৬৫ বছর বয়সেও রিক্সা চালিয়ে সংসার চালান তিনি

রিফাত কান্তি সেন
Published : 10 Dec 2016, 04:40 PM
Updated : 10 Dec 2016, 04:40 PM

'কী পাইনি তারই হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজি' রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত উক্তিটিকে বুকে লালন করে এখন আর হিসাব মিলাতে চান না ৩২ বছর ধরে রিস্কার প্যাডেল চাপা বৃদ্ধ মনসুর আহম্মেদ হাওলাদার। চাঁদপুরে'র মদনা গ্রামের হাওলাদার পরিবারে জন্ম নেয়া মনসুর আহম্মেদের ভাগ্যের চাকা বদল হয়নি।বিদ্যার আলো পড়েনি তার জীবনে। তাই জন্ম তারিখটাও মেলাতে পারছিলেন না। জীবন সংগ্রাম অতিবায়িত করতে একবার ছুটে গিয়েছিলেন সিলেটে। সিলেট, চাঁদপুর মিলে ৩২ বছর ধরে রিক্সা চালিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি। বর্তমানে চাঁদপুর নতুনবাজারস্থ একটি টিনশেডের বাসায় আরো চার ভ্যান চালকসহ ভাড়া থাকেন। বয়সের ভারে চোখ দুটো নষ্ট হতে চলেছে।একটি চোখে লেন্স ও লাগিয়েছেন বহু কষ্টে। অন্য চোখের শীঘ্রই অপরেশন করে লেন্স লাগানো প্রয়োজন!


গত কয়েকদিন আগে একটি চোখ কুমিল্লায় অপরেশন করান মনসুর। রিক্সা চালিয়ে, মানুষের কাছে খুঁজে কোন রকমে চিকিৎসা খরচ চালিয়েছেন। চোখের ঘা না শুকাতেই আবার নেমে পড়েন জীবন যুদ্ধে। হতভাগ্য মনসুর বিবাহও করেন। তার তিন কন্যা সন্তান।দুই কন্যাকে বিবাহ দিয়েছেন। এক কন্যা এবার স্কুল পড়ুয়া, তবে তারও বেশিদিন স্কুলে যাওয়া হবে না।


প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় মনসুর বলেন, বাজান বহু কষ্টে দিন আনি, দিন খাই! অসুস্থ শরীর তবু খারাপ কামের কাছে মাথা নত করি না! বয়স্ক ভাতা ও পাই নাই,দশ টাহা দামের চাউল ও পাই নাই! হজ্ঞলে শুধু বড় লোকগো লইয়া ব্যস্থ।আমার মত কত বুড়া অহনো চাঁনপুরে রিস্কা চালাইয়া বাইচ্চা আছে।

বঙ্গবন্ধুর কথা জিজ্ঞাস করলে বলেন, খুব ভাল মানুষ আছিলো। যুদ্ধের ইতিহাস সব মনে আছে।পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের কথা স্মরণ করিয়ে দেন মন্সুর।

শেখ হাসিনার কথা বলতেই বলে, বাজান, খুব ভালা মানুষ আমাগো হাসিনা। গরীবের কথা হুনে।আমাগো কথা হয়তো মার কাছে পৌঁছায় না।পৌঁছাইলে শেখের বেটি ঠিক আমাগো লইগা ভালা কিছু উপহার দিতো।

নিজে পড়া লেখা করেনি মনসুর।অর্থের অভাবে সন্তানদের ও পড়ালেখার খরচ বহন করতে পারেননি তিনি। অর্থকষ্টে দিনাপাত করে চলে তার কষ্টের সংসার।ভাড়া রিস্কা চালিয়ে যা কামান তা দিয়ে এই শেষ বয়সে চলে তার টানাটানির সংসার। এত কিছুর পরও মনসুর স্বপ্ন দেখেন ভাগ্যের চাকা ঘুরবে।প্রশাসনের সহযোগিতায় মনসুরের শেষ বয়সের নিদারুন কষ্টের অবসান হবে।

পুরো চাঁদপুর শহরের আনাচ-কানাচে অসংখ্য বৃদ্ধ রিস্কাচালক রয়েছে। যাদের বেশির ভাগই নির্মম বাস্তবতার স্বীকার।

'শরীর চলে না, তবু মন বলে পেট তো চালাতে হবে', আর তাইতো জীবনের সমস্ত বাঁধাকে উপড়ে ফেলে মনসুরদের মত দিনমজুর রিক্সাচালক অবিরাম কষ্ট করে দিনযাপন করছেন। আদৌ কি এদের ভাগ্য বদলের সম্ভাবনা দেখতে পান সুশীল সমাজ? প্রশ্নটা রেখে গেলাম!