মাননীয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের প্রতি আমার আবেদন

জহিরুল ইসলাম রাসেল
Published : 9 Dec 2015, 07:35 PM
Updated : 9 Dec 2015, 07:35 PM

মাননীয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম,

সশ্রদ্ধ সালাম ও শুভেচ্ছা আপনার প্রতি। আপনি দায়িত্ব গ্রহনের পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে নতুন করে চাঙ্গাভাব পরিলতি হচ্ছে। বিভিন্ন পত্রিকা মাধ্যমে জেনেছি, ইতোমধ্যেই আপনি এই বিভাগের এবং বিভাগের অধীনে সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কোন অনিয়ম-দুর্নীতি, কর্তব্য অবহেলা বরদাশত করা হবে না। অবৈধ ভিওআইপির বিরুদ্ধেও নিয়েছেন কঠোর অবস্থান। আপনি প্রশংসিত হয়েছেন সর্বমহলে। আপনি একজন বাংলাদেশী টেলিভিশন অভিনেত্রী, পরিচালক, লেখক, আইনজীবী, সমাজকর্মী এবং সংসদ সদস্য। যোগ্যতার মানদন্ডে আপনি অনন্য। আর তারই স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে।

ডিজিটাল বাংলা গড়ার প্রয়াসে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে। তথ্যপ্রযুক্তি এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। কিন্তু অনাকাঙ্খিতভাবে কিছুদিন ধরে ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনার মধ্যে সাধারন মানুষের প্রতি আপনার খোলা চিঠিটি পড়ে এর মর্ম বুঝেছি এবং উপলদ্ধি করেছি তাই সাধারণ ক্ষুদ্র একজন মানুষ হিসেবে কিছু লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে লিখছি-

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। তবে আমরা জানাতে চাই যে, আমরা সাধারণ মানুষ বিভিন্ন কাজে ফেসবুক নির্ভর হয়ে গেছি এবং ফেসবুক বন্ধে আমরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি তাই আপনার প্রতি বিণীত অনুরোধ এভাবে বন্ধ না করে প্রযুক্তিকে প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবিলা করার চেষ্টা করুন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগ্য লোক নির্বাচন করুন। সাময়িক সময়ের জন্য জননিরাপত্তার স্বার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে, সরকারের জনজীবনের নিরাপত্তা রার দায়িত্বের অংশ হিসাবে ফেসবুক সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে , এজন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই কিন্তু এই সাময়িকটা যদি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে তাহলে আমাদের ক্ষতির পাল্লাটাও বেড়ে যাবে। আমাকে যদি আমার জীবনের নিরাপত্তার জন্য কোথাও আটকে রাখা হয়, তবে জীবন সংকটের ভয়ে ২/১ বেলা ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করবো কিন্তু তারপর…..। আইন, মানবাধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা এসবের দিকে না গিয়ে খুব সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে সাধারণ কয়েকটি বিষয় আপনার অবগতির জন্য উল্লেখ করছি-

১. কৃষিঃ
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের অর্থনীতি কৃষিনিভর। কিন্তু এখনও আমাদের কৃষি উন্নয়নের েেত্র অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, এদেশে বর্তমানে অসংখ্য শিক্ষিত তরুণ তরুণী কৃষি কাজে এগিয়ে এসেছে যারা শুধু ফেসবুকের মাধ্যমেই গড়ে তুলেছে বিশাল বিশাল নেটওয়ার্ক। এই ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপের মাধ্যমেই তারা একে অপরকে পৌছে দিচ্ছে কৃষি বিষয়ক তথ্য যেমনঃ খামার গড়ার প্রক্রিয়া, রোগবালাই সহ সব কিছু। এতে এক স্থানের আবিষ্কৃত তথ্য খুব সহজেই অন্য জায়গার কৃষিতে উদ্যোক্তারা ব্যবহার করতে পারছে খুব সহজেই। এসব সেবা সরকারী অফিস থেকে এত সহজে পাওয়া যায়না বলে আমার ধারনা। আমি আশা করি এই কৃষি উদ্যোক্তাদের হাত ধরেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছবে আমাদের কৃষি ব্যবস্থা, সেদিন আর বেশি দূরে নয়। ফেসবুক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এ সকল উদ্যোক্তা।

