ফেসবুক, তারানা হালিম ও নিরাপত্তা

রুদ্র আমিন
Published : 27 Nov 2015, 02:07 PM
Updated : 27 Nov 2015, 02:07 PM

হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারছি না। "যতদিন পর্যন্ত একজন মানুষও নিরাপদ না হয়েছেন ততদিন বন্ধ থাকবে" সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, লাইন, হোয়াটস্‌ আপ। খুব ভাল লাগলো! এবার ডানা মেলে উড়তে পারব, হাসতে পারবো, খেলতে পারবো। এমন নিরাপদ জীবন কি আমরা কেউ কামনা করি না? সকল কথার এক কথা স্যোসাল যোগাযোগের মাধ্যমগুলো চিরতরে বন্ধ ঘোষনা করলেই তাহলে সকল ল্যাঠা চুকে যেতো। তিনি নিশ্চয়তার কথা বললেন, যদি প্রশ্ন করি আপনি এতো প্রোটকলে আছেন, বুকে হাত রেখে বলুন তো আপনি কতটা নিশ্চয়তা নিয়ে ঘুমাতে যান?

জানি, বলতে পারবেন না। তাহলে কিভাবে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন ফেসবুক বন্ধ থাকলে বাংলার প্রতিটি মানুষ নিরাপদে থাকবে? যে দেশের আইন মুষ্টিমেয় কিছু আমলার দখলে সেখানে কিভাবে নাগরিক নিশ্চয়তার কথা আসে? মনে পড়ে গেল গ্রামের মানুষগুলোর মুখের ভাষা, প্রবাদ বচন "ঝি-কে মেরে বউকে সাবধান করা"। খুব সুন্দর কথামালা, আমরা অনেক সময় সুযোগে ব্যবহার করে থাকি, আজও আমি সেটাই করেছি। আসলে মিষ্টি আর সুন্দর মানুষগুলোর মুখের কথা মুখের ভাব ভঙ্গীতে সবাই মুগ্ধ হয়, ঠিক মধু ছিটিয়ে দেয়ার মত কাণ্ড।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম আপুর নাটক সেই ছোট বেলা থেকেই দেখছি। খুব প্রিয় একজন অভিনেত্রী ছিলেন আমার। যখন বুঝতে পারলাম তিনি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছেন রাজনীতি নামক নীতিহীন পথে তখন থেকে প্রিয় মানুষ একটু একটু করে আড়ালে লুকিয়ে যাচ্ছিলেন। যেদিন পুরোপুরি রাজনীতিতে পর্দাপন করছেন তখন থেকেই মনে হলো তিনিও হারিয়ে যাবে অন্যদের মতো আপনার থেকে।

যাক, যে কথা বলবো বলে কীবোর্ডে হাতের আঙ্গুল বসিয়েছি সে কথাই হোক। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকায় দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকরের পর নাশকতা হয়নি এমন কথাই বললেন আমাদের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী । একেবারে খারাপ বলেছেন সেটাও বলবো না। তবে এটাও বলতে বাধ্য হচ্ছি নিজেদের দূর্বলতাকে ঢেকে রাখার জন্যই এমন পথে হেঁটে চলা। কত সুন্দর কথা বলেছেন "যতদিন পর্যন্ত একজন মানুষও নিরাপদ না হয়েছেন ততদিন বন্ধ থাকবে।"

মানুষগুলো কি শুধুই অস্ত্রের আতংকে, পেট্রোল বোমার আতংকে ঘরে বসে থাকে? একথাও মেনে নিলাম, আর আপনার কথায় সুর মিলিয়ে বলতে চাই যদি ফেসবুক বন্ধ করে সাধারন জনতার নিরাপদ অবস্থান ফিরে আসে তাহলে চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হোক। কিন্তু একটি কথা না বললেই নয় আমাদের প্রশাসন সম্পর্কে বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, সেটার জন্য জনগণকে কিভাবে নিরাপত্তা দেবেন?

