সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীর চরিত্রহনন এবং ধর্ষকের পক্ষে সাফাই সমাজের পুরুষতান্ত্রিকতারই প্রতিচ্ছবি

রোদেলা নীলারোদেলা নীলা
Published : 15 May 2017, 09:01 PM
Updated : 15 May 2017, 09:01 PM

মিরপুরে দশ মাসের রুবেল যে মার্ডার কেসের আসামি হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিল-এমন কৌতুক কেবল এই দেশেই সম্ভব বলে আজ মনে হচ্ছে । এসআই চার্জশিটে ২২ দিনের  বাচ্চাকেও আসামি করতে ছাড় দেননি । কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেছে বলে শরীরের কোথাও ডলাডলি বা ঘষাঘষির দাগ নেই, এই চিন্তায় ওসি (বনানী থানা) কোন ভাবেই মেয়ে দুটোর মামলা নিতেই চাইলেন না। পাছে আবার মেয়ে দুটোর ভালো বিয়ে না হলে তিনিই তো স্বর্গে দায়ী থাকবেন! আহা!

অবশেষে বহু চাপ সৃষ্টির পর এক শবে বরাতে দুই সোনার ছেলেকে হাজির করা হলো। তবে কোমরে আর রশি পড়লো না। আফটার অল তারা অভিজাত ফ্যামিলির ধর্ষক। ইটভাটা বা ক্ষেত খামারের ধর্ষক না। বনানীর দ্যা রেইন্ট্রিতে সারা রাত যারা তাণ্ডব চালায় তারা সেই মাপের ধর্ষক। যদিও হোটেল কর্তৃপক্ষ কিছুই দেখেননি বা শোনেননি। কিন্তু পৃথিবী শুদ্ধ মানুষ সব জেনে গেল – ধর্ষিতার নাম প্রকাশ না হবার নিমিত্তে দফায় দফায় তাদের ইন্টারভিউ হচ্ছে, ব্লার করা মুখ স্পষ্ট দেখানো হচ্ছে, এতেও কি থেমে আছে মিডিয়া? মেয়েদের বাড়ীর সামনে ক্যামেরা তাক করে অবস্থান নিয়েছে যেন আরো কোন নতুন খবরে কমতি না হয়।

যতবার মেয়েরা এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে ততোবারই তাদের উপর হুলিয়া জাহির হয়  দায়িত্ববান (!) ফেইসবুক এক্টিভিস্ট দ্বারা। তারা ঘটনা প্রথমে শোনেন, পুলিশের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিয়ে ভিকটিমদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন, তারপর যদি দেখেন অপরাধী বা ভিকটিম কোন ভাবে এলিট শ্রেনীর তবেই তাদের মন্তব্য থাকে। গরীব শ্রেণি নিয়ে তাদের কোনই মাথাব্যাথা নেই।

ইদানিং তো ধর্ষণ করাকে কোন অপরাধ হিসেবেই দেখতে পাচ্ছেন না অনেক শিক্ষিত সমাজের লোকজন। তারা সরাসরি বলেই দিচ্ছেন-পতিতাবৃত্তি যদি পেশা হয় তাহলে ধর্ষণ করাটাকেও পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। সবুজ ইসমাইলের মন্তব্যে তাই উঠে এসেছে –

"পতিতাবৃত্তি আপনাদের কাছে পেশা। অবস্যই সেটা পেশা। যে চুরি করে চুরি করা তার পেশা হয়ে যায়। ডাকাতের ডাকাতি পেশা। তেমনি পতিতাদের পতিতাবৃত্তিই পেশা।
তাহলে ধর্ষকদেরকে কেন স্বীকৃতি দেওয়া হচ্চছেনা যে "ধর্ষণ" তাদের পেশা।"

শুধু তাই নয় এদের একজন ভিকটিমের বাবা-মায়ের শাস্তিও দাবি করেছেন। অরন্য কায়েস ফেনার মন্তব্য-

এলিট শ্রেণিতে ঘটে যাওয়া এই ধরণের অপরাধ নিয়ে নানান জনের নানাবিধ উপদেশ পাওয়া যায় সোস্যাল মিডিয়ায়:

অপরাধীদের প্রতি-

১। বাপের এতো কালো টাকা, তা উড়ানির আর জায়গা পাইলিনারে, নে এবার সামলা।

২। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া অব্দি কাউকেই কোন ভাবেই অপরাধী হিসাবে গণ্য করা যাবে না ।

