টিকিট বিক্রি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কি পরিস্থিতি উন্নত করবে?

রাসেল পারভেজ
Published : 4 Jan 2011, 02:03 AM
Updated : 4 Jan 2011, 02:03 AM

জনপ্রিয় হয়ে উঠতে চাওয়ার ব্যাধিতে আক্রান্ত আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী, তিনি আজ মন্ত্রীসভার বৈঠকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের টিকিট বিক্রির জন্য ঢাকাসহ সারা দেশে অনুমোদিত ব্যাংক দুটির বুথের সংখ্যা বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন[ বিডিনিউজ২৪ডটকম]। বাংলাদেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি এই নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছিলো আরও কয়েক বছর আগে, সে অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন ভেন্যুতে আইসিসি পর্যবেক্ষক দল গিয়েছেন, মাঠ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সুবিধাগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন। চট্টগ্রামের জহুর স্টেডিয়ামে যখন আইসিসি পর্যবেক্ষক দল গিয়েছিলেন তখন সেখানকার সাইট স্ক্রিন ভেঙে পড়েছিলো, এছাড়াও জহুর স্টেডিয়ামের জলাবদ্ধতার সমস্যার কারণে সদ্য সমাপ্ত জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ সিরিজের চতুর্থ ম্যচটিও পরিত্যাক্ত হয়। বাংলাদেশের স্টেডিয়াম দুটো হয়তো ১৯শে ফেব্রুয়ারী যখন ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধন হবে তখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়েই যাবে কিন্তু গত দুই দিনে ক্রিকেট খেলার টিকেট নিয়ে হুজুগে বাঙালিদের বিক্ষোভ ও মিছিলের প্রেক্ষিতে মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নির্দেশনা কি আদৌ পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে? এটা শুধুমাত্র সস্তা জনপ্রিয়তার একটি ভ্রান্তিকর পদক্ষেপের বাইরে কিছু নয়।

বিভিন্ন কোটাওয়ারী ব্যবস্থায় বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচগুলোর ৪০% শতাংশ টিকেট অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য সংরক্ষিত রাখতে হয়েছে, বিভিন্ন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোটা এবং বিশেষ বরাদ্দ বাদ দিলে প্রতি ম্যাচের প্রায় ১৫ হাজার টিকেট বিক্রি হবে সিটি ব্যাংকের ৫০টি ও অগ্রণী ব্যাংকের ৩০টি শাখায়। প্রতিটি খেলার জন্য ব্যাংক প্রতি টিকেট বরাদ্দ আনুমানিক ২০০টি, ঢাকার ব্যাংকগুলোতে অনুমোদিত টিকেটের সংখ্যা বেশী হলেও মফস্বলের শাখাগুলোতে খেলাপ্রতি বরাদ্দ টিকেট ১০০ থেকে ১৫০টি, সেখানে ব্যাংকের সামনে টিকেটের জন্য ভীড় করেছে ১০০০ উন্মত্ত জনতা। তারা সারাদিন না খেয়ে স্থানত্যাগ না করে ব্যাংকের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো স্বপ্নের ক্রিকেট বিশ্বকাপের টিকেট নামের সোনার হরিণ ধরবে বলে।

ক্রিকেট টিকেটের কোনো কোটা নেই, একজন ক্রীড়ামোদী কতগুলো টিকেট কিনতে পারবেন সেটাও নির্ধারিত নয়, তবে যদি সবাই প্রতিটি খেলার একটি করে টিকেট দাবী করে তবে হয়তো মাত্র ৫০০ জনকেই টিকেট বরাদ্দ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকের সংখ্যা বাড়াতে পারেন কিন্তু তিনি কি যাদুবলে মাত্র ৫০ দিনে স্টেডিয়ামের আসনসংখ্যা বাড়াতে পারবেন? বাংলাদেশের হুজুগে মানুষের জন্য হয়তো লাখো মানুষের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়াম প্রয়োজন নইলে এমন হুজুগমত্ত জাতির সকলের জন্য প্রধানমন্ত্রী মাথা কুটে মরলেও একটি করে টিকেটের বন্দোবস্ত করতে পারবেন না।

মন্ত্রী সভার বিশেষ বৈঠকে কয়েকজন মন্ত্রী আবদার করেছেন তাদের প্রতিটি খেলার ২০টি করে টিকেট বরাদ্দ দিতে হবে। মন্ত্রীগণ এইসব সৌজন্য টিকেট নিয়ে হয়তো বাণিজ্য করবেন, হয়তো দলীয় নেতাকর্মীদের উপহার দিবেন এই টিকেটগুলো কিন্তু আমাদের মন্ত্রী পরিষদ বহরে-গতরে বেশ বড়, সুতরাং এইসব মন্ত্রীদের টিকেট বরাদ্দ দিলে হয়তো সৌজন্য টিকেট বিলিয়েই সকল টিকেট শেষ হয়ে যাবে, মন্ত্রীদের আব্দারের পর আসবে দলীয় বিভিন্ন নেতাদের আবদার, এরপরে দলের ছাত্র নেতাদের আবদার, এইসব আবদার মিটিয়ে সাধারন মানুষের জন্য বিশ্বকাপ দর্শন নেহায়েত অসম্ভব হয়ে যেতে পারে।

টিকেট নিয়ে এই হানাহানি কিংবা অব্যবস্থাপনা কি রোধ করা যেতো না? বিশেষ করে গত কয়েক বছরে যখন বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা প্রধানতম জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে, ডিজিটাল সরকার চাইলেই হয়তো অনলাইনে টিকেট কেনাবেচার বন্দোবস্ত করতে পারতেন, সেক্ষেত্রে অবশ্য উৎসাহীদের ভীড়ে সাইট ক্রাসের একটা সীমিত সম্ভাবনা ছিলো তবে সেটা কল্পজগতে বিপর্যয় আনলেও বাস্তবে ব্যাংকিং ব্যবসাকে আক্রান্ত করতো না। আগ্রহী ক্রীড়ামোদীদের চাপে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর যেসব শাখা টিকেট বিপণনে জড়িত হয়েছিলো, গতকাল সেসব ব্যাংকের স্বাভাবিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে, ধাওয়া পালটা ধাওয়া এবং মিছিল হয়েছে। সেসব অঘটন ইচ্ছা করলেই এড়ানো যেতো, হয়তো ভবিষ্যতে বাংলাদেশ তেমন প্রস্তুতি নিবে কিন্তু আজকের এই ঘোষণায় তেমন পরিবর্তন আসবে না।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনেও আমার নিজের প্রশ্ন আগামী কাল কি ব্যাংকগুলোর কোনো শাখায় বিক্রির জন্য কোনো টিকেট অবশিষ্ট থাকবে? না কি ভুয়া টিকেট বিক্রি করবে ব্যাংকগুলো? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার ফলাফল দেখতে আমি আগ্রহী।

মূল আলোকচিত্রের ক্যাপশন: বিশ্বকাপ ক্রিকেটের টিকিট বিক্রি চলছে। টিকেট বিক্রির তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর পান্থপথে সিটি ব্যাংকের সামনে ক্রিকেটপ্রেমীদের অপেক্ষা। ছবি: রাশেদুজ্জামান/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/ ঢাকা, জানুয়ারি ০৪, ২০১১