ভণ্ড আওয়ামী লীগের মুখোশ খুলে পড়ছে

প্রবীর বিধান
Published : 26 Feb 2013, 07:00 PM
Updated : 26 Feb 2013, 07:00 PM

ভন্ড ইসলামিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করাটা যখন সময়ের দাবি এবং ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গেছে, তখন বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলেও এখন দেখা যাচ্ছে সরকারপ্রধান দোনামনা করছেন, দ্বিধা-সংশয়ে তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে। এমনকি শাহবাগ ও দেশে-বিদেশে নানা জায়গায় গনজোয়ারের চাপে কদিন আগে ব্লগার রাজীবের পরিবারকে স্বান্তনা দিতে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন এই যুদ্ধাপরাধী-সন্ত্রাসী দলটির বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করার অধিকার নেই।

হ্যাঁ, এমন সুন্দর সুন্দর ছেলেভুলানো কথা অনেক বলেন আমাদের দেশের রাজনীতিবদেরা। উপস্থিতবুদ্ধি কম থাকা এবং তীক্ষ্ণবুদ্ধির ধার কমে যাওয়ার কারনে এদেশের নীতিনির্ধারনী ব্যক্তিরা কখন যে কি বলছেন আর একটু পরেই কি বলছেন তার কোন আগামাথা নেই। এদের আবার চোখের পর্দা নেই, তাই ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে এরা বের হতে পারছেন না।

বলছিলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কথা, যিনি কিনা গতকাল মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে সবার মুখে কুলুপ এঁটে দিলেন। মন্ত্রীসহ দেশের সমস্ত জনগনকে হাইকোর্ট দেখালেন! জামায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে আদালতের আদেশের বাইরে নাকি তার সরকার কিছুই করবেনা! সেই ২০০৯সালের একটি পিটিশন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দেখতে হবে যা কিছু করবে জামায়াত-শিবির আর তাদের বন্ধু বিএনপি। এখন নাকি শুধু যুদ্ধাপরাধের নাটের গুরুদের বিচার করবে, বিশেষ করে জামায়াতের প্রধান নেতাদের। ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করছে তাদের বিষয়ে উনার এখন কোন অভিযোগ নেই, যদিও এই ১২দল (যাদের মধ্যে দুটি দল স্বাধীনতাবিরোধী) বিরোধ জোটে থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে গত শুক্রবার সারাদেশের মসজিদ-শহীদ মিনার-জাগরন মঞ্চে তান্ডবলীলা চালিয়েছে, ছিঁড়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে জাতীয় পতাকা; শাহবাগের আন্দোলন প্রচার করার কারনে খুঁজে খুঁজে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপর নির্লজ্জ আক্রমন করেছে, আর পুলিশকে তো বটেই!

জনগন অবশ্য জানেনই না কি আছে এই পিটিশনে। তারা আশা করেন সরকার শনিবার না হোক, কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাহী ক্ষমতাবলে একটা পদক্ষেপ নিবে। দায়িত্ববান সরকারি লোকেরা সংসদে-বাইরে এমনকি শাহবাগের মঞ্চে একাত্মতা ঘোষনা করে দাবি জানিয়েছেন জামায়াতের নিষিদ্ধের, কেউ কেউ আবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অবিলম্বে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে সবারই পিত্তি জ্বলে গেলো, কেউ বা হতাশ হয়ে গেলেন, কারন উনি ধীরে চলো নীতি অনুসরন করছেন, তাও আবার এমন একটা সময়ে যখন দেশের মানুষ (বিরোধীদল ছাড়া) অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে প্রতিটি মুহুর্ত একটা সুসংবাদ শোনার আশায়, যেই সংবাদটি দিতে পারে কেবল একটি সরকার। উনি কি জানেন না, দেশের মানুষ উনাকে বিশ্বাস করেন না, এমনকি দলীয় সমর্থকরাও নয়?

