চন্দ্র দর্শন

রুবু মুন্নাফ
Published : 7 August 2017, 07:23 PM
Updated : 7 August 2017, 07:23 PM

আজকে চন্দ্র দর্শন তেমন জমলো না। চাঁদের আলোর মাঝে যে ভাবালুতা থাকার কথা আজ তা অনুপস্থিত। আয়োজন করে ঘর বাহির হওয়া কি কাল হল! উজ্জ্বল চাঁদের জলসানি লেগে আজ অন্তর ধুয়ে দেবার কথা ছিল। চাঁদ আজ বড্ড হেয়ালি করল। মাতাল করা দূরে থাক আজ তো সে তার আবেদনই ফুটাতে ব্যর্থ হল। হায় চন্দ্র বুড়ি তুমি কি জিমিয়ে পড়লে। তোমায় নিয়ে কত কবিতা, গল্পগাঁথা লেখার ছিল। তুমি ও কথা রাখলে না! তোমার জন্য একজন সম্মানিতা #Chowdhury সাহেবানকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে হা করে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল। তোমার জন্য এক গাড়িওয়ালী যে কিনা এক্সকিউজ মি ভাইয়া বলে তার এক আত্মীয়ার ছবি দেখাইয়া তাহার সন্ধান করছিল। কাঁচেঘেরা গাড়িতে করে যিনি সেলুলার ফোনে একখানা দ্বৈত ছবি দেখাইয়া বলিতেছিল উনাকে আশেপাশে দেখা গেছে কিনা। উনাদের গার্হস্থ্য বিষয়াদি জানার আগ্রহ আমাদের ছিল না। কিন্তু গাড়ির দরোজা খোলার পর উদগ্র গাঁজার সুবাসে কিঞ্চিৎ আগ্রাহান্বিত বোধ করলাম। সম্ভবত পবিত্র জিনিস সেবন করা নিয়ে সামান্য গৃহস্থালি সমস্যা দেখা দিয়েছে যার কারনে সিনিয়র সিটিজেন ঘর বাহির হয়েছে। যাক এবার চন্দ্র দর্শনে আসা যাক। চাঁদ যে এভাবে আশাহত করবে তা বুঝলে শৈশবের চন্দ্র দর্শনটাই স্মৃতির পটে আঁকা থাকত।

চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে ছোটবেলায় একটা কথায় খুব করে মানতাম ; চন্দ্রগ্রহণের সময় খাওয়া দাওয়া বন্ধ। সরাসরি চাঁদের দিকে তাকানো নিষেধ। তো একবার হল কি খুব আয়োজন করে বাড়ির উঠানে পাটি বিছিয়ে শুয়ে পড়লাম। চারিদিকে সব সুমসাম। সবাই ঘুমিয়ে আছে। চাঁদের প্লাবনে চারদিক ভেসে যাচ্ছে। কেমন মাতাল মাতাল পরিবেশ। ঢুলুঢুলু চোখে আসমানে তাকিয়ে আছি। সব ফকফকা সাদা। গা ছম ছম করে উঠল। শুনেছি এমন রাতে পরীরা নাচ গান করে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে তাদের নৃত্য দেখার সৌভাগ্য কে ঠেকায়! মন অজানা আশঙ্কায় উত্তেজনায় টগবগ করছে। রাত যত নিশুতি হচ্ছে রক্তের মধ্যে উত্তেজনা তত পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের এক বন্ধু আছে যার পরীদের সাথে গায়ে হলুদ হয়েছিল বলে প্রচলিত আছে। তার গায়ের রং হচ্ছে যাকে বলে দুধে আলতা। কিন্তু একদিন হল কি তার গায়ের রং পুরোপুরি হলুদ হয়ে গেল। চারিদিকে রবরবা অবস্থা। ওজা কবিরাজে আর আমাদের মত এইসব অতিপ্রাকৃত বিষয়ে বিশ্বাসী লোকজনে বাড়ি গিজগিজ করছে। শেষে আসর বসিয়ে তিনজন কবিরাজ আর ওজা মিলে একটা হেস্থনেস্থ করে তবে না উদ্দার করল। আমি পাটিতে শুয়ে সেসব ভাবছি আর একটা কিছু ঘটবে সেই আশঙ্কায় অস্থির বোধ করছি। রাত্রি যখন প্রায় দ্বিপ্রহর তখন খট করে কি একটা আওয়াজ হল। আমি টগবগে ফুটছি। এবার একটা কিছু ঘটতে চলেছে। টানটান উত্তেজনায় আমি ঘামতে শুরু করলাম। এই বুঝি কিছু একটা হল। তাই হলো, সামান্য কাত হয়ে শোবার ফলে পিঠটা পশ্চিমে ঘোরানো ছিল। সাঁই করে একগুচ্ছ শলাকা দুপাদুপ পিঠের উপর পড়তে লাগল। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি থতমত খেলাম। ধাতস্থ হয়ে দিলাম দৌড়। পিঠে নারকেলের শলার বাড়ি খারাপ না, শুধু জ্বলুনিটা যদি না থাকত। জননী তাহার সন্তানকে বিছানায় না পাইয়া এত রাত্রে মেজাজ ধরে রাখতে পারে নাই। তাহারই বিষ্পোরণ হিরোশিমা আর নাগাসাকি। এই হল আমার চন্দ্র দর্শন। মাঝে মাঝে মনে হয় শৈশবটা আমাদের চিন্তার রসদ জমিয়ে রাখে। আস্তে ধীরে তার স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ধরে। হায়! শৈশব ফিরে আসবে কি তোমার স্মৃতির ঝাঁপি মেলে ধরে।

রুবু মুন্নাফ
০৮-০৮-২০১৭
দক্ষিণ বনশ্রী, ঢাকা।