মফস্বলের লেখক, অবমূল্যায়ন যার নিত্যসঙ্গী

রিফাত কান্তি সেন
Published : 14 March 2017, 06:50 PM
Updated : 14 March 2017, 06:50 PM

হাতে কলম আর পেটে বিদ্যা থাকলে লেখা যায় না- মগজ ও প্রতিভা থাকা চাই। গুন্টার গ্রাস উক্তিটি করেছিলেন। মগজ ও প্রতিভা দুটি থাকা সত্তেও অনেক সময় প্রতিভা বিকশিত হয় না।
মফস্বল 'মানে যারা গ্রামে থেকে লেখা-লেখি করে তারা সর্বদা অবমূল্যয়িত হয়। ওদের লেখাকে অনেকেই প্রাধান্য দেন না। বিশেষ করে কোন লোক না থাকলে গোড়ায় আপনার লেখা ছাপা হয় না পত্রিকার পাতায়।

একজন লেখক ছোট হোক আর বড় হোক তার স্বার্থকতা হলো যখন তার লেখা ছাপা হয় কাগজের পাতায়। দুর্ভাগ্য যদি না ছাপা হয় তবে বেচারার মলিন, হাস্যউজ্জল মুখটা অমলিন অনেকটা পেঁচার মত হয়ে যায়।

আমি নিজেও অনেকবার এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছি। অনেকবার চোখে জল চলে এসেছে। অনেকবার ভেবেছি আজ থেকে আর লিখবো'ই না! আবার ভাবি ধর্ম যাজক এর সাথে রাগ করে ধর্ম পালন না করলে নিজেরই ক্ষতি!

আমাদের মানসিকতাটা অনেকটা ভিন্ন ধরনের। সেদিন একজন সরকারি কর্মকর্তাকে দেখলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিলেন তিনি তার সন্তানকে স্কুলে হাতেখড়ি দিতে চান। অনেক বলাবলির পর যাও ভর্তি করাতে প্রিন্সিপাল রাজি হলেন, ততক্ষনে জানিয়ে দিলেন প্রতিযোগিতার বাজারে সেই স্কুলে হাতেখড়ি না হওয়া শিশুকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে! অথচ শিশুতো এখনো স্কুলে নামই লিখালো না! স্কুলে সন্তানকে পাঠানো হয় শিক্ষার্জনের জন্য, পড়ালেখা শেখার জন্য। শেখানেই কিনা প্রথমে পরীক্ষার পালা। স্কুলে ভর্তি (হাতে খড়ি) হতে যদি পরীক্ষা দেয়া লাগে তবে আর স্কুলে ভর্তি করিয়ে লাভ কী? তার চেয়ে বরং ঘরে বসে বই পড়ে শিখাই উত্তম।

ঠিক তেমন একটি উদাহরণ লেখক যখন কোন লেখা মিডিয়ায় পাঠান' ঠিক তখন কম্পিউটারের সামনে বসা কর্মকর্তারা প্রথমেই বিচার করেন (ঠিক হুবহু কথা লিখলাম) দূর মিয়া এগুলা কি লেখা? আরে ভাই এগুলা ছাপা যাইবো না! এটা কি নিউজ হইলো নাকি? সাহিত্য আর নিউজ এক না! আগে বই পড়েন পড়ে লেইখেন! এগুলো আর্টিকেলের আওতায় না।

একবার একজন বললো, আমি যেন তাদের নিউজ পাঠাই। শুনে খুব খুশি হলাম। আমি কোন একটা বিষয়ের উপর আর্টিকেল লিখতে পছন্দ করি এটাই আমার যোগ্যতা। আমি পাঠালাম কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে মেইল আসলো ছাপা যাবে না!  আমি হতাশ নই! কেনো না, যার একটি দুয়ার বন্ধ হয়, তার হাজার দুয়ার খোলা হয়।

এখন কথা হলো এভাবে যদি লেখাকে অবমাননা করেন তবে একদিন মামা-খালুর লেখকরাই উঠে যাবে উপরে, আমাদের মত নিপীড়িত লেখকরা লেখে। তারপর সেটা না ছাপানোর বেদনায় জ্বলে, পুড়ে মরবে। হয়তো প্রতিভাও থেমে যাবে!

একজন লেখক যখন লেখেন, তখন তিনি অনেক কষ্ট করে লেখাটাকে ফুটিয়ে তোলেন। অনেক চিন্তা-চেতনা করে লেখাটাকে ফুটিয়ে তুলে সে লেখাটা যখন আপনার ঠোঁটের কিছু অশ্লীল আর বিদ্রুপ কথার কাছে পদদলিত হয়, তখন লেখকের জীবনের সবচেয়ে বড় পরাজয় ঘটে। আপনি যদি লেখাটাকে ভুল মনে করেন তবে সে লেখাটাকে কিভাবে শুধরে দেয়া যায় সেই কথাটা জানান লেখককে।

কোন গ্রন্থে যেন পড়েছিলাম, তুমি যা জানো তা অন্যের মাঝে বিলিয়ে দাও। নিজে জানার মাঝে যা আনন্দ, অন্যের মাঝে তা বিলিয়ে দেয়া আরো বেশি আনন্দের। আসলে প্রবাদে আছে 'শিক্ষিত' হওয়া আর 'শিক্ষক' হওয়া এক জিনিস নয়।

শিক্ষকের কাজ হলো নিজে শিখে তা শিক্ষার্থীদেরকে শিখানো। আপনারা যারা এসব গুরুবাক্য বলেন তারা তো শিক্ষকের আসনে। অনুরোধ থাকবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করুন। অনেক সময় গোবরেও পদ্ম ফোঁটে।

রিফাত কান্তি সেন
ক্রীড়া সম্পাদকঃ দৈনিক সুদিপ্ত চাঁদপুর।
কলাম লেখকঃএইবেলা ডট কম
নাগরিক সাংবাদ