আমাদের পুলিশ আমাদের তারকা

রাসেল সুমন
Published : 1 May 2016, 04:02 PM
Updated : 1 May 2016, 04:02 PM

সবকিছুর সৌন্দর্য আছে,কিন্তু সবাই তা দেখতে পায় না'কথাটি বলেছেন চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস । তারমানে অনেকেই সেই সৌন্দর্য দেখতে পায় । তবে এই অমৃত বচন পুলিশের ক্ষেত্রে যেন মানানসই নয় । আমরা ধরেই নিয়েছি পুলিশের কোন সৌন্দর্য থাকতে পারে না । তাই পুলিশের সৌন্দর্য খোঁজা বা দেখার প্রশ্নই আসে না । সেদিন চা স্টলে বসে চা খাচ্ছি (মানে পান করছি )। সেই স্টলে আবার টিভিও আছে । ভারতীয় কোন চ্যানেলে ক্রাইম পেট্রোল নামে এক অনুষ্ঠান হচ্ছে । সেখানে পুলিশ একটি খুন নিয়ে তদন্ত করছে । এমন সময় দোকানদার বলে উঠলো খুন যে করছে ধরা খাইবো । পুলিশ যে চালাক ! তার মানে এই অনুষ্ঠানগুলো দেখে তার মনে বিশ্বাস জন্মেছে পুলিশ পারে । এটা হয়তো ভারতীয়দের মনেও জন্মেছে । অস্বাভাবিক কিছু নয় ।

আগে কাগজের পত্রিকা বেশি পড়তাম। এখনো পড়ি তবে কম । সবই তো অনলাইন ভার্সন পাওয়া যায় । সব পত্রিকাতেই একটা বিষয় লক্ষনীয় তা হলো প্রতিদিন পুলিশের কোন কৃতিত্বের খবর নাই । সব নিউজই হয় পুলিশ ব্যর্থ ! আচ্ছা সারাদিনে কি পুলিশ একটাও ভালো কাজ করে না ? চাকুরির সুবাদে ঢাকা থেকে প্রায়ই ট্রেনে ময়মনসিংহে আসি । রাত তিনটার পর যখন বাসায় যাওয়ার জন্যে রিক্সায় উঠি তখন মনে ভয় ধরে আল্লাহ্‌ই জানে পথে কি হয় । কিন্তু পথের পাশে যখন পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি মনটা সাহসে ভরে যায় । আমি নিশ্চিত এই জীবনে ঐ রাতে নিরাপত্তার পাওয়ার মত সুখ আমি আর কোথাও কোন রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে পায়নি । ঢাকা শহরে রাতে সিএনজি দিয়ে বাসায় ফিরবো । ড্রাইভার কে বললাম ঐ দিক দিয়ে কেনো যাবেন ? উত্তরে বলল কাকরাইল দিয়ে গেলে পথে পুলিশ পাবো । নিরাপদে যেতে পারবেন । আসলে দিনে আমরা নিরাপদ বোধ করি কারণ তখন সূর্যের আলো থাকে আর রাতে পুলিশকে সূর্যের আলোর বিকল্প ভেবে তাকে আমরা খুঁজি !

.
মাস কয়েক পূর্বে টিএসসি অডিটোরিয়ামে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাই । সেখানে র‍্যাবের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন । বক্তৃতায় একসময় বললেন 'বইটিতে ছোট্ট চরিত্রে একজন পুলিশ অফিসারের ভুমিকা আছে । এরপরেও আমার ভালো লেগেছে কারণ এখানে পুলিশের ভূমিকা আছে' । তখন আমি ভাবলাম এই ভুমিকা আমাদের সবাইকে খুঁজতে হবে । তাহলেই ভালোর দিকে মানুষের মন যাবে । কিছু ভালো কাজতো অবশ্যই তারা করে । তাহলে কেন আমরা তা বলি না । সেটা আমার জানা নাই ।

.
কিছুদিন আগে ম্যাজিস্ট্রেট এর সামনে এক নেশাখোর নিয়ে পুলিশ হাজির। কি এক কাজে আমিও ঐ সময়ে উপস্থিত। তখন বিচারকাজ শেষের পথে। পুলিশের বক্তব্য শুনেতো আমিতো অবাক! সে রুমের বাহিরে অভিভাবক কে বলছে আপনি যদি সন্তানকে ভালো রাখার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন তাহলে স্যার হয়তো কোন শর্তে আপনার ছেলেকে ছাড়তে পারে। জেলে যাওয়া কি ভালো? মাঝে মাঝে আমিও খোঁজ নিলাম এতে সে ভালোও হতে পারে ! দরকার হলে আমি কাজের ব্যবস্থা করে দিবো । বিষয়টি দেখেন ! অথচ এমন নেশাখোর প্রতিটি এলাকায় আছে । আমরা কি কখনো ভাবি তাকে কাজে লাগানো দরকার!

