বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ মফস্বল ও গ্রামীণ জনজীবন

মশিউর রহমান মশু
Published : 8 August 2017, 05:01 PM
Updated : 8 August 2017, 05:01 PM

বর্তমান সভ্যতা প্রযুক্তি নির্ভর। আমাদের ধারাবাহিক জীবনযাত্রায় প্রযুক্তির নির্ভরশীলতা বেড়েই চলছে। জীবনযাত্রার সকল কাজে-কর্মে-শোকে-আনন্দে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা তৃপ্ত হচ্ছি। এই প্রযুক্তির প্রাণ কিন্তু বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া আমরা প্রযুক্তির শতভাগ ব্যবহার ঠিকমত করতে পারব না। বিদ্যুৎ নাই মানে প্রযুক্তি অপর নাম আপদ। আমরা এখন আপদের গহ্বরে দিন দিন তলে যাচ্ছি…!

দিন দিন নিজেদের সুবিধার্থে যে ভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করছি, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারছি না। এর জন্য যে ভোগান্তি হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এই ভোগান্তির চরম সীমায় আছেন মফস্বল ও গ্রামীণ এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ। শহর এলাকাতে বিদ্যুতের ভোগান্তি তেমন একটা না থাকলেও ঠিক তার উল্টা চিত্র মফস্বল ও গ্রামীণ এলাকাগুলিতে। ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ পাওয়া যায় মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। আর এই ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায় কতবার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করে তার কোন হিসাব নাই। আপনি কোন কাজেই মনোযোগ দিতে পারবেন না এই পরিস্থিতিতে। যখনই মনঃসংযোগ ঘটাতে যাচ্ছেন দেখছেন বিদ্যুৎ হুট করে চলে গেল!! আপনি ছাত্র হউন বা শিক্ষক বা শ্রমিক বা মালিক যাই হউন আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে বিদ্যুৎ এর এই হুট-হাট চলে যাওয়া। আপনার মুডই অফ!!

বর্তমান যে অবস্থা তাতে প্রযুক্তির ব্যবহারের নামে চলছে চরম ভোগান্তি। রাতে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় মাত্র কয়েক ঘণ্টা। মোবাইল থেকে চার্জর লাইট, চার্জ করার জন্যও যে পরিমাণ বিদ্যুৎ থাকা দরকার, সময় সময় ২৪ ঘণ্টায় তাও পাওয়া যায় না! বিদ্যুতের ব্যবহার সর্বত্র। আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলি যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা এই গুলিও এখন প্রযুক্তি নির্ভর এবং যেখানে বিদ্যুৎ আবশ্যক। কৃষিজাত দ্রব্য উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ এবং বিপণন সব ক্ষেত্রেই আজ প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল, কিন্তু প্রযুক্তি বিদ্যুৎ ছাড়া কথা বলেনা। কৃষক সেচে প্রয়োজন মত পানি দিতে না পারলে বা সংরক্ষণাগারে ঠিকমত সংরক্ষণ করতে না পারলে, আপনার কাছে অন্নও ঠিকমত পৌঁছাবে না। আপনার ধান থেকে চাল বা গম থেকে আটা প্রসেস করা দরকার আপনি কলে গেলেন, একঘণ্টায় যা সম্ভব তা এই বিদ্যুৎ হুট-হাট চলে যাওয়াতে সারাদিন লাগছে বা পরদিনেও আপনি সিরিয়াল পাচ্ছেন না। বস্ত্রশিল্পে ঠিকমত বিদ্যুৎ দিতে না পারলে উৎপাদনের ব্যাঘাত ঘটবে এবং ঘটছে। বাসস্থানে বিদ্যুৎ ছাড়া আপনার ঘরের আলো জ্বলছে না, ফ্যান ঘুরছেনা, আপনার ফ্রিজের খাবার নষ্ট হচ্ছে। আপনার সন্তান লেখাপড়া করে কিন্তু অন্ধকারে আর গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা পড়াশুনা ঠিকমত করতে পারছেনা, যখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করছে। আপনার কেউ অসুস্থ আপনি তাকে মফস্বলের কোন হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, বিদ্যুৎ নাই রুগী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে না বিদ্যুৎবিহীন অসহ্য পরিবেশে কাতরাচ্ছে আপনি তা বুঝতে পারবেন না…। ছোট বা মাঝারি কারখানা ও ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে আরও বাজে অবস্থা। এছাড়া বিনোদনের বিষয় না হয় বাদই দিলাম।

বিদ্যুতের উৎপাদন আরও প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা যে উন্নয়নের স্বপ্নে বিভোর তার লক্ষ্য ছুঁতে গেলে সবার আগে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আপনার খাবারের বাজেট ৫০ জনের কিন্তু আপনি দাওয়াত করলেন ৫০০ জনকে বিষয়টা যেমন ভোগান্তিকর ও অনাকাঙ্খিত, বর্তমানে আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে ক্ষেত্রে সেই অবস্থা! এ ভাবে চলতে পারে না। বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকারের প্রধান পদক্ষেপগুলা কেমন জানি শ্লথ হয়ে আছে, গতি পাচ্ছে না। আমরা সাধারণ-বাসী বিদ্যুৎ চাই। বিদ্যুৎ বিহীন দুর্ভোগ যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবন যাত্রা থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুর উপরে।

– মশিউর রহমান
কবি ও সাংবাদিক