আমাদের অর্থনীতিতে কি পোলট্রি শিল্পের প্রয়োজন ফুরাচ্ছে?

রাসেল সুমন
Published : 27 August 2015, 07:53 AM
Updated : 27 August 2015, 07:53 AM

সব শেষ হয়ে গেলেই বুঝি আমাদের নজর সেখানে পড়ে । শেষ হওয়ার আগে আমরা কিছুই ভাবি না । বলছি আমাদের পোল্ট্রি শিল্পের কথা । শুন্য দশক থেকে পোলট্রি শিল্পে ব্রয়লার মুরগী ব্যাপক ভাবে পালন করা হচ্ছে । মূলত মাংশের চাহিদা বৃদ্ধি থেকেই ব্রয়লার মুরগীর ব্যাবসা খুব তাড়াতাড়ি দেশে বিস্তার লাভ করেছে । অবশ্য দেশে মাংশের যোগানেও এই ব্রয়লারের ভুমিকা কম নয় । সেটা সবাই স্বীকার করতে বাধ্য । আমাদের দেশে ব্রয়লারের ইতিহাস খুব একটা প্রাচীন নয় । তবুও উত্তরোত্তর এর বিস্তার লক্ষণীয় । এছাড়া দেশে গড়ে উঠেছে ভালোমানের ব্রয়লার ফিড মিল । যা এই ব্রয়লার মুরগীর খাবারের যোগান দিয়ে থাকে । এইসব বেসরকারি ভাবে গড়ে উঠা ফিড মিলের মধ্যে অন্যতম নারিশ পোলট্রি ফিড লিঃ, আদনান ফিড মিল, কোয়ালিটি ফিড মিল প্রভৃতি । আর যে ব্রয়লার বাচ্চাটি ৩০ দিনে বড় হয়ে ১২০০/১৩০০ গ্রাম হয় সেই বাচ্চাটি উৎপাদন করে সরকারি সহ অনেক বেসরকারি হ্যাচারি । এরমধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী নারিশ হ্যাচারি,কাজি ফার্ম,রেনেটা ও পিপলস হ্যাচারি । যা মোটামুটি ব্রয়লার বাচ্চার বাজার নিয়ন্ত্রন করে । আজকের লেখায় সমীক্ষায় না গিয়ে কিছু তথ্য আপনাদের নজরে আনার চেষ্টা করছি । সেটা হলো এই ব্রয়লারের বাজার পদ্ধতি বা মুল্য নিয়ন্ত্রন কে করে ? হোক সেটা একদিন বয়সী বা বাজারজাতকরনের সময় । বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্রয়লার ব্যাবসায়ী তরুন । পরিবার থেকে টাকা পয়সা নিয়ে বা ব্যাংক লোন নিয়ে একটি খামার তৈরী করে । পরবর্তীতে কোম্পানী মনোনীত ডিলার থেকে ব্রয়য়লার বাচ্চা এবং খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে । যা প্রায় পুরোটাই বাকী । ৩০ দিন পালনের পর বাজারজাতকরে টাকা পরিশোধ করে । বিপত্তিটা এখন সেখানেই । অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখা এসব তরুণদের ব্যাবসাটি এখন পুরোটাই অলাভজনক । কোন লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেনা এই উদ্যোগতারা । শুধু মাত্র বাজারের সাথে ব্রয়লার বাচ্চা ও খাদ্যের মুল্যের বিস্তর তফাতের কারনে । গত ৫ মাস যাবত ব্রয়লার বাচ্চার দাম উঠানামা করেছে  অস্বাভাবিক ভাবে । তবে বর্তমানে প্রতিটি ব্রয়লার বাচ্চার (একদিন বয়সী) বাজার দর ৩২ বা ৩০ টাকা  অথচ এখন যেই ব্রয়লার মুরগী বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সেই বাচ্চার দাম ছিল প্রতিটি ৫৫/৬০ টাকা বা তারও বেশী । একটা ব্রয়লার মুরগী দুই কেজি খাদ্য গ্রহন করে ওজন হয় ১২০০ গ্রাম প্রায় । এই দুই কেজি খাদ্যের দাম ৮৪ টাকা । ওষুধ খরচসহ অন্যান্য ব্যয় মিলে প্রায় ৮ টাকা খরচ হয় প্রতিটি বাচ্চাতে । এভাবে সকল খরচ সহ উল্লেখিত ওজনে পরিণত হতে মোট ব্যয় হয় ১৪৭ টাকা প্রায় । যদি বর্তমান বাজার (পাইকারী,যা খামারি পায়) ১০০ টাকা হয় তবে ১২০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগীর দাম হয় ১২০ টাকা । অর্থাৎ প্রতিটি ১২০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগীতে প্রায় ২৭ টাকা লোকসান । এতে দেখা যায় ১০০০ মুরগীর ফার্মে ২৭০০০ টাকা সহ ঐ তরুন উদ্যোক্তার সারা মাসের পরিশ্রম বৃথা যায় । কিন্তু আপনি যদি বাচ্চা ও খাদ্য যোগানদাতা কোম্পানির দিকে দৃষ্টিপাত করেন তাহলে দেখতে পারবেন কোনমতেই এরা লোকসানের পথে নেই । কারন এরা অনিয়ন্ত্রিত মুনাফা অর্জনে চেষ্টায় থাকে বা করে নেয় । তবে ডিলার বা এজেন্টগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় । একজন এজেন্টের সাথে কথা বলেই এই সত্যতা পাওয়া যায় । আমার প্রশ্ন হলো কিভাবে একটি ব্রয়লার বাচ্চা ৫৫,৬০ কিংবা ৭০ টাকায় বিক্রয় করা হয় । এতে তার কি পরিমান লাভ করা উচিত বা কত টাকা উৎপাদন থেকে বিপনন পর্যন্ত ব্যয় হয় ? নিশ্চয় কিছু বিধি বিধান আছে । হয়তো কোম্পানি গুলো বিভিন্ন অনৈতিক পন্থায় এভাবে শোষণ করে মুনাফা অর্জন করছে । এটা অন্যায় । তরুন উদ্যোগতাদের সাথে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয় । রাষ্ট্রের একটু নজরদারিই হয়তো এই পোল্ট্রি সেক্টরে তরুন ব্যাবসায়ীদের বাঁচিয়ে তুলতে পারে । আমরা তাই আশা করি ।