ইতিহাস-ঐতিহ্য আর সম্ভাবনার শহর ব্র্যান্ডিং জেলা চাঁদপুর

রিফাত কান্তি সেন
Published : 11 Feb 2017, 04:55 AM
Updated : 11 Feb 2017, 04:55 AM

"রৌদ্রজ্জ্বল রূপালী ইলিশ নয়, নয় বেশী দূর, এখানে এলেই দেখা পাবে তার, এই সেই চাঁদপুর। ভাঙনের মুখে বিপন্ন তবু হৃদয়ে আশার সুর, এই সেই চাঁদপুর।"

বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেতের উক্তি।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের শহর চাঁদপুর। ১৭৭৯ খ্রিঃ ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজ জরিপকারী মেজর জেমস রেনেল তৎকালীন বাংলার যে মানচিত্র এঁকেছিলেন তাতে চাঁদপুর নামে এক ছোট্ট জনপদের নাম উল্লেখ ছিল।

চাঁদপুর শহরের নামকরণে রয়েছে নানা মতভেদ। বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায়ের দখলে ছিল। এ অঞ্চলে তিনি একটি শাসনকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন।

ইতিহাসবিদ চাঁদপুরের কৃতি সন্তান জে এম সেন গুপ্তের মতে, চাঁদরায়ের নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর। আবার কারো কারো মতে, কোরালিয়ার চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে চাঁদপুরের নামকরণ বলে ধারণা করা হয়।


১৮৭৮ সালে প্রথম চাঁদপুর 'মহকুমার' সৃষ্টি হয়। ১৮৯৬ সালের ১ অক্টোবর চাঁদপুর শহরকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৪ সালে চাঁদপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৬০ খ্রিঃ পর্যন্ত চাঁদপুর এক সময় ত্রিপুরা বিভাগের অধিনে ছিল। চাঁদপুর মহকুমায় ৫ টি থানা ছিল। চাঁদপুর, ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, কচুয়া ও মতলব।


বর্তমান চাঁদপুরঃ

রূপালী ইলিশের শহর চাঁদপুরের নতুন নাম 'দ্যা সিটি অব হিলসা'। অর্থাৎ ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর। চাঁদপুর দেশের প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে দেশে সুনাম অর্জন করেছে। ইলিশ রপ্তানি, ইলিশ বাণিজ্যের এক সম্ভাবনার নাম এই চাঁদপুর শহর। ব্র্যান্ডিং লোগো হিসেবে তাই ইলিশকে বেছে নেয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে বসুন্ধরা কনভেনশন হলে ইলিশ উৎসবের আয়োজন হয়ে গেছে। ঐ দিন ইলিশের নানা রেসিপি দর্শনার্থীদের জন্য ডিসপ্লে করা হয়।


পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়ার মিলন মেলায় চাঁদপুরের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যটক সম্ভাবনাময় স্থান বড় স্টেশন মোলহেড। প্রতিদিন শত-সহস্র ভ্রমণ প্রিয়সী মানুষ মোলহেড, ত্রি-মহনার অপরূপ সৌন্দর্যে নিজেদের মনকে রাঙিয়ে তোলেন।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসন চাঁদপুরকে পরিস্কার-পরিছন্নতার শহর হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তা বাস্তবায়নে উঠেপরে লেগেছেন। "ক্লিন চাঁদপুর, গ্রীন চাঁদপুর" ব্যানারে সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে নিয়ে শহর পরিছন্নতায় অপরিসীম ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।


চাঁদপুর জেলাপ্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল, এডিসি মোঃ আবদুল হাই ইলিশ রক্ষার ব্যাপারে খুবই আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ইলিশের ডিম পাড়ার মৌসুম এবং জাটকা ইলিশ নিধনে প্রশাসনের করা হুশিয়ারি রয়েছে।


জেলেরাও এ ব্যাপারে সচেতন ভূমিকা পালন করেছেন। গত কয়েক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলিশের মুখ এবার দেখেছে চাঁদপুরবাসী।

নাগরিক সেবা প্রদানে জেলা প্রশাসনে ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের যথাযথ সেবা প্রদানে অঙ্গিকারবদ্ধ ছিল জেলা প্রশাসন।


চাঁদপুরের ইব্রাহিমপুর ও লক্ষীপুর ইউপির সাতটি আশ্রয়ন প্রকল্প দেখভাল করেন জেলা প্রশাসন চাঁদপুর। আশ্রয়ন প্রকল্পে স্বাস্থ্য সেবার জন্য হেলথ ক্লিনিক, পড়ালেখার জন্য স্কুল, শস্য চাষ, গবাদি পশু পালন ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।


নদী মাতৃক দেশ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। যতগুলো বড় নদী দেশের আনাচ-কানাচে রয়েছে তাদের মধ্যে বড় দুটিই চাঁদপুরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। সেই অপরূপ পদ্মা, মেঘনার মহামিলন দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন চাঁদপুর জেলার সৌন্দর্য উপভোগে।

ডাকাতিয়া ও মেঘনায় অসংখ্য মানুষের জীবিকার উৎস রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম ক্ষেত্র চাঁদপুর। নদী বন্দর হওয়ায় বেশীরভাগ মালামাল নৌপথে আসে চাঁদপুরে। ব্যবসায়ের জন্য প্রসিদ্ধ স্থান চাঁদপুর পুরান বাজার।


বর্তমানে ইতিহাস, ঐতিহ্যের শহর চাঁদপুর দেশে এখন রোল মডেল। ব্র্যান্ডিং ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রয়োজন কিছু ভাল মানুষ আর তাদের কাজের।

সেই অভাবটা পূরণে প্রশাসনের সাথে সাথে সাধারণ মানুষেরও উচিত এগিয়ে এসে নিজের শহরকে পরিষ্কার-পরিছন্ন রেখে তা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা।

চাঁদপুরের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ:

সাধারণের প্রত্যাশা, প্রশাসন এভাবেই জনকল্যাণে নিবেদিত থেকে নাগরিক সমস্যা সমাধানে সোচ্চার হবেন।

লেখকঃ রিফাত কান্তি সেন
ক্রীড়া সম্পাদকঃ দৈনিক সুদিপ্ত চাঁদপুর।
ব্লগ.বিডিনিউজ২৪.কম।

Email: senrifat3@gmail.com