সত্যকে আড়ালে রেখে মিথ্যে মামলায় সাধারন জনতাকে প্রতিদিন ধর্ষণকারীর মতো ধর্ষণ করে চলেছে জনতাকে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতে আমাদের যতটা আয় হওয়ার কথা ছিলো সেটা আজ আর নেই, ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাত প্রায় শূন্যের ভাসা সেই শুকনো পাতায় এসে দাড়িয়েছে। কোন উপায় না পেয়েই আজ ফ্রী কল করার রাস্তা বন্ধ করতেই এই কার্যক্রম। আসলে নাশকতার জন্য নয়। এক ঠিলে দুই পাখি মারার একটা পাঁয়তারা মাত্র।

কর প্রদান করে দুই টাকার জনগণ আর ভোগ করে সহস্র টাকার আমলা। তাহলে কর কোথায় চেপে রইল? মোবাইল অপারেটিং কোম্পানি গুলো চুষে খাচ্ছে দেশের সহস্রকোটি টাকা। আর আমাদের দেশীয় মোবাইল অপারেটিং কোম্পানি দিনের পর দিন নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে দুই টাকার মানুষগুলোর কর আদায় করে। আসল কথা হলো দুর্বলের সাথে সবার গলা উচ্চস্বরে বের হয়। গ্রামীনফোন কি তার সকল কর পরিশোধ করেছে? ফেসবুকের কথা বললে মনে পড়ে যায় সেই বিশ্বজিতের কথা। যদি ফেসবুক সকল নাশকতার মাধ্যম হতো তাহলে বিশ্বজিৎ হত্যাকারীরা যেভাবে দিনের বেলায় অমানুষিক যন্ত্রণা দিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে সেটা কিভাবে সম্ভব? নাকি এটাও ফেসবুক বার্তায় একত্রিত হয়েছিল ঐ সকল নাশকতাকারী। প্রশাসন তো কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েই ছিলেন। কেন তারা সিনেমা দেখার মতো করে দেখলেন? এটাই কি প্রশাসনের দায়িত্ব? কিছু বললেই বলবেন আমি সন্ত্রাসী, আমাকে ক্রস ফায়ার করে কোন এক নর্দমায় ফেলে দেয়া হবে।

আজ ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাত ধবংসের মুখে কাল অন্য খাত হবে। সরকারী বর্ধিত বেতন দিতে যে হিমশীম খেতে হচ্ছে সেটার বিবেচনা করলেই বুঝা যায় আমাদের অর্থনীতির কতটা সুস্থ অবস্থানে আজ !!!

দূর্বল আর অযোগ্য ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়ে দেশ এবং দেশের জনগণকে তিলেতিলে হত্যা করা হচ্ছে। আজ পুলিশে ভর্তি হতে একজন সৈনিকের ৫-৮ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে তা না হলে চাকরি হবে না। আর একজন এ এস আই এর জন্য ১৫-২০ লক্ষ টাকা। আসলে টাকা কি গাছের পাতা হয়ে গেলো ? যে বা যারা এতো টাকা খরচ করে চাকরি নেবেন তারা কি মুখে আঙ্গুল দিয়ে বসে থাকবেন ??? মাননীয়া প্রতিমন্ত্রী আপনি কি এর কোন উত্তর দিতে পারবেন ?

ফেসবুকের মতো তো প্রশাসনিক আসক্তিতে সাধারন জনতা শূন্য ডিগ্রী তাপমাত্রায় বরফ হয়ে যাচ্ছে। বড় কথা হলো যতদিন উপর থেকে মানুষ গুলো শুদ্ধ না হবে ততদিন এদেশ এভাবেই হাটবে। অর্থ বিত্তের কাছে যেন আইন বাড়ির পোষা পশুর মতো আচরণে ব্যস্ত থাকে। আগে প্রশাসন ঠিক করুন দেখবেন সকলেই সোজা হয়ে যাবে।   নিরাপত্তার কথায় আসলে উপোরক্ত কথাগুলো কথা বিবেচনা করতে হবে। সমাধান করতে হলে আগে ঐ সকল দূর্নীতি – বাজদের ধরুন যারা উপরওয়ালাদের মদদে নাকে সরিষার তেল ঢেলে নিশ্চিত ঘুমে নিদ্রা যাপন করে। ছোটবেলায় দেখেছি পাখি ধরার জন্য সুতোর ফাঁদ পাতা, সেই ফাঁদের ভেতরে খাবার দেয়া থাকতো ফাঁদ হিসেবে। খাবার খেতে যখন পাখি ফাঁদের মাঝামাঝি তখনি সুতোয় টান দেয়া হতো, ফেসবুক কে সেই ফাঁদের খাবার হিসেবে ব্যবহার করুন অপরাধীদের সহজেই ধরতে পারবেন। আইন যদি স্বচ্ছ না হয় এমন হাজার ফাঁদ পেতেও কোন লাভ হবে না। আইনকে স্বচ্ছ করুন। দেশ বাঁচবে, দেশের মানুষ গুলো বেঁচে যাবে। আসলে ইচ্ছে থাকলে অনেক অসম্ভবকে সম্ভববে পরিণত করা যায়।