৩। এদের পকেটে এতো টাকা কিভাবে এলো তা সরকারের খতিয়ে দেখা উচিৎ ।

ভিকটিম সম্পর্কে –

৪। বড়লোকের পোলা দেখলেই গাড়িতে উঠতে মন চায়।

৫। ভালো ফ্যামিলির মেয়েরা এতো রাতে পার্টিতে যায় না।

৬। টাইট কাপড় পড়ে বের হলেতো এমনই হয় ।

৭। ইসলাম মেনে না চললে আল্লাহ কাউকে ক্ষমা করবে না ।

৮। মনে হয় দেনা পাওনা নিয়া কোন ঝামেলা হয়েছে ।

৯। একজনের জায়গায় বেশী খদ্দের আরসিলো, তাই টাকা নিয়া বনিমনা হয় নাই।

১০। ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব এই জন্যেই নিষিদ্ধ ।

এভাবে ভিকটিম মেয়েদেরকে তারা ধীরে ধীরে প্রস্টিটিটিউট বানিয়ে ফেলে আর অভিজাত ধর্ষকদের কুকর্মের চাইতে তাদের সম্পদ নিয়েই বেশি চিন্তাগ্রস্থ দেখা যায় এই শ্রেনীর সার্টিফিকেট দাতাদের, এর মধ্যে নারীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। আমি প্রথমে ধর্ষণ সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত তথ্য দেব ,তারপর লিখব পতিতাবৃত্তি সম্পর্কে যা কীনা আসলেও একটি পেশা; কিন্তু মুসলিম দেশগুলোতে নিষিদ্ধ ।

মনোবিদরা বলেন সবক্ষেত্রেই ধর্ষকদের তিনটি ব্যাপার লক্ষণীয়ঃ ক্ষমতা (power), ক্রোধ (anger) এবং যৌনতা (sexuality)। এখানে আরেকটি ব্যাপার বলা দরকার, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ধর্ষণ শুধুমাত্র সম্পূর্ণ অপরিচিত কেউ করবে। এটা একেবারেই ভুল কথা। বেশীরভাগ ধর্ষণ-ই হয় অত্যন্ত পরিচিত কারো দ্বারাকথা। বেশীরভাগ ধর্ষণ-ই হয় অত্যন্ত পরিচিত কারো দ্বারা ।

ধর্ষণও (শিশু নির্যাতন থেকে শুরু করে নারী নির্যাতন) শুধুমাত্র নিজের কর্তৃত্ব (dominance)প্রতিষ্ঠার জন্যই করা হয়। এ ধরনের পুরুষেরা সাধারণত শিশুকালে ভয়াবহ যৌন, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। তাই তারা নিজেদেরকে নিয়ে অনেক হীনমন্যতায় ভোগে, তবে সেটা সম্পূর্ণ অবচেতনভাবে (subconsciously)। তাই এক মাত্র যে উপায়ে তারা নিজেদের এই হীনমন্যতা কাটিয়ে উঠতে পারে, তা হচ্ছে অন্য কোনও মানুষকে নির্যাতন (dominate) করা। তবে মনোবিদরা বারবার এই মতামত ব্যাক্ত করেন যে, অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটি একটি। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে সামাজিক (social), জেনেটিকাল (genetical), জৈবিক (biological) এমনকি পুষ্টিগত (nutritional) ইত্যাদি।

গবেষকরা মোটামুটি দুইটি বড় শ্রেণীতে ফেলেন ধর্ষণকে। একটি হচ্ছে Power Rape, আরেকটিকে বলা যায় Anger Rape। সবক্ষেত্রেই একটা ব্যাপার লক্ষণীয় , "the use of sex is to express issues of power or anger"।

[তথ্যসূত্র: Rape: Power, Anger and Sexuality" by A. Nicholas Groth PhD, Ann Wolbert Burgess R.N., D.N.S.C., Linda Lytle Holstrom, PhD. American Journal of Psychiatry 134:11, November 1977]

[তথ্যসূত্র: http://ajp.psychiatryonline.org/]

