রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ : শোক পালনের চার দিন চলছে

মীর আশরাফ আলী
Published : 9 Dec 2014, 09:05 AM
Updated : 9 Dec 2014, 09:05 AM

সড়ক দুর্ঘটনায় তিন সহপাঠী নিহতের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার, কলেজের পরিবহণ সংকটের সমাধানসহ কয়েক দফা দাবিতে ফুঁসে উঠেছে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে কলেজের সামনের সড়ক এবং সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে এই কর্মসুচি। আন্দোলনের মুখে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান আগামি তিন দিনের মধ্যে আরো চারটি বাস ভাড়া এবং ১৫ দিনের মধ্যে নতুন তিনটি বাস কেনার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের পরিবহণ সংকট নিরসনে রাজশাহী কলেজের জন্য বিআরটিসি'র সাতটি দ্বিতল বাস বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এদিকে, তিন ছাত্রী নিহতের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের ঘোষিত চারদিনের শোক পালনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে  কলেজে উত্তোলন করা হয় কালো পতাকা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন।  কলেজে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। রোববারের দুর্ঘটনায় নিহত তিন ছাত্রীর জানাজা সোমবার নিজ নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নিহতদের স্বজন ও এলাকাবাসির সাথে কলেজ অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষকও অংশ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভাড়ার পরিবর্তে কলেজের নিজস্ব বাস কেনা, স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ, রোববার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বহনসহ বিভিন্ন দাবিতে সোমবার সকাল দশটার দিকে রাজশাহী কলেজের সামনে সড়কে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় কলেজের অধ্যক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তাদের একটি অংশ পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

সড়ক অবরোধের কারণে সাহেব বাজার বড় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে মধ্য শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতি বছর কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতিজন শিক্ষার্থীর নিকট থেকে সাড়ে তিনশ' টাকা করে পরিবহণ ফি আদায় করলেও কলেজের একটি মাত্র বাস ছাড়া নিজস্ব কোনো বাস নেই। আটটি বাস ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব বাসের ফিটনেস নেই। চালকরাও দক্ষ নন। এরপরও ৪০ সিটের একটি বাসে দ্বিগুন-তিনগুন শিক্ষার্থী ঠাসাঠাসি করে চলতে বাধ্য হচ্ছে। বাসে সিট কিংবা দাঁড়ানোর জায়গা করে নিতে ক্লাস শেষ হতে না হতেই শিক্ষার্থীদের বাসের জন্য ছুটতে হয়। শিক্ষার্থীরা ভাড়া বাসের পরিবর্তে কলেজের জন্য নিজস্ব বাস কেনার দাবি করেন। এসময় তারা বাসের জন্য দক্ষ ড্রাইভার, ড্রাইভারের পরিচয়পত্র এবং কলেজের বাসে কলেজের লোগা ও পৃথক রঙ করার দাবি জানায়।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সকল দাবি দাওয়ার সঙ্গে আমিও একমত। কলেজের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য কলেজের একটি এবং ভাড়া করা আটটি দিয়ে পরিবহণ সংকট মোকাবেলা করা কিছুতেই সম্ভব নয়। তবে ইচ্ছে করলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত সংখ্যক নতুন বাস কিনতে পারে না। কারণ, এজন্য যে অর্থের প্রয়োজন হবে, কলেজের তা নেই। তবে আগামি ১৫ দিনের মধ্যে কলেজের ফান্ড থেকে দু'টি এবং ছঅত্র সংসদের ফান্ড থেকে একটি অর্থাৎ তিনটি নতুন বাস কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এজন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের অনুমোদন লাগবে। আর ছাত্র সংসদের ফান্ড থেকে বাস কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুমোদন লাগবে। এসব প্রক্রিয়া আগামি ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করে তিনটি নতুন বাস কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি আগামি তিনদিনের মধ্যে আরো চারটি ভাড়া বাস কলেজ পরিবহণে যুক্ত করার কথাও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, রোববার দুপুরে রাজশাহীর কাটাখালীতে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে রাজশাহী কলেজের তিন ছাত্রী নিহত এবং ২০জন আহত হয়েছে। এঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় দুটি বাসের চালক ও সহকারীকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।