.


ঘটনাটি গত মাসে। ময়মনসিংহ স্টেশনে রাতে আড্ডা দিচ্ছি । হঠাত মনে হলো হকারগুলো যদি একটি ঝুড়ি ব্যবহার করে তাহলে স্টেশনে বিভিন্ন কাগজ বা ময়লা পড়ে নোংরা হবে না । আমি হকারদের বললাম এই ঝুড়ি রাখার বিষয়টি এবং সাথে সহযোগিতা চাইলাম পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ আলীম উদ্দিন সাহেবের । তিনি সাথে সাথে সব হকারদের বলে দিলেন এবং প্রতিদিন এই বিষয়ে খোঁজ নিতে লাগলেন । এক সপ্তাহের মধ্যে রেলস্টেশনের পরিবেশ পাল্টে গেলো । ঝকঝকে পরিবেশ দেখে অনেকেই এই উদ্যোগকে প্রশংসা করতে লাগলো । দেখুন কথাটা বলার উদ্দেশ্য হলো আপনার কোন পরিকল্পনা সমাজ পরিবর্তনের কাজে লাগলে তা পুলিশ কে বলুন যদি সহায়তা না করে তাহলে বলুন এরা মন্দ ! কিন্তু কিছু না করেই ঢালাও ভাবে সমালোচোনা করে তাদের মনোবল কে নষ্ট করে দিচ্ছি ।একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ যা করতে পারবে তার সুযোগ কি আমরা দিচ্ছি? আসলে আমরা অন্যায়কে রোধ করতে জানিনা তবে কোন অন্যায় হয়ে গেলে সেখানে আমরা পুলিশ ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা শুরু করি। তবে ভাবি না এই অন্যায় যেন আর না হয়।

.
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় তা হলো আমরা পুলিশের সাথে যোগাযোগ বা কথাবার্তা কম বলি। শুধু বিপদে পড়লে তাদের কাছে দৌড়াই। এটা ঠিক নয়। রাষ্ট্রের এই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট আমাদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছি। সুতরাং আমাদের সবারই সমাজের যে কোন আপত্তি জনিত ব্যাপার (যা আপনার কাছে মনে হচ্ছে) সেটা তাদের অবহিত করবো বা সেই বিষয়ে পরামর্শ নিবো। প্রয়োজনে পরামর্শ দিবো। ভাবছেন সেই পরিবেশ আছে কিনা? বা আপনার পরামর্শ নিবে কিনা ! হয়তো পুরো বিভাগটি এখনো তেমন হয়ে উঠেনি তাই বলে তাদের সাথে আলোচনার সুযোগ নাই সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। তারুণ্য নির্ভর পুলিশ বাহিনী এখন অনেকটাই পরিবর্তনের পথে । সেই পরিবর্তনে আমাদের সহযোগিতাটাই সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। একটু প্রশংসা বা ন্যায্য হাততালি টুকু তো আমরা দিতে পারি । আমার জানা নাই কবে বা কোন মিডিয়ায় তাদের কোন কৃতিত্ব ফলাও করে প্রচার হয়েছে। হলেও আমার চোখে পড়ে নাই। আশা করি পুলিশও এসব না দেখে তার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করবে।

.

শেষে বলি,আমাদের টিভি চ্যানেল বা মিডিয়াগুলো কিন্তু পারে পুলিশকে ভালো পরিচয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে। যেটা অন্যান্য দেশ করছে । কেউ যখন ভালো মর্যাদা পাবে তখন কোন অন্যায় কাজ করলে নিজেই নিজের আদালতে শাস্তি পাবে । এটাও হতে পারে উন্নতির একটি পথ । এভাবেই পরিবর্তন হবে। আশায় রইলাম একজন পুলিশ পেলে যেন আমাদের নতুন প্রজন্ম তার সাথে একটি ছবি তুলে বলতে পারে 'একজন সেলিব্রিটির সাথে আমি'  (আমি যা করি) ! বিদেশে কিন্তু এমনটা হয় । উন্নতির পথেই পুলিশ এটা ভেবেই আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি ।

ধন্যবাদ

রাসেল সুমন