আর একদিকে পতিতাবৃত্তি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পেশা৷ কিন্তু কোনো যুগে, কোনো দেশেই মানুষ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে  স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি, আজও করে না৷ তবে বিশ্বের বহু দেশেই পতিতাবৃত্তি বৈধ এবং সেখানে যৌনকর্মীরা নিয়মিত আয়করও দেন৷ যারা সুযোগ পেলেই এই সব নারীদের কাছে গিয়ে উলঙ্গ হয়ে পড়েন তাদের কোন নামকরণ আজ অব্দি কোন অভিধানে পাওয়া যায়নি। বেশ্যা বলেই অনায়াসের এই নারীদের গালি দেওয়া হয়, একটা মেয়ের শরীরে হাত রাখার সাথে সাথে নষ্ট হয়ে যায় নারী দেহ। কিন্তু একটা  পুরুষের লিঙ্গ অনায়াসে শত শত নারীর জরায়ুতে অবাধে আসা যাওয়া করছে তবু  নষ্ট হয় না সেই পুরুষ দেহ। তাদের জন্য আলাদা কোন শব্দ ব্যবহৃত হয় না, বরং বাহবাই পায় তারা।

পতিতা হয়ে কোন মেয়েই জন্মায় না, পুরুষের সাহচর্যেই তাদের এই নামকরণ। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা, পক্ষপাতদুষ্ট সামাজিক নিয়ম, পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাব ইত্যাদি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েই একটা মেয়ে বেছে নিতে বাধ্য হয় এই ঘৃণিত পতিতার জীবন। একটা মেয়ের পতিতা হয়ে ওঠার পেছনের কাহিনী যাই হোক এটা ঠিক যে কোন মেয়েই স্বেচ্ছায় পতিতার জীবন বেছে নেয়না। কিন্তু প্রায় সব সময়ই যে বা যারা একটি মেয়েকে অন্ধকার জীবনে ঠেলে দিচ্ছে তারা রহস্যময় ভাবে থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। যারা অনায়াসে বলে দিল -বনানীর মেয়েগুলোর সাথে যুবরাজদের টাকা-পয়সা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে তাদের আমি দালাল বলি। তাদের স্ট্যাটাস পড়ে মনে হয়েছে পুরো ক্রিয়াকর্মের দালালি তারা নিজে উপস্থিত থেকেই করেছে।

মীর মোমেন হোসেন মিঠুর মন্তব্যে সুস্পষ্ট যে পতিতাবৃত্তি খুবই জঘন্যতম পেশা যাদের উনি লাথি দিয়ে সমাজ থেকে বের করে দেবার কথাও উল্লেখ করেছেন অত্যন্ত জোরালো ভাবেই-

"রাষ্ট্রের দায়িত্ব সকল নাগরিকের জন্য নিরাপত্তা , সুশাসন এবং সন্মানজনক জীবিকার ব্যবস্থা করা । যদি না করতে চায় তাহলে বাধ্য করা আর নাপারে করতে তানলে লাথি মেরে বের করে দেয়া।'

এই সব অসহায় নারীদের দায়িত্ব তিনি নিজে নেবেন কীনা সে ব্যাপারে কোন কথা অবশ্য তিনি বলেননি।

এবার দুই বছরে ঘটে যাওয়া নারীর উপর পুরুষের আগ্রাসনের কিছু চিত্র তুলে ধরবার চেষ্টা করছি যা প্রকৃত ঘটনার কিছু উদাহরণ মাত্র ।

ঘটনা ১:

১২ই মে ২০১৭ বিডিনিউজ২৪.কম-এ প্রকাশ জৈন্তাপুর থানার ওসি সফিউল কবির জানান, নিমার আহমদ পেশায় রাজমিস্ত্রি। একই এলাকার এক গৃহবধূর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কে গড়ে ওঠে। ওই নারীর সঙ্গে প্রায় ছয় মাসের বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও নিমারের মোবাইল ফোনে পাওয়া গেছে।

"ওই নারীর কিশোরী মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের আরও পাঁচটি ভিডিও চিত্রও পাওয়া গেছে মোবাইলে।"

ওসি বলেন, গত রোববার থেকে ওই ভিডিও চিত্রগুলো মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ার খবর পেয়ে নিমারকে শনাক্ত করে পুলিশ। বুধবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি আরও জানান, ঘটনার শিকার ওই নারী জানিয়েছেন নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন নিমার। পরে ওই ভিডিও চিত্র দেখিয়ে এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রায় ছয়

মাসে নিমার তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। পরে তার মেয়েকেও নিমার একইভাবে ধর্ষণ করে ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।

ঘটনা-২:

১লা সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিডিমর্নিং-এ প্রকাশ , টাঙ্গাইল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারনের অভিযোগে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের শিক্ষক আব্দুর রহিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা জানায়, ওই ছাত্রীর সঙ্গে আব্দুর রহিমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভনে তাকে ধর্ষণ করে ওই শিক্ষক। এসময় শিক্ষক ধর্ষণের চিত্র তার মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। পরে ছাত্রী বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে আব্দুর রহিম তালবাহানা করতে থাকে এবং হুমকি দেয় এ ঘটনা প্রকাশ করলে ধর্ষণের চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

