নারী অবমাননা, আর কত দিন বাড়তেই থাকবে?

প্রবীর বিধান
Published : 14 Jan 2012, 06:05 PM
Updated : 14 Jan 2012, 06:05 PM

আইনের সফল প্রয়োগ না হওয়াতে সারা বিশ্বের সাথে সাথে আমাদের দেশেও দিন দিন বাড়ছে নারী নির্যাতনের ঘটনা। এসবের বেশিরভাগই ঘটছে মফস্বলে বা গ্রামে।

কারো কারো জীবন গেছে, কেউ আহত আর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন অগনিত নারী ও শিশু যারা সারা জীবন বয়ে বেড়াবেন এসব ঘটনার ধাক্কাটা।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র-এর মতে ২০১১ সালে ধর্ষন ও এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১,৩৪৬ জন নারী।

যৌন হয়রানির ঘটনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ৩৩ জন, হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারা গেছেন ২৩ জন।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকার তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১১ সালে ৭১১ জন নারী ও শিশু ধর্ষিত হয়েছে যাদের মধ্যে ৮৮ জনকে (৫৪ নারী, ৩৪ শিশু) মেরে ফেলা হয়।

সে বছর ৬৭২ জন নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন, যাদের মধ্যে ৬ জন খুন হন, ৫৯ জন আহত হন, ৯১ জন অপদস্থ হন, ১২ জনকে অপহরন করা হয়, ১৫ জনকে ধর্ষনের চেষ্টা করা হয় ও ২৯ জন আত্মহত্যা করেন।

আইনের দূর্বলতার পাশাপাশি সমাজে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার লোকেদের অভাব, আর সবচেয়ে বড় সমস্যাটা অর্থ্যাৎ পুরুষদের যাচ্ছেতাই খুশি আচরনও এর জন্য দায়ী। তাছাড়া ধরা পড়লেও অর্থ-বিত্ত-পরিচয়ের জোরে অনেকেই বেঁচে যাচ্ছে আইনের ফাঁক গলে।

যুগের আধুনিকতা, মুক্তবাজার অর্থনীতি আর মানবিক অবক্ষয়ের সাথে সাথে পুরুষদের মধ্যে বাড়তে থাকা নায়কোচিত বা ভিলেন-টাইপের আচরনের কারনে মেয়েদের উপর এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনাগুলোর সংখ্যা কমছেনা।

পর্ণোগ্রাফির বহুল প্রসার ও প্রাপ্যতাকে আমি সবচেয়ে বড় কারন হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই।

আরেকটি বড় কারন হলো টিভি-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে মেয়েদেরকে শারীরিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে উপস্থাপনা করা–যার দায়িত্ব বর্তায় সংশ্লিষ্ট আলোকচিত্রী, চিত্রগ্রহনকারী, পরিচালক, প্রযোজক ও সরকারি কর্মকর্তাদের উপর–কেননা এটা করা হয় বানিজ্যক বিষয়টি মাথায় রেখে।

এক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা আসে কিছু মডেল, নায়িকা এবং পরিচালক ও প্রযোজকের দিক থেকে যারা টাকা আর প্রতিপত্তির লোভে নিজেদের নানাভাবে বিকিয়ে দিতে কার্পণ্য করেনা–যেই সুযোগটা নিতে চায় টাকা-পাগল বড় ব্যবসায়িরা, যারা অর্থায়ন করে।

সমস্যাগুলোকে ভালভাবে চিহ্নিত করে আমাদের উচিৎ সারা বছর নানান রকমের ছোট ছোট কার্যক্রমের মাধ্যমে সর্বদা সোচ্চার থাকা যাতে করে এইসব নিকৃষ্ট-অসভ্য-অনাকাংখিত ঘটনা কমানো সম্ভব হয়। জোরদার সামাজিক আন্দোলনের ফলে সরকারও বাধ্য হবে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর হতে।

তবে এটা দূর্ভাগ্যের যে, গত ২১ বছর ধরে আমাদের দেশের সরকারপ্রধানরা (তত্ত্বাবধায়করা ছাড়া) নারী।

এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মতামত জানান, যদি কোন কিছু ভুল লিখে থাকি তাহলে ধরিয়ে দিন এবং নিজে সচেতন হোন ও আপনার চারপাশের সবাইকে সচেতন হতে বলুন।