কর্মসময় ৮ ঘণ্টা ও মে মাসের আত্মাহুতি

কাজী মাহমুদুর রহমান
Published : 2 May 2017, 08:27 PM
Updated : 2 May 2017, 08:27 PM

গড়ে ৮ ঘণ্টার বেশি কোন মানুষ কাজ করতে পারে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ হলে গড়ে আরো ১ ঘন্টা বেশি বাড়ানো যেতে পারে। যে সকল কর্মপ্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ৮ ঘন্টার বেশি অফিসে অবস্থান করে তারা কাজ করার ভান করে। অতিরিক্ত সময়টাতে কাজের চেয়ে তারা অকাজ করে। তারা তাদের ব্যক্তিগত বেসিক চাহিদাগুলো অফিসে মেটানোর চেষ্টা করে। অফিসে গড়ে ৮ ঘন্টার বেশি থাকলে কর্মীরা তাদের ক্রিয়েটিভি হারিয়ে ফেলে। তারা তখন ফাঁকিবাজিতে ওস্তাদ হয়ে উঠে। ৮ ঘন্টার বেশি অফিসে থাকলে কর্মীরা তাদের পারিবারিক জীবন ও জীবনবোধ হারিয়ে ফেলে। টাকা হয়তো হয়, তবে মানুষ নামক প্রাণী হিসেবে জীবনের রসবোধ থাকে না।

যাদের জীবনের রসবোধ নাই তাদের ক্রাইম করার প্রবণতা বেড়ে যায়। এরা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভাল হয় না। যৌনতা হলো প্রাণির অন্যতম বেসিক চাহিদা। এর ব্যত্যয় ঘটলে মানুষ স্বাভাবিক থাকে না। যে সকল কর্মীরা রাত করে বাড়ি ফেরে তাদের যৌনজীবন স্বাভাবিক হয় না। যে সকল কর্মীর যৌনজীবন স্বাভাবিক নয়, তাদের থেকে প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদী ভালবাসা পেতে পারে না। তারা সমস্যার গভীরে পৌঁছতে পারে না।

বহুদিন যাবৎ একটা বিষয় নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা করছি। ব্যাংক এশিয়ার সোহরাব সাহেব তার নাম দিয়েছে 'থিউরাম অব সিক্স পিএম'। থিউরিটার মূল বিষয়টা হলো- সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে বাসায় না পৌঁছলে অধিকাংশ গৃহিনীরা স্বামীর বিকল্প খুঁজে নেয়। অনেকে বলতে পারেন অফিসের সময় ও যানজটের কারণে বাসায় ৬টার মধ্যে পৌঁছানো যায় না ইত্যাদি ইত্যাদি। অফিস সময় বা যানজট প্রভৃতির অজুহাত দেয়া হতে পারে, তবে ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা প্রাণী। প্রাণী হিসেবে আমাদের কতগুলো বেসিক রিকোয়ারমেন্ট রয়েছে সুষম খাবার, বিশুদ্ধ বাতাস, পরিষ্কার পানি, পরিমিত ঘুম ও সেক্স প্রভৃতি। এগুলো বায়োলজিকাল নিড। বিভিন্ন অযুহাতে এগুলোকে অস্বীকার করতে পারা যায় না। একজন কর্মীর কাছ থেকে ১০০% কোয়ালিটি প্রোডাক্ট পেতে হলে বেসিক নিড ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের দেশের অধিকাংশ ম্যানেজমেন্ট কখনও এগুলো নিয়ে ভাবে না। তাই তো যতসব বিপত্তি।

এই গ্রহের প্রানীরা সূর্য নির্ভর। তাই তাদের ঘুমের সময় ৮ ঘন্টা যা সাধারণত শুরু হয় রাত ৭.৩০ থেকে ৮.৩০ এর মধ্যে। সূর্য অস্ত যাওয়ার দেড় দুই ঘন্টার মধ্যে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ নামের প্রাণীদের ঘুমের ভাব আসে, মস্তিস্ক তখন ঘুম চায়। তাইতো এখনও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এই সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। জাপানিরা দুপুরে ঘুম আসলে ঘুমিয়ে পড়ে কারণ তারা ঘুমকে খুব মূল্য দেয়। জাপানি ও কোরিয়ানরা ভোর বেলাতে ঘুম থেকে উঠে সকাল সকাল অফিস শুরু করে, বাড়ি ফেরে সন্ধ্যা হবার আগেই। শুনেছি শ্রীলংকাতে সন্ধ্যা হবার আগেই বাড়ি ফেরে সকলে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় সন্ধ্যার সময়। প্রানী হিসেবে শারীরিক চাহিদারও সময় আছে। সময় পার হয়ে গেলে সেই চাহিদা ফিকে হয়ে যায়। অফিস টাইমের পলিসিতো মানুষের বানানো। মানুষ নামক প্রানীর প্রয়োজন অনুসারে অফিস সিডউল তৈরী করাতে কি কোন বাধা আছে?

৮ ঘন্টা কর্ম সময়ের কথা মুহাম্মদ (স:) ১৪'শ বছর পূর্বে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ফযরের সালাতের পর কর্মে বেড়িয়ে যাও। ফযর ওয়াক্ত থেকে যোহর ওয়াক্তের ব্যাবধান ৮ ঘন্টা। কর্মের ব্যঘাত যেন না হয় সে জন্য এই সময়টুকুতে কোন প্রকার প্রার্থনার বিষয় রাখা হয় নাই।

মে মাসের চেতনায় সকলে উজ্জীবিত হউক।