ছাত্রীটি উপায়ন্তর না দেখে এর বিচার চেয়ে গত বুধবার পলিটেনিকের অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনা শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়লে তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার ও তাকে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হলরুমে ভাংচুর চালায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ছাত্রী বাদী হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় শিক্ষক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

ঘটনা-৩

৭ই এপ্রিল ২০১৭ বিডিমর্নিং থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী , আশুলিয়ার কুরগাঁও আবাসিক ডে-কেয়ার স্কুলের ভিতরে ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে নিজ কক্ষের আলমারীর ভেতরে হাত-পা ও মুখ বেধেঁ ওই ছাত্রীকে ধর্ষন করে মুঠোফোনে তার ভিডিও চিত্র ধারনের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

আশুলিয়ার মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে এক শিশুকে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেছে। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য  নেতাকর্মীরা ওই বাড়ির ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি।

সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষনের পর স্কুল ছাত্রীকে স্কুলে প্রধান শিক্ষক তার নিজ কক্ষের আলমারীর ভেতরে হাত-পা ও মুখ বেধে আটকে রাখে। দুপুরের দিকে মেয়ের মা স্কুলে এসে কক্ষের ভেতরে আলমারী থেকে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে। এদিকে বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বেশ কিছু নেতাকর্মী বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সাভার উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা, আমজাদুল হক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা জন্য পাঠানো নির্দেশ দেয়।

ধর্ষিতার বাবা লিটন জানান, মেয়ের ধর্ষনের কথা থানায় জানালে বা কাউকে বললে ধর্ষণের ভিডিও চিত্রটি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হুমকি দেয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন। এর পর এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পরলে পুলিশ তাকে কুরগাও থেকে গ্রেফতার করে।

ঘটনা-৪

গেল বছর পঞ্চগড় সদর উপজেলায় সাড়ে তিন বছরের এক মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ১৩ বছর বয়সী এক ছেলেশিশুকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ বুধবার দুপুরে শিশুটিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ অক্টোবর বিকেলে সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নে সাড়ে তিন বছরের ওই শিশুটিকে পাশের বাড়ির শিশু (১৩) চকলেট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টয়লেটে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় মেয়েটির চিৎকার শুনে তার মা এগিয়ে এলে ওই শিশু দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন শিশুটিকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে মেয়েটির বাবা ওই ছেলেশিশুকে আসামি করে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি মামলা করেন।পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমিনুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলা নথিভুক্ত করে রাতেই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাকে পঞ্চগড় কারাগারের শিশু ওয়ার্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।

ঘটনা-৫

একই অনলাইন পত্রিকায় এই বছরের জানুয়ারি ১৫ তারিখ বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় একটি আবাসিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী এক মারমা ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও চিত্র ধারণ করার অভিযোগে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।পুলিশ আজ রবিবার গ্রেফতার দুজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। বান্দরবান সদর হাসপাতালে ওই ছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

ওই ছাত্রী হাসপাতালে প্রতিবেদককে জানিয়েছে, পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মিজানুর রহমান (২৩) তাকে ডেকে নিয়ে যান। সঙ্গে সাইফুল ইসলাম ওরফে সেলিমও ছিলেন। ছাত্রীর অভিযোগ, আবাসিক বিদ্যালয় থেকে কিছু দূরে নিয়ে মিজানুর রহমান প্রথমে তাকে অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। সে প্রতিবাদ করলে মিজানুর তাকে ধর্ষণ করেন। এ ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন সাইফুল ইসলাম (২৪)।

গত বছরের রেকর্ড থেকে জানা যায় নারী ও শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ভয়াবহতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে যে পরিমাণ নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয় সেই পরিমাণ অভিযোগ হয় না। এছাড়া মন্ত্রিসভায় বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের খসড়া অনুমোদন সম্পর্কে বলা হয় , খসড়াটি পাস হয়ে আইনে পরিণত হলে 'বৈবাহিক ধর্ষণের' সুযোগ করে দেয়া হবে। যা দেশকে অনেক পিছিয়ে দেবে।তনু, মিতু, রিশা হত্যা, খাদিজা ও পূজার ওপর ঘটে যাওয়া বীভৎসতা হতবাক করেছে দেশবাসীকে। এছাড়া গত বছরের শেষের দিকে ২৪ নভেম্বর দেশের নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিন্দা ও প্রতিবাদের মুখেও বিশেষ ধারা যুক্ত রেখে মন্ত্রিসভায় 'বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৬'-এর খসড়া অনুমোদনের ঘটনা ছিল ২০১৬ সালের আলোচনায়।

