বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি ও বাংলা ভাষার অস্তিত্ব রক্ষা

রাফসানযানি প্রীতম
Published : 13 March 2016, 10:20 AM
Updated : 13 March 2016, 10:20 AM

১৯১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কলকাতায় বাংলাভাষী মুসলিমদের সাহিত্য চর্চার স্বাধীন ক্ষেত্র সৃষ্টি ও বিকাশের জন্য কলকাতাবাসী বাঙ্গালী মুসলিমদের উদ্দেগ্যে "বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি" গঠন হয় । কবি আবদুল করিম ছিলেন বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির প্রথম সভাপতি ও ডক্টর মুহম্মদ শহীদুলাহ ছিলেন প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির মূলনীতি গুলো ছিল:

১) মুসলমান সমাজে বাংলা সাহিত্যের চর্চার প্রসার ও তার পরিপুষ্টি সাধন।
২) আরবী, ফারসী, উর্দু প্রভৃতি ভাষায় রচিত প্রচীন ধর্মশাস্ত্র ও ইতিহাস গ্রন্থের অনুবাদ ও সেটির প্রচার।
৩) প্রাচীন মুসলমান বঙ্গ সাহিত্যের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ।
৪) বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের পীর, সুফী সাধকদের ও অন্যান্য মহান ব্যাক্তির জীবনী সংগ্রহ ও প্রকাশরা।
৫) বাংলা মুসলমান সমাজের প্রাচীন বংশাবলীর ও প্রাচীন কীর্তিকলাপের ইতিবৃত্ত ও জাতীয় ইতিহাসের অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ।
৬) বাংলার মুসলমান সমাজে সাময়িকপত্রের প্রচার।
৭) সদ্গ্রন্থের প্রচারকল্পে সাহিত্যসেবীদিগকে উৎসাহ প্রদান।
৮) সমিতির একটি নিজেস্ব স্থায়ী পুস্তকাগার স্থাপন ও পাঠাগার সংরক্ষণ।

(দ্র: মুহম্মদ হাবীবুলাহ (বাহার), সাহিত্য-সমিতির ইতিহাস', মাসিক মোহাম্মদী, ১৪শ বর্ষ-৭ম সংখ্যা, বৈশাখ, ১৩৪৮, পৃ. ৪৫৩) "বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা" ছিল বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি থেকে নিয়মিত প্রকাশিত
পত্রিকা ।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম করাচিতে অবস্থান কালে "মুক্তি" নামক একটি কবিতা এই পত্রিকায় মুদ্রণের  প্রেরণ করেন এবং এটি ছিল বিদ্রোহী কবির পত্রিকায় মুদ্রিত কোন প্রথম কবিতা ।
(দ্র. মুজফফর আহমদ ও কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতি কথা', পৃ. ২৩-২৫)।

"বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি" তে যারা যুক্ত ছিলেন তারা হলেন- মহাকবি কায়কোবাদ (১৮৫৮-১৯৩১), আব্দুল করিম সাহিত্য-বিশারদ (১৮৫৯-১৯৫৩), শেখ আব্দুর রহিম (১৮৫৯-১৯৩১), শেখ রেয়াজউদ্দীন মাশহাদী  (১৮৬০-১৯১৯), শান্তিপুরের কবি মোজাম্মেল হক (১৮৬০-১৯৩৩), মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন (১৮৬২-১৯৩৩), মোজাম্মেল হক (১৮৮৫-১৯৭৬) মৌলভী মুজিবর রহমান (১৮৬৯-১৯৪০), ড.আব্দুল গফুর সিদ্দিকী (১৮৭২-১৯৫৯), মাওলানা আকরম খাঁ (১৮৭৭-১৯৬৮), সৈয়দ এমদাদ আলী (১৮৮০-১৯৫৬), এয়াকুব আলী চৌধুরী (১৮৮৮-১৯৪০), মুজাফফর আহমদ (১৮৮৯-১৯৭৩), এস. ওয়াজেদ আলী (১৮৯০-১৯৫১), ডা.লুৎফর রহমান (১৮৯১-১৯৩৭), আবু লোহানী (১৮৯২-১৯২৯), কবি শাহাদাৎ হোসেন (১৮৯৩-১৯৫৩), অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খাঁ (১৮৯৪-১৯৭৩),কবি গোলাম মোস্তফা (১৮৯৫-১৯৬৪), কাজী আব্দুল ওদুদ (১৮৯৫-১৯৭০), আবুল কালাম শামসুদ্দীন (১৮৯৭-১৯৭৮),আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯), মোহাম্মদ বরকতুলাহ (১৮৯৮-১৯৭৯),মাহবুবুল আলম (১৮৯৮-১৯৮১), কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬), আববাস উদ্দীন আহমদ (১৯০১-৫৯), মুহম্মদ হবীবুলাহ বাহার (১৯০৬-৬৬), আবু সয়ীদ আইয়ুব (১৯০৬-৮২), কবি আব্দুল কাদির (১৯৫৬-৮৪), আব্দুল মওদুদ (১৯০৮-৭০),
বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ (১৯০৯-৬৪), কবি কাদের নেওয়াজ (১৯০৯-৮৩), তালিম হোসেন (১৯১৮-৯৯), আহসান হাবীব (১৯১৯-৮৬), হুমায়ুন কবির (১৯০৫-১৯৬৯)।

উপরোক্ত ব্যক্তিগণের মধ্যে সকলে পাকিস্তান আন্দোলনের সমত্থর্ক ছিলেন কিন্তু কেউ কেউ ভারত ভাগ হবার পর ভারতে থেকে যান। কিন্তু তাদের প্রায় সবাই পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং তারা সবাই পূর্ব বাংলায় ভাষা আন্দোলনের কর্মী বা তার একনিষ্ট সমর্ত্থক ছিলেন যার কারণে অনেককে সে সময় জেলে যেতে হয়েছিল এবং
তারা বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।