন।

এরপর লোটাস কামালের মেয়াদ শেষ হলো, এলেন রাষ্ট্রপতি পুত্র পাপন। সবাই আশা করেছিলো এবার হয়তো বিসিবি-তে অনেক পরিবর্তন আসবে, পাকিস্তান সফরের মতোন ভয়ংকর কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। সেই আশায় গুড়েবালি। উইন্ডিজদের সফর শেষ হতে না হতেই বিসিবি আবারও পাকিস্তান সফরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। শ্রেফ "খেলার জন্য" না, পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরিয়ে আনতে! আইসিসিতে লোটাস কামালের পদ পাওয়ার পেছনে পাকিস্তানের ভোটের প্রতিদান হিশেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট টীমকে উনি পাঠাতে চেয়েছিলেন, পাপন ক্যানো পাঠাতে চাচ্ছেন? মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পুত্র পাপন কোন স্বার্থে জাতীয় দলকে পাকিস্তান পাঠাচ্ছেন?

পাপন সাহেবদের কথা একটাই, পাকিস্তান আমাদের ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার সিয়োরিটি দিচ্ছে, তারা সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট। তারা ক্যামন নিরাপত্তা দিচ্ছে? প্রেসিডেন্ট য্যামন নিরাপত্তা পেয়ে থাকে ত্যামন নিরাপত্তা। এখানে কিন্তু সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজিত ভুট্টো যেদিন নিহত হলেন, সেদিন তিনিও প্রেসিডেন্সি সিকিউরিটির আওতায় ছিলেন। তারউপর তিনি সেই দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী! মন্ত্রী-এমপি কতোজন নিহত হয়েছে সেই খবরও আমলে নেওয়া হয়না সেখানে। বছরখানেক আগে পাকিস্তানে যে বন্যা হলো, সেই বন্যায় বাড়িঘর ছেড়ে আসা মানুষদেরও মরতে হয়েছে চরমপন্থীদের হাতে। বিদেশি বলে কি তারা ছেড়ে দিবে? না, শুধু শ্রীলংকা ক্রিকেট টীমের উপর না, হামলা হয়েছিলো নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট টীম যে হোটেলে অবস্থান করছিলো সেই ভবনেও যেখানে ১১ জন বিদেশি প্রকৌশলী নিহত হন। এইতো তিন-চারদিন আগে পোলিও টীকা দিতে গিয়ে ৫জন ভলান্টিয়ার নিহত হলেন। এই ডিসেম্বরে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা প্রায় তিরিশ।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কখনোই ভালো ছিলো না। গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে দ্যাখা যাচ্ছে নিহতের সংখ্যা কমলেও বোমা বিস্ফোরনের ঘটনা সংখ্যা বেড়েছে। এই বছর নিহতের সংখ্যা কমে কতো হয়েছে জানেন? পাঁচ হাজার নয়শ বাষট্টি! আর তিন বছরের মোট নিহত ৪৪,৮৮৮। গত দশ বছরে গড়ে সেখানে প্রতিদিন ১২ জন করে মারা গেছে। নিজ দেশের মানুষদের যারা নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তারা কীভাবে অন্যদের নিরাপত্তা দিবে? তাছাড়া নিজেদের মানুষদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে অন্য দেশের মানুষদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা ক্যামন নীতি? নৈতিকতা বলতে তাদের আদৌ কিছু আছে?

প্রতিপক্ষ হিশেবে পাকিস্তান ক্যামন, অথবা পাকিস্তানের সাথে খেলা উচিৎ কিনা সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না, ফ্যাক্ট এখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আপাতত আমাদের দাবী পাকিস্তানে আমাদের টীম যাবে না। যদি আমাদের টীমের উপর হামলা হয় সেই দায়ভার কে নিবে? নিশ্চয়ই পাপন সাহেবরা নিবে না। তারা সর্বোচ্চ আটচল্লিশ ঘন্টা আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থায় কুইকুই করেই চুপ হয়ে যাবে। আমরা কোন ঝুঁকি নিতে চাই না। পাকিস্তানে ক্রিকেট ফিরিয়ে আনার কোন দায় আমাদের নাই, আমরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই। আমরা পাকিস্তানের পেয়ারি বন্ধু না, এতোই যখন দরদ, তখন পাপন সাহেবরা পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল নিরাপত্তার ভিতরে বসে পাকিস্তানে দুই সপ্তাহের পিকনিকে চলে যান। একচল্লিশ বছর আগে যেই দেশ আমাদের তিরিশ লক্ষ মানুষ খুন করেছে, আগামী বছর সেই দেশ আমাদের তিরিশ জন মানুষকে খুন করবে না সেই কথা আমরা বিশ্বাস করি না।