‘পশ্চিম বাংলাদেশের’ স্বাধীনতা দিবস ১৬ ডিসেম্বর! 

কাজী মাহমুদুর রহমান
Published : 28 Dec 2016, 04:42 AM
Updated : 28 Dec 2016, 04:42 AM

১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম বাংলাদেশ তথা বর্তমান পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। কি, চমকে গেলেন? চমকানোর কিছু নেই। একটু ভাবুন তাহলেই উত্তর পেয়ে যাবেন। বিষয়টি নিয়ে ভাবনার যথেষ্ট সুযোগ আছে, কেন ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১, পশ্চিম বাংলাদেশ তথা বর্তমান পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস।

'৭০ এর নির্বাচনে জয় লাভের পর সমগ্র পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সংসদ গঠন কোন দল করার জন্য জনগণের রায় পায়? উত্তর: অল পাকিস্তান আওয়ামীলীগ। সত্তরের নির্বাচনে সমগ্র পাকিস্তানের মোট ৩০০ আসনের ১৬৭টিতে জয়লাভ করে তৎকালীন অল পাকিস্তান আওয়ামীলীগ।

যদি অল পাকিস্তান আওয়ামীলীগ সংসদ গঠন করতো তাহলে মন্ত্রীপরিষদ কোন দল গঠন করার রায় পেত? উত্তর: অল পাকিস্তান আওয়ামীলীগ। তাহলে সমগ্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কে হতেন? উত্তর: শেখ মুজিবর রহমান। প্রেসিডেন্ট কে হতেন? উত্তর: অল পাকিস্তান আওয়ামীলীগ মনোনীত পূর্ব পাকিস্থান (বাংলাদেশ অঞ্চল)-এর কোন বাঙালি। প্রধান সামরিক ব্যক্তি কে হতেন? উত্তর: অল পাকিস্তান আওয়ামীলীগ মনোনীত পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ অঞ্চল)-এর কোন বাঙালি।

প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ অঞ্চল)- এর, তাহলে তৎকালীন পাকিস্তানের রাজধানী স্থানান্তর করে ঢাকাতে আনতে কতটি সংসদ অধিবেশনের প্রয়োজন হতো? উত্তর: মাত্র ১টি । কারণ ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট দেয়ার জন্য পাঞ্জাব ও বেলুচ সাংসদরা প্রস্তুত ছিল।

পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রাখতে কতটি সংসদ অধিবেশন প্রয়োজন হতো? উত্তর: মাত্র ১টি। তাহলে এটা বলার অপেক্ষা রাথে না যে, পাকিস্তানের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রাখলে এবং বাংলাদেশের অধীনে দুটো প্রভিন্সের শাষণভার আসলে প্রভিন্স দুটোর নামকরণ করা হতো  পূর্ব বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলাদেশ।

ঢাকা সমগ্র বাংলাদেশের (পূর্ব বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলাদেশ)  রাজধানী হলে শাষক হতো বাঙ্গালিরা। আর তখন বাংলাদেশের জনগণ পশ্চিম বাংলাদেশ নামক ভূ-খন্ডকে পরিচালনা করতো। সেই ক্ষেত্রে সিচুয়েশন রিভার্স হতো। পূর্ব বাংলাদেশের কাছ থেকে পশ্চিম বাংলাদেশ (পশ্চিম পাকিস্তান)- কে স্বাধীনতা বা সায়ত্ত্বশাসন নেয়া সংগ্রাম করতে হতো হয়তো। ৭১-এর যু্দ্ধে ভারত না থাকলে ৯৩ হাজার (ভিন্নমতে ৯০ হাজার) পাক-সেনার করব রচনা হতো বাংলার মাটিতে। উল্লেখ্য যে, ৪৭ হাজার পাক সেনার কবর রচনাতো নয় মাসের যুদ্ধে হয়েছিল ইতিমধ্যে।

সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি থেকে ৩০ লাখ শহীদ হলেও বাকি সাত কোটি বাঙ্গালী একটি মাত্র মাটি ঢিল ছুঁড়লেই পাক-আর্মির জীবন্ত করব রচনা হতো ১৯৭১-এ। যুদ্ধে পাক আর্মি ও রাজাকারা হাতের মুক্তি সেনাদের নাগালে এলে একটাকেও জ্যান্ত রাখা যেত বলে মনে হয় না, সে কথা বলাই বাহুল্য। কারণ ১৭ই এপ্রিল নবগঠিত বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের বিভিন্ন চুক্তির কথা মেনে চলবে বলে অংঙ্গিকার করলেও যুদ্ধ বিরতি ও যুদ্ধ বন্দী বিষয়ক জেনেভা চুক্তিতে অস্থায়ী সরকার তখনও স্বাক্ষর করেনি। বিষয়গুলো জানতো বলেই পাক আর্মি ভারতের সাহায্য নেয়। ভারতও তার বেশ কতগুলো স্বার্থের জন্য যুদ্ধ নামক নাটকে জড়িয়ে পড়ে। সেটা ছিল ভারত-পাকিস্তানের একটা সমঝোতা স্বারক।

একটু লক্ষ্য করলেই বিষয়টা সহজে বোঝা যায়। যেমন- (ক) পাকিস্থান প্রথমে ভারত আক্রমণ করে ও ১৭টি রানওয়েতে বোমা ফেলে। এই আক্রমণ ভারত আগে থেকেই জানতো। ভারত এয়ার ফিল্ডের সকলকে সরিয়ে দেয়ার সর্তক এলার্ম জারি করেছিল। এটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে, কেন পাকিস্তান জনশূণ্য এয়ার ফিল্ডে আক্রমণ করে? কেন কোন বসতি স্থানে বা ক্যান্টনমেন্টে আক্রমণ করিনি? (২) পরবর্তীতে আত্মসর্মপন অনুষ্ঠানে প্রধান সেনাপতি লে. ক. ওসমানীকে আসতে দেয়া হয় নাই। (৩) পাকিস্থানের আত্মসর্মপন দলিলটাতে জেনারেল নিয়াজি বার বার ভারতের কাছে সলেনামা বা গ্যারান্টি চায় তার সৈন্যদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য। যদিও শেষ রক্ষা হয় নাই। সকল সৈন্যকে (৯০ হাজার) বন্দি করে ও ভারতীয় কারাগারে পাঠানো হয়। (৪) সেনা কর্মকর্তারা জানতো সমগ্র পাকিস্তানের কেবিনেট শেখ মুজিব গঠন করলে সেনাবাহীনিতে নানা ধরনের পরিবর্তন হবে। তারা এটাও জানতো, এই পরিবর্তনে উচ্চস্থানীয় সেনা অফিসারদের ক্ষতিটা বেশিই হতো। আত্মসর্মপন করা ৯০ হাজার পাক সেনাদের অধিকাংশ ছিল নিম্ন শ্রেনী/র‌্যাংকের। এই সকল কারণে পাক সেনারা বাঙ্গালি মুক্তিসেনার কাছে মৃত্যু বরণ করার চেয়ে আত্মসর্মপন করে চেয়ে ভারতীয় কারাগারের বন্দীত্ব বেছে নিয়েছিল।

গণতান্ত্রিক চর্চা থাকলে সমগ্র পাকিস্তানের সরকার গঠন করতো অল পাকিস্তান আওয়ামীলীগ। এবং রাজধানী ঢাকাতে স্থানান্তর সহ পাকিস্তানের নাম পরির্তন হয়ে যেত পশ্চিম বাংলাদেশ। সেই পরাজয় থেকে পাকিস্তান বেঁচে যায় ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১-এ। তাই পশ্চিম বাংলাদেশ তথা পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৬ই ডিসেম্বর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ আর বিজয় দিবস ১৬ই ডিসেম্বর। এই বিজয় দিবসে সেই সব হাজার বছরের স্বপ্ন লালনকারী বাঙালির কথা স্বরণ করি যারা স্বাধীন বাংলাদেশ দেখার আক্ষেপ নিয়ে বিজয়ের আগেই না ফেরা দেশে চলে যায় অথচ তারা সংগ্রাম করেছিলেন ও রক্ত দিয়েছিলেন হাজার বছরের মহান বিজয়ের জন্য। বেঁচে থাকো বিজয়, বেঁচে থাকো বাঙালি, বেঁচে থাকো বাঙালির সংগ্রাম।