হ্যান্ডবিল: ভূমিকম্পে করণীয়

রণদীপম বসু
Published : 18 Sept 2011, 03:41 PM
Updated : 18 Sept 2011, 03:41 PM



[লেখাটা আরেক বিশেষ মুহূর্তে গত অক্টোবর,২০১০-এ লিখা। প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্ব বিবেচনায় এখানে তুলে দিলাম।]

সকালে দৈনিক পত্রিকাটা খুলতেই ছোট একটা রঙচঙে কাগজ চোখে পড়লো। একটা হ্যান্ডবিল। 'ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন হোন' শিরোনামে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি কর্তৃক প্রচারিত একটি জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ। দৈনিকের ভেতরে বিভিন্ন সময়ে এরকম বিজ্ঞাপন প্রচার আরো হয়েছে। সেগুলোতে একবার হালকা চোখ বুলিয়ে গুরুত্ব না দিয়েই ফেলে দিয়েছি। কিন্তু এবারেরটিকে গুরুত্ব না দিয়ে কি কোন উপায় আছে ? বিশেষ করে এই ইট-সিমেন্টের অপরিকল্পিত জঞ্জাল নগরীগুলোতে খাঁচাবদ্ধ ইঁদুরের মতো ভয়ঙ্কর আতঙ্কগ্রস্ত নাগরিক জীবনে যখন প্রতিমুহূর্তের অনিশ্চয়তায় সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয় !

ইদানিং ব্লগে ভূমিকম্পে করণীয় এবং সম্ভাব্য ভয়াল মানবিক বিপর্যয় নিয়ে বেশ কিছু চমৎকার বিশ্লেষণী লেখা ও প্রতিবেদন পড়ার সুযোগ হয়েছে। ওগুলো পড়ে সত্যি বলতে কি, নিরূপায় নাগরিক হিসেবে নিজের অসহায়ত্বকেই আরো বেশিভাবে আবিষ্কার করেছি আর আতঙ্কে আরো বেশি করে জড়োসড়ো হয়েছি কেবল। আমার আশঙ্কার কারণ একটাই। অত্যন্ত লোমহর্ষক কল্পনায় আমি দেখতে পাই পূর্ণ মাত্রার একটা ভূমিকম্প হলে বর্তমান বাস্তবতায় এই ঢাকা নগরীর মাত্র ত্রিশ ভাগ ভবন বা স্থাপনাও যদি ভেঙে পড়ে, তাহলেও যে বিপর্যয় নেমে আসবে তাতে প্রথম ধাক্কায় আনুমানিক যে লক্ষাধিক লোক কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা যাবে, শেষপর্যন্ত তাঁরাই হয়তো মহাভাগ্যবান হবে ! কেননা, এমন ভূমিকম্প উত্তর একটা ভয়ঙ্কর বিপর্যস্ত নগরীতে পানিহীন, বিদ্যুৎহীন, গ্যাসহীন, খাদ্যহীন, চিকিৎসাহীন, আশ্রয়হীন, যোগাযোগহীন, উদ্ধারহীন এরকম অসহনীয় অবস্থায় সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া ভয়াল পরিস্থিতিতে যাঁরা বেঁচে থাকবে, তাঁরা কি সত্যিই বেঁচে থাকবে ! এ যে মৃত্যুরও বাড়া ! ধুঁকে ধুঁকে মরা ! এই বেঁচে থাকার দুঃস্বপ্নের চাইতে হয়তো মৃত্যুই একমাত্র পরিত্রাতা হবে তখন !

সকালের খবরে চোখ বুলাবার আগেই হাতে উঠে আসা এই হ্যান্ডবিলটা পড়ে আমি আবারো আতঙ্কিত হলাম আমার সম্ভাব্য না কি অনিবার্য গন্তব্যের কথা ভেবে ! ওটাতে ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্পের সময় এবং ভূমিকম্পের পরে আমাদের করণীয়গুলো পয়েন্ট আকারে সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা কিভাবে কতটুকু সচেতন হবো জানি না, তবে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির এই উদ্যোগটিকে আমি অভিনন্দিত করি এজন্যেই যে, একটা অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিভাবে আমরা সাধারণ নাগরিকরা কতোটা অসহায় বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারি তার আলামতগুলো কল্পনা করে আমাদের নিজস্ব কৃতকর্মের জন্য অন্তত আফসোসটুকু জেগে উঠবে ! তবুও 'বেটার লেট দ্যান নেভার' ! তাই অফিসের স্ক্যানারটার সহায়তায় এই হ্যান্ডবিলটার স্ক্যান-কপির সাথে ব্যক্তিগত অনুভবের দু'পয়সা যোগ করে সবার সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করলাম।

শেষকথা হিসেবে স্কুলমাস্টারের সেই উপদেশটা বয়ান করি। আতঙ্কের সময় প্রধান করণীয় হলো আতঙ্কগ্রস্ত না-হওয়া !