একজন মুজিব একটি আদর্শের নাম

রিফাত কান্তি সেন
Published : 11 Jan 2017, 04:11 AM
Updated : 11 Jan 2017, 04:11 AM

সেদিন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী। বাংলাদেশ পাক-হানাদার মুক্ত হলেও বিজয়ের স্বাদ পায় নি কারণ প্রিয় নেতা যে তখনও দেশে ফিরেন নি। তার প্রতিক্ষায় পুরো বাঙালি জাতি। বিজয় উল্লাসও করেন নি। কখন ফিরবেন প্রিয় নেতা সেদিকে নজর গোটা জাতির।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাক-হানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারারুদ্ধ করে রাখে। বাঙ্গালী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সেদিন কারারুদ্ধ থেকেও মাথা নত করে নেন নি। তাকে গ্রেফতার করার আগেই সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান তিনি। ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করা হয়।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দান, বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ মুজিব জাতির উদ্যেশে ভাষণে বলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ৭'ই মার্চের ঐ ঐতিহাসিক ভাষণকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার ভিত্তি আরো মজবুত হতে থাকে।


যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন আপামর জনসাধারণ। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলাদেশ নামক একটি ভূখন্ডের জন্ম হয়। দুঃখের বিষয় তখনও প্রিয় নেতা শেখ মুজিব পাকিস্তান কারাগারে বন্দী।

১৯৭২ সালে লন্ডন, ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারী দেশের মাটিতে, স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রে পা রাখেন শেখ মুজিব। অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে গোটা জাতির মুখে হাসি ফোটে। উল্লাসে ফেটে পড়েন গোটা জাতি। বিমান থেকে নেমেই আবেগে আপ্লুত হয়ে যান বাঙালির একমাত্র অনুপ্রেরণার উৎস প্রিয় নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পাক-হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার কথা শুনে তিনি কান্না বিজড়িত হয়ে পরেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিতে গিয়ে আবেগে আল্পুত হয়ে পড়েন তিনি। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, 'রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালবাসার ঋণ শোধ করে যাব।'


তিনি কথা রেখেছেন, পাক-হানাদার বাহিনী তার ক্ষতি না করতে পারলেও কিছু কুলাঙ্গার/ বিপদগামী সেনা সদস্য ক্ষতি করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে সপরিবারে সেদিন হত্যা করা হয়েছিলো জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান কে। বিদেশে থাকায় সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

এর আগে রেসকোর্সের জনসভায় তিনি মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মত কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভাষণে কান্নাবিজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, "বিশ্বকবি তুমি বলেছিলে, সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তুমি দেখে যাও, তোমার আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। তোমার কথা মিথ্যে প্রমাণিত করে আজ ৭ কোটি বাঙালি যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। হে বিশ্বকবি আজ তুমি জীবিত থাকলে বাঙালির বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে নতুন কবিতা সৃস্টি করতে।"


তিনি ভাষণে বলেন ঐ বিরঙ্গনা নারীদের বাবার নামটির পাশে জেনো লিখে দিও আমার নামটি। ঠিকানা দিয়ে দিও ধানমন্ডি ৩২।

মহান নেতা শেখ মুজিব সত্যি এক অবস্মরনীয় নেতা। বাঙালীর জাতির অনুপ্রেরণা ছিলেন। হয়তো মুজিব না জন্মিলে এ দেশটি স্বাধীনতার স্বাদ পেতো না।


দেশকে ভালবাসতেন বলেই মুজিব ছিলেন এক আদর্শের নাম। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নি তিনি। দেশের ক্লান্তি লগ্নে বারবার হাল ধরা ব্যক্তি শেখ মুজিব। শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিলো সোনার বাংলা গড়ার। কিন্তু আজ বিজয়ের ৪৫ বছর পেরিয়ে আমরা কতটা সোনার বাংলা গড়তে পেরেছি!

কতটা মুজিব আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে পেরেছি সে প্রশ্নটা থেকেই যায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সোনার বাংলা গড়তে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। তার প্রতিটি কর্মই দেশের মানুষের কল্যাণে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন এক নয় তেমনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দলে কিছু অসৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কুলশিত করছে জাতির পিতার স্বপ্নকে।


এখনো পত্রিকার পাতায় দেখতে পাওয়া যায় ক্ষুদা ও দারিদ্রতায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে এক শ্রেণীর দরিদ্র মানুষ। যদিও সরকারের কর্মসূচিতে দারিদ্র বিমোচন খুবই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে কাজ করার লোকের বড়ই অভাব। কেনো না কয়েকদিন আগেও শেখের বেটি ১০ টাকায় চাল পৌঁছে দিয়েছে দরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে। অথচ কিছু অসৎ আর অনৈতিক রাজনীতিকদের দৌরাত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বিকশিত হতে পারছে না। তারা গরীবের টাকা আত্মসাতেও দ্বিধা করে না।

তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন থাকবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার মত মানুষ হয় না, আপনি দেশের মানুষের কথা ভাবেন, দেশের মানুষকে ভালবাসেন। মাননীয় মন্ত্রী যারা গরীবের হক মেরে খায় তাদের কঠিন বিচারের আওতায় আনুন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে অনুরোধ জানান তাদের। সাধারণের কাছে পৌঁছাতে, সাধারণের ভোগান্তির গল্প শুনে তা লাঘব করতে বলুন নেতাকর্মীদের।

একদিন বঙ্গবন্ধুর ডাকে গোটা জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। আজ সেই বঙ্গবন্ধুর স্বঁপ্নকে সত্যি করতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে নতুন প্রজন্মকে। সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিকল্প নেই।