আইনমন্ত্রী অবশ্য কদিন আগে বলেছেন পিটিশনের উপর নাকি শুনানী হয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। মানে তারা আশা করছেন আদালতের বিচারক সাহেব জনরায় ও সরকারের মনোভাব বুঝে বাতিল করে দেবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করার শখ।

আওয়ামীলীগ সরকারকে বলছি, ভন্ডামি বাদ দেন, লাইনে আসেন, উঁচুতলার কালোকাঁচের ঘর ছেড়ে জনগনের কাতারে আসেন। সততার প্রমান দেন। জাতি আপনাদের অনেক ক্ষমা করেছে। তাই বলে তাদেরকে অবলা ভাবার কোন কারন নেই। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে ২০০১ সালের নির্বাচনে জনগন আপনাকে বর্জন করেছিলেন।

এদিকে প্রথমবারের মত ব্লগারদের মুখপাত্র ইমরান গতকাল মিরপুরের সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারন করলেন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারে কোন অগ্রগতি না হওয়ায়। কিন্তু তার প্রতিবাদে ঘোষণা করলেন একটি বিক্ষোভ কর্মসূচী, তাও আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় অভিমুখে। আজ বিকাল ৪টায় সেই কর্মসূচী হবার কথা। কিন্তু তাতে যে সরকারের কিছু যায় আসেনা, তা আবার প্রমান করে দেবে সরকার। অবশ্য, সেই আওয়াজ ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী দেখিয়েছেন।

সুশিক্ষিত মুসলমানরা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন

দুদিন আগে এটিএন নিউজে দেখছিলাম একজন আলোচক বলছিলেন যে, জামায়াত ইসলামশিক্ষা বলতে সঠিকভাবে নামাজ পড়া, কোরান পড়া ও অন্যান্য আচারকার্য শেখাকে বুঝায় এবং সেগুলো করা হয় সেনা প্রশিক্ষনের মতো করে। সেখানে থাকেনা ইসলামের আত্মিক বিশ্লেষন বা সৃষ্টিকর্তার সাথে সংযোগ করার কোন পথ।

এসবের কারনে যারা জামায়াতী নেতা-কর্মীদের অনুসরন/অনুকরন করে সেসব মুসলমানের মধ্যে "গোঁড়ামি" ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়না। এদের দেখলে, কথা শুনলে বা কাজকর্ম দেখলে শ্রদ্ধাভক্তি দূরে থাক, পিটাইতে ইচ্ছা করে।

আর এসব দেখে অনেকেই (শুধু অন্যধর্মের অনুসারীরা নয়) সমাজে প্রতিক্রিয়াশীল এসব "ভন্ড" ইসলামিকদের ঘৃনা করে, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের প্রতিই বীতশ্রদ্ধ হয়ে যায়।

আমার দুঃখ একটা বড় দুঃখ যে, এতদিনে দেশবরেন্য ও আমার এলাকায় যে কয়জন শুদ্ধ ইসলামের অনুসারী দেখেছি, যাদের শান্তশ্রী মুখ দেখে ভালো লেগেছে আর মনে হয়েছে এদের ভেতরটাও শুদ্ধ, এরা মানবিক — তারাও পর্যন্ত এসব ভন্ড ইসলামিক নেতা-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না, প্রকাশ্যে তো নয়ই। তাহলে এই নোংরামির পরিবর্তন কিভাবে হবে?

এদের পুষছে সব মিডিয়া

কদিন আগে সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার ৭১টিভিতে বলেন সকল মিডিয়া হঠাৎ করে জামায়াতী প্রতিষ্ঠান বর্জন করতে পারবেনা। এতে করে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হবে। কিন্তু বললেন না, আদৌ তারা কোনদিন এসব প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করবেন কিনা বা কি কি সমস্যা হতে পারে।

এছাড়া আর কোন সম্পাদক-পর্যায়ের লোক, এমনকি ৭১টিভি কর্তৃপক্ষও, ঘোষনা দিয়ে বলছেন না তারা কোনদিন শাহবাগের আহবানের সাথে একাত্ম হয়ে এসব প্রতিষ্ঠান বর্জন করবেন কিনা। আবার এটিএন নিউজ যারা কিনা সারাদিন-রাতে বারবার শাহবাগ ও সারাদেশের আন্দোলনের খবর দিচ্ছে তারাও ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা'র বিজ্ঞাপন দেখিয়ে চলেছে।

ইতিমধ্যেই লক্ষ করা গেছে যে, কোন স্বাধীনতাপন্থী টিভি বা পত্রিকাই জামায়াতী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করেনি, কিন্তু শাহবাগের আন্দোলনের খবর ও আলোচনা বাড়িয়ে দিয়েছে — যেমন প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আর কতোদিন দেখতে হবে? আপনারা ব্যবসায়ি হতে পারেন, আপনাদের নীতি না থাকতে পারে, কিন্তু আপনারা তাহলে সাংবাদিকতা করছেন কেন? ফুলটাইম এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেল বানালেই তো পারেন, যা খুশি তা করতে পারবেন। তখন আর জনগন আপনাদের কাছে কিছু আশা করবেন না।