পৃষ্ঠপোষকতা চায় ক্ষুদে ফুটবলার সাদিয়া-বিথী

রিফাত কান্তি সেন
Published : 21 Oct 2016, 07:33 PM
Updated : 21 Oct 2016, 07:33 PM


জয়ী হয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, আরো ভাল কিছু উপহার দিতে চাই: ক্ষুদে ফুটবলার সাদিয়া ইসলাম শর্মি

এগার কি বার বছরের শিশু সাদিয়া ইসলাম শর্মি। অসাধারন ফুটবল প্রতিভার অধিকারী চাঁদপুরের অগ্নিকণ্যা। চাঁদপুরে ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হলো ক্ষুদে ফুটবল আসরের জমজমাট পর্ব বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব স্মরণে গোল্ডকাপ ফুটবলের ফাইনাল পর্ব। এদিন সাদিয়া ইসলাম শর্মির দল ১৮ নং শোরসাকযুক্ত সঃ প্রাঃ বিঃ শাহারাস্তি ট্রাইবেকারে মতলব উঃ উপজেলার ৬৩ নং নাছিরাকান্দি সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়কে হারিয়ে জয় লাভ করে।


জয়ের আনন্দে উল্লসিত সাদিয়া বললো, সুযোগ পেলে সামনে আরো ভাল কিছু উপহার দেবো। শাহারাস্তি উপজেলার ১৮নং শোরসাক যুক্ত সঃ প্রাঃ বিঃ পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া। বাড়ি শোরসাকযুক্ত গ্রামে। বাবার নাম- আমিরুল ইসলাম,মাতার -নাম শামিমা বেগম। ৫ ভাই বোনের মাঝে সাদিয়া ছোট। দুই বোন কলেজে পড়ে তারা সূচিপাড়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী। দারিদ্রতা তার পরিবারের বড় অভিশাপ। বাবার কর্মের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো, কাঠ কাটে। যাকে বলা হয় কাঠুরিয়া। গরীবের ঘরের সন্তান সাদিয়া। দারিদ্রতা তার চলার পথের প্রধান বাঁধা বলে জানালেন তার স্কুল শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম।


শখের কথা জানতে চাইলে সাদিয়া নীরব থাকে কিছুক্ষন। সাদিয়ার শারীরিক গঠন দেখলেই বোঝা যায় সে পর্যাপ্ত ভাল খাবার পাচ্ছে না। দরিদ্র পিতার পক্ষে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দরিদ্র পিতার, সেখানে ভাল খাবার তো নি:সন্দেহে তামাশা ছাড়া কিছু নয়।


সাদিয়ার ফুটবল শৈলী দর্শকদের মন কেড়ে নিয়েছে। তার ড্রিবলিং, এটাকিং দৃষ্টিনন্দনীয়। ফুটবল ভালবাসে সে। স্বপ্ন দেখে একদিন ফুটবলার হবে। কিন্তু পরিবারের অসচ্ছলতা তার এ স্বপ্নের প্রধান বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রতিভাবান ফুটবলার জানালো, আমাদের কোন দক্ষ কোচ নেই। নেই ভাল পৃষ্ঠপোষকতা। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাঃ বিঃ ফুটবল টুর্নামেন্টে ভাল খেলেছি, দলও জিতেছে। আমাদের যদি কেউ পৃষ্ঠপোষকতা করতো তবে একদিন আমাদের মত অসহায়রাও ভাল কিছু উপহার দিতে পারতো।

এবার তো বিভাগীয় খেলাতে চট্টগ্রাম মিশন, আত্মবিশ্বাস কেমন তোমার? আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। ভাল কিছু উপহার দেয়ার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খেলবো, জানালো সাদিয়া।

২০১৬ জেলা ভিত্তিক বঙ্গমাতা প্রাঃ বিঃ ফুটবল টুর্নামেন্টে, টুর্নামেন্ট সেরা পুরস্কার লাভ

আরেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় কামরুন্নাহার বিথী এক ক্ষুদে নারী ফুটবলারের নাম।চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তির ,১৮ নং শোরসাকযুক্ত প্রাঃ বিঃ পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী। পড়ালেখায় অতটা ভালো না হলেও খেলাধুলায় সে খুবই পটু। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এ নারী ফুটবলারের ফুটবল শৈল্পিকতা মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। অনেকে তাকে ছোট মেসি বলেও আখ্যায়িত করেছেন। বিথী এক কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষক শাহআলম আর গৃহবধু স্বপ্না বেগম দম্পতির কনিষ্ঠ কন্যা বিথী। দুই ভাই আর দুই বোনের সংসার তাদের। বিথী খুব ভাল ফুটবল খেলে, তাই সে সকল স্কুলের সকল শিক্ষকদের কাছেও নয়নের মনি বলে জানান তার স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরনে জেলা ভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টে তার স্কুল শোরসাকযুক্ত সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের হয়ে লড়েছে বিথী। গোল করে, ড্রিবলিং,এ্যাটাকিং, ট্যাকেল দিয়ে দর্শকদের এক শৈল্পিক, দৃষ্টিনন্দনীয় খেলা উপহার দেয় এই ক্ষুদে ফুটবলার।

প্রথম রাউন্ড, সেমিফাইনাল দুইটি ম্যাচেই একক নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে সে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ফাইনালে মাত্র ১০ মিনিট খেলেই তাকে মাঠ ছাড়তে হয় পায়ে ব্যাথার জন্য। লেগমেন্টে ইনজুুরির কারনে পুরো ম্যাচ খেলা হয়নি চাঁদপুরে বেড়ে উঠা এই ক্ষুদে ফুটবল যাদুকরের। আর তাই গ্যালারি ভরা দর্শকদের মনে হাহাকার। সেমিফাইনাল ম্যাচে আলো ছড়ানো বিথীর এভাবে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছিলেন না দর্শক, শিক্ষকবৃন্দ। ফাইনালে বিথী পুরোটা না খেলতে পারলেও তার দল ঠিকই জয় লাভ করেছে। সেও ভূষিত হয়েছে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়ারের পুরস্কার। তার শিক্ষকরা জানায় চাঁদপুরের ফুটবল কন্যা বিথী তাদের দলের প্রধান শক্তি।


একান্ত কথায় এ ক্ষুদে ফুটবল তারকা জানায়, তার স্বপ্ন একদিন বড় খেলোয়াড় হবে। দেশের হয়ে জাতীয় ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করবে। বাবা কী কাজ করে প্রশ্ন করলে খুব গর্ব নিয়ে বলে, কৃষক। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো ভাল কিছু উপহার দিতে পারবে বলে ইচ্ছে পোষন করে.ক্ষুদে এই ক্রীড়াবিদ।

গরীবের ঘরের এমন প্রতিভাবান ফুটবল শৈলী হয়তো দেশের হয়ে বয়ে আনতে পারে সম্মান। ওদের যথাযথ পরিচর্যা করলে হয়তো 'গোবরে ফুটতে পারে পদ্ম'! তাই প্রশাসনসহ সকলের কাছে আহবান জানাবো, এগিয়ে আসুন, পৃষ্ঠপোষকতা করুন এই প্রতিভাবান ফুটবল কন্যাদের।