এই রেকর্ড দেখার পর আমাদের অনলাইন বুদ্ধিজীবীরা নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারেন:

১। মেয়েদের টিউশনি পড়ানো বন্ধ করতে হবে।

২। স্কুল -কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার দরকার নেই।

৩। প্রেম করার প্রশ্নই ওঠে না।

৪। মোবাইল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হোক।

৫ ।দুধের শিশুদের(কন্যা) প্যাকেটে ভরে বড় করা হোক।

৬। কন্যা শিশুদের ১৫ বছর বয়সেই বিয়ে দেওয়া হোক।

জীবন একটি প্রবাহমান নদীর মতোন। জীবনের একটি বা দুটি ঘটনাই জীবন নয়। এটা যেমন একজন নারীকে বুঝতে হবে, তেমন ভাবে বুঝতে হবে সমাজের যারা প্রতিষ্ঠিত (বুদ্ধিমান) তাদেরকেও। একটা মেয়ের জীবনে এমন ঘটনা যখন ঘটে সে একটা মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যায়, সবার উচিৎ তাকে এই ঘটনা থকে বের করে নিয়ে আসা। কিন্তু আমাদের সমাজে ঘটছে উলটো। বারবার একই ঘটনা ভিকটিমকে দিয়ে বলানো হচ্ছে যেটা কেবল আদালত করতে পারেন তাও একবার। ঘটে যাওয়া ঘটনার নিখুঁত বিবরণ যা ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারের লেখায় পেলাম। এগুলো কেবল উস্কানিমূলক লাইক কুড়ানো ছাড়া আর কিছু না। কিন্তু কেন? আমাদের কি খুব দরকার এগুলো জানার বা লেখার? কার দোষ, কী দোষ তার জন্য প্রশাসন তো আছেই। যদিও তাদের চাপ না দিলে তাদের টনক নড়ে না, সেই চাপটা আমরা জায়গা মতোন দিতে চাই। মেয়েদের মনের ওপর বাড়তি চাপ দিয়ে এই সব লিখে রাখলে এই মেয়েরা যখন অন্য পরিবারে যাবে তখন তারা আবার এই পুরনো সমস্যার মধ্যেই জড়িয়ে পড়বে, ইথারের এই লেখাগুলোতো আর মুছে যাবে না। ওই যে ধর্ষণ শব্দটার মধ্যে যে চুলকানি মিশে আছে, সেই চুলকানি খাওবার জন্য মনের অজান্তেই কারো কারো হাত নিশপিশ করতে থাকে। তারা অপেক্ষা করে এরপর আর কি আছে দেখার জন্য।

আমরা ছেড়ে দেই এই সব মেয়েদের যেন তারা সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে, আর আমাদের যতোটুক মানায় ততোটুকুনই করি। না মানে হচ্ছে না, সেটা যদি আপনার গার্লফ্রেন্ড বলে তাও না, ঘরের বৌ না করলেও না আবার সেক্স ওয়ার্কাররা যদি অনীহা দেখায় সেটাও না। জোর করে অন্যের দেহ ভোগ করার মধ্যে আদৌ কোন পুরুষত্ব লুকিয়ে নেই ।

ধর্ষণের আলামত থাকা স্বত্ত্বেও বিচার না পেয়ে বাবা এবং মেয়ে যেভাবে ট্রেনে কাটা পড়লো তাতেও যদি বিচার ব্যবস্থার টনক না নড়ে, তবে কেন এই মিছেমিছি দৈনিক স্ট্যাটাস দেওয়া!

আমি তো সেই দিনের অপেক্ষায় আছি যে দিন বাড়ির বৌরা তাদের স্বামীর কাছে কন্যা সন্তানকে রেখে বাইরে বের হতেও ভয় পাবে। বলাতো যায় না নারী শিশুর ঘুমন্ত উলঙ্গ পা দেখে কোন নরখাদক জন্মদাতার জিহবা আবার লকলক করে ওঠে! জন্মদাতা দ্বারা নিজ কন্যা সন্তানের বলৎকার -এটা নতুন কোন ঘটনা নয় এই পৃথিবীতে।