নষ্ট সময় উপাখ্যান

রোদেলা নীলারোদেলা নীলা
Published : 27 August 2016, 06:52 PM
Updated : 27 August 2016, 06:52 PM

হয়তো মানুষ নই। গিরগিটি অথবা আরশোলাও বলা যেতে পারে। দুই হাত-দুই পা আর একটা পাঁচ ফিট শরীরকে কোন রকম এই শহরের কোন এক কোনায় এক প্রকার ঠিকানা লাগানোর জন্যে অবিরত যুদ্ধ করেই চলেছি।সেই এইচ এস সি থেকে শুরু।বাবা বললেন-"ডাক্তারি পড়ো, চেম্বার দিয়ে দু'পয়সা আয় করো তাতেই চলে যাবে রিটায়ার জীবন। "মা বললেন- "পড়া -শুনা ছাড়তো, বিয়ে থা করে সংসারি হউ। ধাড়ি মেয়ে ঢাকায় গিয়ে দাপাদাপি করতে হবে না।" কিন্তু, আমার দাপাদাপি কি আর থেমে ছিল। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কিছুই হলাম না। আসলে আমি যে কি হলাম তা নিজেও জানি না।

জানতে ইচ্ছে করতো মানুষের মনের ভেতরের অনেক কথা। তাই ডুব দিয়েছিলাম প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে-সাইকোলজি নিয়ে।সেই থেকে মানব মন আমার গবেষনায় ঢুকে গেল। যথারীতি বিসিএসের সময় হতেই গোল টেবিল করে পরীক্ষা দিতে গেলাম। কিন্তু কি আশ্চর্য! এটা পরীক্ষা নাকি রঙ তামাশা তাই বুঝিনি। সবাই গলাগলি করে লিখছে, একে ওকে কাগজ ছুঁড়ে মাড়ছে আর সুন্দরী পরদর্শক কিছুক্ষন পর পর উঁকি মেরে হুঁশিয়ার করে যাচ্ছেন। এই হুঁশিয়ার কি উৎসাহ নাকি তিরষ্কার -সে প্রশ্ন আজো প্রশ্নের দাবানলে পুড়ছে। পত্রিকায় পড়েছিলাম সে পরীক্ষা বাতিল বলে ঘোষনা দিয়েছেন সরকার। এরপর যে কতো বিসিএস এলো আর গেলো তার খবর আর নেইনি। নিয়েই বা কি হবে,তিন তিন বারে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ন মেধাবী ছাত্র মৌখিকে বাদ পড়ে গেল আর টিকে রইলো থার্ড ক্লাশ পাওয়া শেষ বেঞ্চের ছাত্র।। লটারির মতোন মনে হলো এই প্রসেস। কপাল জোরে অনেকে টিকেও গেল দেখলাম।

বন্ধুরা এর মধ্যে সাইকোলজিতে-বায়োলজিতে পড়তে পড়তে কেমন করে যেন ব্যাংকার হয়ে গেল। অনেক মেধাবিকে দেখলাম লেকচারার হবার জন্য সে কি তদবীর। আমার তো তদবীর করারো লোক নেই, বাবার মুখোমুখি হইনি আজ সাত বছর। বাড়িতে গেলেই মা বিয়ে কর বিয়ে কর স্লোগান দিচ্ছে। আর দেবেই বা না কেন, বয়স তো প্রায় ত্রিশ হবে হবে করছে।

ভাবছি, অনার্স করা এক দঙ্গল মেয়ে নিয়ে একটা বাড়ি ভাড়া করে সেখানেই কোচিং সেন্টার খুলে বসবো। ছোট ছোট বাচ্চাদের ইংরেজি পড়াতে পারলেই নাকি ব্যবসা রমরমা । কিন্তু,কপালে কি আর বাড়ি ভাড়া জোটে? যেখানেই যাই দরজা খোলার আগেই শুনি-ব্যচেলরদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া হবে না। ব্যচেলর শব্দটাই এখন নিজের কাছে বিরাট ভারী ঠেকছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে -যদু মধু দেখে খালি কবুল বলে ফেললেই হয়। কিন্তু একটা যদুর দেখাও পেলাম না। এখনকার যদুরা চায় -বৌ দু'পয়সা কামাক। বাচ্চার স্কুলের বেতনটা অন্তত শেয়ার করুক। ঘাড়ে বসিয়ে বৌ পালার থিউরি বহু আগেই দেশ থেকে গত হয়েছে।

শুনেছি ছোট খালার বাসায় ঠিকে ঝিটা চলে গেছে। ইংলিশ মিডিয়াম বাচ্চাদের নিয়ে খালা মনির হিমশিম অবস্থা। প্রায়ই ঝগড়া হচ্ছে খালুর সাথে,সময় মতো স্টার প্রাস দেখতে না পেরে ।রাতের রান্না, বাচ্চাদের পড়া-সব সামলে সিরিয়াল দেখার ফুরসত কি পাওয়া যায়? তাই ভাবছি,আমার মতোন একজন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট গৃহকর্মীর জন্য এমন সুযোগ্য পদ আর একটাও হতে পারে না।অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান একদম নিশ্চিত।কেবল মাঝ রাতে ঘরের দরজা খানা একটু আলগা রাখলেই হবে। সেই শৈশব থেকেই দেখছি -খালুর আবার আমার শরীর জড়িয়ে আদর করার অভ্যাস।

এখন আর নিজেকে মানুষ বা তেলাপোকা -কোনটাই মনে হচ্ছে না। কেবল বুঝতে পারছি আমি একটা মাকড়সা। নিজের তৈরী করা জালে এমনভাবে আটকে গেছি যেখান থেকে নিজেই বের হতে পারছি না।