২. ই-কমার্স ও ফেসবুকনির্ভর বাণিজ্যঃ
দেশে যখন চাকরীর সংকট ঠিক সেই মূহুর্তে অসংখ্য তরুণ-তরুণী যুক্ত হয়েছে ই-কমার্স ও ফেসবুকনির্ভর বাণিজ্যে (এফ-কমার্সে) এটা অবশ্যই আশার আলো। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে ফেসবুক বন্ধ থাকায় খুব খারাপ সময় পার করছে ফেসবুককেন্দ্রিক এ প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক উদ্যোক্তাদের পথে বসার অবস্থা কারন এ সকল প্রতিষ্ঠনের প্রচারণার মাধ্যম মূলত ফেসবুক। দেশে বিক্রয়ডটকম, কিকবিডি, দারাজডটকম, আজকেরডিল, এখনইডটকম, কেইমুডটকম, প্রিয়শপ, ইউনিকবিডি, গ্যাজেট বাংলাদেশ সহ হাজারের বেশি ই-কমার্স ও মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান ফেসবুক বন্ধ হওয়ায় বড় ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়া এজেন্সিগুলোও চুক্তি অনুযায়ী তাদের বড় কর্পোরেট গ্রাহকদের ফেসবুক পেজ ব্যবস্থাপনা ও বিজ্ঞাপন দিতে না পারায় আর্থিক তির মুখে পড়েছে। তাদের সবারই আশা, খুব শিগ্রই ফেসবুক খুলে দিলে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

৩. সেবাঃ
সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশাববিদ্যালয়ের একদল তরুণ-তরুণী বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের শ্রম দিয়ে টিফিনের টাকা বাচিয়ে দেশের- দেশের মানুষ ও সমাজেন কল্যানে বৃক্ষ রোপন, শীত বস্ত্র, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, পথশিশুদের উন্নয়ন সহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। যাদের প্রচার ও সংগঠিত হবার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুক বন্ধ থাকায় তাদের কার্যক্রমে প্রচন্ড বিঘœ ঘটছে যা আমাদের সামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে বলে আমার ধারণা।

৪. সাধারণ যোগাযোগঃ
গত ১৮ নভেম্বর ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যমই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ায় সব ধরণের যোগাযোগ কম বেশি ব্যাহত হচ্ছে। ফেসবুক থেকেই অনেকেই বিশ্বের সকল প্রান্তের খবর নেয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকের ইনবক্সে চলে আলাপ আলোচনা। দূর-দূরান্তের বন্ধু, আত্মীয়স্বজনের সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে খুব সহজেই যোগাযোগ রাখতে পারি আমরা। ফেসবুকের মাধ্যমেই প্রচার প্রসার ঘটছে শিল্প, সাহিত্য সহ সবকিছুর। ফেসবুক বন্ধের কারনে ব্যহত হচ্ছে এ সবকিছুই।

অনেকের মতে দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ফেসবুক ব্যবহারে সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি সরকার, তবুও কেউ সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে কেউ ভয়ে ফেসবুক ব্যবহারে বিরত রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে, একসময় এক্সপ্লোর ব্যবহার করতাম, তারপর মজিলা ব্যবহার করতাম আর এখন টোর ব্যবহার করছি এইতো।

মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর প্রতি আমাদের আকুল আবেদন, আপনি এ বিষয়গুলো সদয় নজরে আনবেন এবং এর প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধ না করে আমাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সম জনবল নিয়োগ করে প্রযুক্তিগত সমতা বৃদ্ধিতে জোর দিলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা হাসিমুখে আপনার পানে চেয়ে আছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক খুলে দেয়ার অপেক্ষায়…….। – জহিরুল ইসলাম রাসেল, প্রতিষ্ঠাতা, হিয়া ফাউন্ডেশন।